বর্ষার শুরুতে প্রায় প্রতিবছরই হিংস্র হয়ে ওঠে মেঘনা নদী। এবারও নদীর উত্তাল ঢেউ এবং তিন নদীর মিলনস্থল দিয়ে ফের ঘূর্ণিস্রোতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। শহরের মোলহেড ও পুরানবাজার ঠোডা এলাকা ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। ফলে ফের হুমকির মুখে পড়েছে চাঁদপুর শহর রক্ষাবাঁধ। বাঁধের ১০টি পয়েন্ট ঝুঁকিতে রয়েছে।
সেগুলো হচ্ছে-চাঁদপুর লঞ্চঘাট পশ্চিম অংশের টিলাবাড়ি, যমুনা রোড, পাইলট হাউজ, বড়স্টেশন মোলহেডের ঠোডা, পুরাতন লঞ্চঘাট সংলগ্ন খেয়া ও ট্রলারঘাট, পুরানবাজারের ব্যবসায়িক এলাকা ভূঁইয়ারঘাট, মদিনা মসজিদ ট্রলারঘাট, পশ্চিমবাজার, হরিসভা ঠোডা ও মুক্তিযোদ্ধা মরহুম নুরু বকাউলের বাড়িসহ রনাগোয়াল এলাকা। এছাড়া চাঁদপুরের নদী তীরবর্তী অনেক এলাকাই এখন ভাঙনের মুখে রয়েছে।
চাঁদপুর শহর সংরক্ষণ পুনর্বাসনে যে প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, সেটির অনুমোদনে ধীরগতি চাঁদপুরবাসীর উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে। সম্প্রতি বড় স্টেশন যমুনা রোড টিলাবাড়ি এলাকায় ভাঙন দেখা দেয় এবং এতে বাঁধের অসংখ্য ব্লক দেবে গিয়ে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সেই স্থানটি সংরক্ষণে পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি ভিত্তিতে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে আপাতত ভাঙন ঠেকিয়েছে।
অপরদিকে পুরানবাজার দোল মন্দির প্রাঙ্গণে শহর রক্ষাবাঁধের কিছু ব্লক দেবে গিয়ে সেখানে ফাটল দেখা দিয়েছে। বিষয়টি মন্দির কমিটির লোকজন এবং ব্যবসায়ী নেতারা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাকে জানালে জরুরি ভিত্তিতে সেখানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এর আগে বড়স্টেশন ঠোডায় সিসি ব্লক ফেলার কাজে নিয়োজিত একটি ট্রলার মুহূর্তের মধ্যে তলিয়ে যায়। মেঘনা নদীর গতিবিধি, পানি প্রবাহ স্রোতের তীব্রতা আবারও ভাঙন আলামত হিসাবে দেখছেন নদীর পারের ব্যবসায়ী ও মানুষজন।
পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া এই তিন নদীর মিলনস্থল হচ্ছে চাঁদপুর শহর। এর মধ্যে ডাকাতিয়া নদী শহরকে দুই ভাগে ভাগ করে রেখেছে। শহরের দুই অংশ আবার মেঘনা নদীবেষ্টিত। উত্তরাংশ নতুন বাজার এবং দক্ষিণাংশ পুরানবাজার নামে পরিচিত। সরেজমিন দেখা যায়, শহরের পশ্চিম অংশে মেঘনা ও পদ্মার মিলনস্থল বড় স্টেশন ও পুরানবাজার ঠোডা এলাকায় তীব্র স্রোতের কারণে ব্লক বাঁধ দেবে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
২০১৯ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ৪৫০ কোটি টাকার একটি স্থায়ী রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্প তৈরি করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। তারপর তিন বছরেও তা নিয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সম্প্রতি একটি সমীক্ষা করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কারিগরি কমিটি। তারা চাঁদপুর শহর সংরক্ষণ পুনর্বাসন প্রকল্প নামে তিন হাজার কোটি টাকার স্থায়ী একটি প্রকল্প প্রস্তাব করে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম রেফাত জামিল জানান, চাঁদপুর শহর রক্ষাবাঁধের পুরানবাজার ও নতুন বাজার এলাকাটি সংরক্ষণে যে প্রকল্পটি রয়েছে সেটি পুনর্বাসনের জন্য ইতোমধ্যে আমরা একটি প্রকল্প দিয়েছি। সেটির স্টাডি হয়েছে। স্টাডি সাপেক্ষে আমরা প্রকল্প দাখিল করেছি, সেটি এখন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে রয়েছে।
নদীর ভাঙন ও বন্যার পানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তিস্তা সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সিলেট অঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। পদ্মা-মেঘনা-যমুনাসহ ওইসব নদ-নদীর পানি মেঘনা নদীর চাঁদপুর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে মেঘনার ক্যাপাসিটি অনেক বেশি হওয়ায় সাধারণত এখানে বন্যার প্রকোপ এখনো কম। বন্যা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।
রেফাত জামিল বলেন, বর্ষা এবং বন্যাকালীন আমরা জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য নিয়মিত সার্ভে করে দুর্বল জায়গাগুলো চিহ্নিত করছি এবং চিহ্নিত জায়গাগুলোতে আমরা সিসি ব্লক ও জিও ব্যাগ ফেলছি। আমাদের কাছে বালুভর্তি ৩ হাজার জিও ব্যাগ মজুত রয়েছে। এছাড়া ১০ হাজার খালি জিও ব্যাগ এবং ১৩ হাজার সিসি ব্লক মজুত রেখেছি, যাতে যে কোনো দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায়।
নদী বন্দর/এসএফ