পাট আবাদ করে এবার বিপাকে পড়েছে দিনাজপুরের পাটচাষিরা। গত বছরের তুলনায় এবার পাটের আবাদ বাড়লেও খাল-বিলে তেমন পানি না থাকায় পাট ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে তারা। তাই বাধ্য হয়েই কেউ কেউ রিবন রেটিং পদ্ধতিতে কাঁচা পাট থেকেই আঁশ ছাড়িয়ে অল্প পানিতে ডুবিয়ে রাখছেন। এদিকে বাজারে দাম না থাকায় লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন পাটচাষিরা।
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার কবিরাজহাট এলাকার পাটচাষি রাতুল ইসলাম জানান, প্রায় এক বিঘা জমিতে পাট আবাদ করেছেন তিনি। কিন্তু পাট কাটার সময় পেরিয়ে যেতে শুরু করলেও খাল-বিলে পানি না থাকায় পাট জাগ দেওয়ার জায়গা নেই। ফলে পাট কাটতে পারছিলেন না তিনি।
এ অবস্থায় কৃষি বিভাগের পরামর্শে অবশেষে কাঁচা পাট কেটে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে মেশিন দিয়ে পাটের আঁশ ছাড়িয়ে, সেই আঁশ পানিতে ভিজিয়ে রেখেছেন। তিনি জানান, এ পদ্ধতি পাট চাষের জন্য কষ্টকর এবং পরিশ্রম বেশি। কিন্তু খাল-বিলে পানি না থাকায় বাধ্য হয়েই এ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়েছে তাকে।
বিরল উপজেলার নওপাড়া গ্রামের কৃষক দিলীপ কুমার রায় জানান, গত বছর অল্প জমিতে পাট আবাদ করলেও সে বছর বাজারে ভালো দাম থাকায় এবার পরিমাণ বাড়িয়ে দুই বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছেন। কিন্তু জমির সেই পাট নিয়ে এখন বিপাকে পড়েছেন তিনি। পাট জাগ দেওয়ার জন্য খাল-বিলে প্রয়োজনীয় পানি না থাকায় পরিপক্ব হলেও কাটতে পারছেন না। শুধু দিলীপ কুমার নয়, এ অবস্থা জেলার অন্য পাটচাষিরও।
চাষিরা জানান, গত বছর প্রতি মণ পাটের দাম ছিল ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। কিন্তু এবার বাজারে সেই পাট বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায়। এ অবস্থায় অন্যান্য ফসল আবাদ করে লাভের মুখ দেখলেও পাট আবাদ করে এবার লোকসান গুনতে হবে বলে শঙ্কায় রয়েছেন তারা।
দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক প্রদীপ কুমার গুহ জানান, জুলাই মাস পাট কাটার প্রকৃত সময়। কিন্তু গত বছর জুলাই মাসে দিনাজপুরে বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৫৫৬ মিলিমিটার। আর এ বছর জুলাই মাসে বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ২ হাজার ৫৫০ মিলিমিটার। এ কারণে খাল-বিলে পানি না থাকায় পাটচাষিরা পাট কাটতে সমস্যায় পড়েছেন। এ অবস্থায় রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাটের আঁশ ছাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
তিনি বলেন, গত বছর জেলায় ৩ হাজার ৯৩৬ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছিল। সে বছর ভালো দাম পাওয়ায় এবার পাটের আবাদ বাড়িয়ে দিয়েছে জেলার কৃষকরা। এ বছর দিনাজপুর জেলায় পাটের আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৪২৬ হেক্টর জমিতে। কিন্তু বাজারে এবার পাটের দাম তুলনামূলক কম থাকার কথা উল্লেখ করে প্রদীপ কুমার গুহ আশা প্রকাশ করে বলেন, লকডাউন শেষে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পাটচাষিরা ন্যায্যমূল্য পাবেন।
নদী বন্দর / জিকে