1. badsha.dru@gmail.com : admi2017 :
  2. nadibandar2020@gmail.com : Nadi Bandar : Nadi Bandar
ত্রিপুরায় হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি হত্যা - Nadibandar.com
সোমবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪২ অপরাহ্ন
নদী বন্দর ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০২২
  • ৯৮ বার পঠিত

এমনিতে সারা বছর দেখা না মিললেও শীতকালের এই সময়ে নিয়ম করে যুগের পর যুগ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে দেখা মেলে এদের। এরা পরিযায়ী পাখি হিসেবেই পরিচিত। প্রাথমিকভাবে এদের নাম ‘সোয়েমফেন’। তবে বেশিরভাগ মানুষ এদেরকে ‘বালি হাঁস’ বলেই চেনেন। কিন্তু এবার ত্রিপুরায় বেড়াতে আসা এসব পাখি ভয়াবহ নির্মমতার সাক্ষী হলো। লোভে পড়ে হাজার হাজার পাখিকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করা হয়েছে। 

বেশিরভাগ সময়ই যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডাতেই এগুলোর দেখা মেলে। তবে বছরের এই নির্দিষ্ট সময়ে পরিযায়ী পাখি হিসেবে ত্রিপুরায় এদের দেখা মেলে। সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে এই প্রজাতির পরিযায়ী পাখি খুব কমই আসে। ভারতের কেরালা রাজ্যেও শীতকালে এই পরিযায়ী পাখির দেখা পাওয়া যায়।

এই পাখির বৈজ্ঞানিক নাম ‘পরফিরিও পলিওসিফেলাস’। সাধারণত আমেরিকান পাখি হলেও সোয়েমফেনের এই প্রজাতিকে শীতকালে অবশ্য দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার নানা প্রান্তেই দেখতে পাওয়া যায়। শীতকালে পরিযায়ী পাখি হিসেবে এরা দেশের সীমানা পেরিয়ে পৃথিবীর নানা দেশে ঘুরে বেড়ায়। শীতের শেষে আবার যে যার ঘরে চলে যায়। আর এটাই যেন রীতি হয়ে উঠেছে এই পরিযায়ী পাখিদের।

আশ্চর্যজনক ঘটনা হচ্ছে প্রকৃতির সৌন্দর্য বহনকারীই বলুন আর ভারসাম্য রক্ষাকারীই বলুন, মানুষ অনেক সময় বিরুদ্ধাচারণ করতে শুরু করে। এতে আগামী দিনগুলোতে তাদের আর দেখা মিলবে কিনা এই রাজ্যে তা নিয়েও এখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। মূলত ফাঁদ পেতে একসঙ্গে যখন হাজারো প্রাণ কেড়ে নেওয়া হয় তখন এই প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক মনে করছে না পরিবেশবিদরা।

সম্প্রতি ধানের ক্ষেতে বিষ ঢেলে মেরে ফেলা হয়েছে এই প্রজাতির অন্তত হাজারখানেক পাখি। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বিষয়টি নজরে আসে। উদয়পুরের শুকসাগর জলাতে এই ‘সোয়েমফেন’ নামের পরিযায়ী পাখিদের একের পর এক পড়ে থাকতে দেখে অবাক হয়ে যান এলাকার সাধারণ মানুষ।

যতদূর জানা গেছে, ত্রিপুরা রাজ্যের উদয়পুর শহরেরই বিভিন্ন সরোবরে সোয়েমফেন পাখিদের দেখা যায় বছরের এই সময়ে। এর আগে এদের ওপর কারও নজর না পড়লেও এবছর খারাপ নজরে পড়েছে তারা। পুরো ক্ষেতে বিষ ঢেলে হত্যা করা হয় হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে যখন পরিযায়ী পাখির মৃতদেহগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়তে থাকে শুকসাগর এলাকায় ঠিক তখনই মাংসপ্রেমী মানুষজন অত্যধিক আনন্দে তা কুঁড়িয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। কি অদ্ভুত ও হৃদয় বিদারক ঘটনা! ছবি তুলে অনেকেই বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল করে দেন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবিদরা।

উদয়পুরের আকাশে স্বাধীনচেতা এই পরিযায়ী পাখিদের কি আর ঘুরে বেড়াতে দেখা যাবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা। হাজার হাজার পরিযায়ী পাখিদের মৃত্যুর খবর রাজ্যের পরিবেশ কিংবা বন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কানে পৌঁছালেও তেমন কোনো বিকার দেখা যায়নি।

যদিও পরবর্তী সময়ে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে গোমতী জেলা বন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মহেন্দ্র সিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাত করা হলে দেরি না করে তিনি নিজে ছুটে যান ঘটনাস্থলে। সরেজমিনে এই ঘটনা পরিদর্শন করে এরপরই শুরু করেন তদন্ত। কিন্তু শনিবার সকাল পর্যন্ত এই ঘটনার তদন্ত বিন্দুমাত্র এগোয়নি বলে জানা গেছে।

এলাকাবাসীদের কথা অনুযায়ী, শুকসাগরের এক প্রান্তে উদয়পুর রেল স্টেশন। এই রেল স্টেশনেরই একদিকে যেমন রয়েছে মাতাবাড়ি, তেমনি অন্যদিকে রয়েছে খিলপাড়া এলাকা। ধারণা করা হচ্ছে, ওই এলাকারই কোনো কু-চক্রের নজর পড়ে পরিযায়ী পাখিদের ওপর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসীদের অনেকেই জানিয়েছেন, অসৎ উদ্দেশ্যে গত মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে ধানের সঙ্গে বিষাক্ত ওষধ মিশিয়ে শুকসাগরের একটা বড় অংশের জমিতে ছিটানো হয়। আর সেই ফাঁদে পরেই একের পর এক প্রাণ হারায় পরিযায়ী পাখিরা।

ওষধ মেশানো ধানের জমি থেকে ধান খেয়ে বাঁচার তাগিদে উড়তে শুরু করে পাখিগুলো। কিন্তু বেশি দূর এগোতে না পেরে যে যার মতো করেই প্রায় কিলোমিটার খানেক এলাকাজুড়ে এদিক সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে। শনিবার সকালেও শুকসাগরের চারপাশে অসংখ্য পরিযায়ী পাখির মৃতদেহ ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়।

খবর ছড়িয়ে পড়ায় এদিন সকালে আর কাউকে মৃত এই পাখিগুলোকে কুড়িয়ে নিতে দেখা না গেলেও গত বৃহস্পতি এবং শুক্রবার এলাকাবাসীদের অনেকেই বস্তাভর্তি করে কুড়িয়ে নিয়ে যায়। এরপরই ঘরে ঘরেই খাবারের মেনুতে পরিণত হয়েছে এই পরিযায়ী পাখির মাংস।

নদী বন্দর / জিকে

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 Nadibandar.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com