তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ইসলামের জন্য, আলেম-ওলামাদের জন্য যা করেছে অতীতের কোনো সরকার তা করেনি।
তিনি বলেন, আলেম-ওলামাদের শত বছরের পুরনো দাবি ছিল বাংলাদেশে একটি স্বতন্ত্র ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। ব্রিটিশ ভেঙে পাকিস্তান হলো, এরপর বাংলাদেশ হলো, কিন্তু ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় আর প্রতিষ্ঠা হয়নি। জামায়াত ইসলামীকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি সরকার গঠন করল কিন্তু ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় হয়নি। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকার ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করলেন।
শনিবার দুপুরে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা অডিটোরিয়ামে বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষক ও আলেমদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি লোকমানুল হক তালুকদারের সভাপতিত্বে ও ধর্মবিষয়ক সম্পাদক জসিম উদ্দিন তালুকদারের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন রাঙ্গুনিয়ার বেতাগী দরবার-এ-আস্তানা শরিফের পীর গোলামুর রহমান আশরাফ শাহ, মেহেরিয়া মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা আনাস মাদানী, উপজেলা চেয়ারম্যান স্বজন কুমার তালুকদার, ইউএনও আতাউল গণি ওসমানি, পৌরসভার মেয়র শাহজাহান সিকদার, ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিছ আজগর, ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম তালুকদার।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতির দাবি বহু বছরের পুরনো। খালেদা জিয়া কিংবা বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখনো এই দাবি ছিল। উনি আলেম-ওলামাদের নিয়ে ভাত খাওয়াতেন, কিন্তু দাবি পূরণ করেননি। আমাদের রাঙ্গুনিয়ার কৃতি সন্তান মাওলানা আহমদ সফি সাহেব আলেম-ওলামাদের নিয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলেন যেন কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি দেন।
তিনি বলেন, অনেকে ভেবেছেন আমাদের নেত্রী আশ্বাস দিয়েছেন কিন্তু বাস্তবায়ন হবে না। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনা কওমি সনদের স্বীকৃতি দিয়েছেন। স্বীকৃতি দেওয়ার পর অনেকে বলেছেন স্বীকৃতি দিয়েছেন কিন্তু চাকরি হবে না, চাকরি পেলে বেতন পাবেন না। কিন্তু আমাদের নেত্রী শুধু কওমি সনদের স্বীকৃতি দেননি, তাদের চাকরিও দিয়েছেন, তারা এখন সরকারি বেতন পাচ্ছেন। এটি কল্পনার বাইরে ছিল।
আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, আজকে সারা দেশে এক লাখ মসজিদভিত্তিক মক্তব করা হয়েছে। রাঙ্গুনিয়াতেও দুই শতাধিক মসজিদভিত্তিক মক্তব প্রতিষ্ঠা হয়েছে। প্রতিটি মক্তবের আলেম ৫ হাজার ২০০ টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন। এটি আলেম সমাজ কখনো ভাবেননি। দারুল আরকাম এবতেদায়ি মাদ্রাসার প্রতিটিতে দু’জন করে শিক্ষক ১২ হাজার টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন। এখন হজে যাওয়ার সময় ঢাকায় ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করা হচ্ছে। সৌদি আরব গিয়ে আগের মতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা থাকতে হচ্ছে না।
আলেমদের উদ্দেশে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, শেখ হাসিনার সরকার প্রতিটি জেলা-উপজেলায় ৫৬০টি মডেল মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছে, যা কেউ কখনো ভাবেনি। ব্রিটিশ আমলে দেশ বিভক্ত হয়েছিল মুসলমানদের জন্য একটি দেশ, হিন্দুদের জন্য আরেকটি দেশ। সেই পাকিস্তান আমলেও জেলা-উপজেলায় সরকারিভাবে কোনো মসজিদ হয়নি।
জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকার ইসলামের জন্য এবং আলেম-ওলামাদের জন্য যে কাজগুলো করেছে, আপনারা আলেমরা অন্যদের কাছে তা দয়া করে বলবেন- আপনাদের কাছে এটুকুই ফরিয়াদ থাকল।
নিজের নির্বাচনী এলাকা রাঙ্গুনিয়ায় ইসলামের খেদমতে নানা কাজ করা হয়েছে উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আপনারা আমাকে এমপি নির্বাচিত করার পর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি ইসলাম এবং আলেম-ওলামাদের খেদমত করার জন্য। আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশন ও আমাদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান এনএনকে ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ২০টির বেশি নতুন মসজিদ ভবন তৈরি করা হয়েছে। এভাবে প্রতিটি মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা ও হিফজখানায় সরকারি অনুদানের পাশাপাশি ব্যক্তিগত সহায়তাও পৌঁছানো হয়েছে।
মতবিনিময় সভায় আলেম-ওলামাদের মধ্যে বক্তব্য দেন- রাঙ্গুনিয়া নুরুল উলুম কামিল মাদ্রাসার শায়খুল হাদিস মাওলানা নজমুল হক নঈমী, রাঙ্গুনিয়া সরকারি কলেজের অধ্যাপক ড. মাওলানা আবদুল মাবুদ, আলমশাহপাড়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, রাণীরহাট আল আমিন হামিদিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা নজরুল ইসলাম আলকাদেরী, খন্ডলিয়াপাড়া মাদরাসার পরিচালক মাওলানা মো. সুলতান, কোদালা মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা আবদুল কাদের, মাওলানা গোলাম কিবরিয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মাওলানা সৈয়দ আইয়ুব নুরী, মাওলানা গোলাম কিবরিয়া প্রমুখ।
নদী বন্দর/এসএফ