বলিউডের নায়িকাদের মধ্যে প্রথম সুপারস্টার বলা হয় তাকে। একাই পাল্লা দিতেন তাবড় নায়কদের জনপ্রিয়তার সঙ্গে। তার নামে সিনেমা হলে ভিড় লেগেছে বছরের পর বছর। হিন্দি, তামিলসহ নানা ভাষার সিনেমায় তিনি বাজিমাত করেছেন। বলছি শ্রীদেবীর কথা। সুন্দরী এবং পরিশ্রমী এই অভিনেত্রী ছিলেন কাজপাগল।
এক বছরে তার ১২টি সিনেমাও মুক্তি পেয়েছে। যা বলিউডের ইতিহাসে রেকর্ড হয়ে আছে। আজ ২৯ ডিসেম্বর অকাল প্রয়াত এই অভিনেত্রীকে নিয়ে একটি ফিচার করেছে আনন্দবাজার ডিজিটাল।
সেখানে বলা হয়েছে শ্রীদেবীকে সিনেমাহীন বছরও কাটাতে হয়েছে মন্দ সময়ে। এমনও হয়েছে এক বছরে কোনো ছবিতে অভিনয়ের সুযোগই আসেনি তার কাছে। সে বছর কোনো ছবিতেই সই করেননি ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’র নায়িকা। শ্রীদেবীর ক্যারিয়ারে সেই কালো বছরটি হল ১৯৯৫ সাল। শুধু পেশাদার জীবনই নয়। ব্যক্তিগত দিক দিয়েও এই বছরটি তার কাছে ছিল বিষাদময়।
সে বছরই ধরা পড়ে শ্রীদেবীর মা রাজেশ্বরী ক্যানসার আক্রান্ত। একাধিক চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার পরে শ্রীদেবী ঠিক করেন তিনি মাকে নিয়ে যাবেন নিউ ইয়র্ক। সেখানকার এক নামী হাসপাতালে রাজেশ্বরীকে ভর্তি করেন শ্রীদেবী। সেখানেই তার অস্ত্রোপচারের দিন ঠিক হয়।
অস্ত্রোপচারের দিন সকাল থেকেই শ্রীদেবী ছিলেন অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। চিকিৎসকরা যখন জানান, রাজেশ্বরীর অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। তখন তার দুশ্চিন্তা কিছুটা কমে। কিন্তু রাজেশ্বরীর জ্ঞান ফেরার পরে দেখা দেয় নতুন সমস্যা। তিনি ১০ বছরের পুরনো কথা বলতে থাকেন। কিন্তু ভুলে গিয়েছেন সাম্প্রতিক স্মৃতি।
ক্রমশ রাজেশ্বরীর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে থাকে। তিনি পরিচিতদের চিনতে পারছিলেন না। হারিয়ে ফেলেছিলেন চলার ক্ষমতাও।
এর পর প্রকাশ্যে আসে হাসপাতালের চরম গাফিলতির কথা। রাজেশ্বরীর মস্তিষ্কে যেদিন অস্ত্রোপচারের কথা ছিল, সেদিন আরও এক ভারতীয় রোগীর অস্ত্রোপচারের কথা ছিল ওই একই হাসপাতালে। অভিযোগ, দ্বিতীয় রোগীর এক্স রে রিপোর্ট অনুযায়ী রাজেশ্বরীর মস্তিষ্কের বাঁ দিকে অস্ত্রোপচার করা হয়। অথচ তার মস্তিষ্কের ডান দিকে অস্ত্রোপচারের কথা ছিল।
হাসপাতালের গাফিলতিতেই মা মৃত্যুর মুখে বলে হয়েছে দাবি করেন শ্রীদেবী। এই বিতর্কিত অধ্যায় খবরে এসেছিল নিউইয়র্কের সংবাদমাধ্যমে। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমেও সেই খবর প্রকাশিত হয়েছিল। এর পর নিউ ইয়র্কের অন্য একটি হাসপাতালে এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত চিকিৎসক নতুন করে অস্ত্রোপচার করেন রাজেশ্বরীর। এ বারেও অস্ত্রোপচার সফল হয়। তিনি কিছুটা সুস্থও হন আগের তুলনায়। তবে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি আর।
টানা ২ মাস নিউ ইয়র্কে থাকার পর মাকে নিয়ে দেশে ফেরেন শ্রীদেবী। জীবনের এই সঙ্কটের সময়ে তার পাশে ছিলেন বনি কাপুর। দেশে ফেরার কয়েক মাস পরে মৃত্যু হয় শ্রীদেবীর মায়ের। নিউ ইয়র্কের অভিযুক্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতি ও ভুল চিকিৎসার মামলা করেন শ্রীদেবী। সেই মামলার প্রেক্ষিতে ওই হাসপাতালের পক্ষ থেকে ৭ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছিল শ্রীদেবীকে।
২০১৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি দুবাইয়ের বাথটাবে পড়ে রহস্যময় মৃত্যু হয় শ্রীদেবীর। বলিউডে সমাপ্ত হয় এক অভিনেত্রীর রাজকীয় যুগের।
নদী বন্দর / জিকে