কুড়িগ্রামের বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেত বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পরিণত হয়েছে বিরান ভূমিতে। চলতি বন্যায় কুড়িগ্রাম জেলায় ১৫ হাজার ৮৫১ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল বিনষ্ট হওয়ায় ৮০ হাজার ৩৫ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে পাট, ধান ও শাকসবজিতে সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। টাকার অংকে কৃষিতে ১২৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি খরিপ মৌসুমে ৩৪ হাজার ৩১০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছিল। ভারী বৃষ্টি আর উজানের ঢলে সৃষ্ট বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় ১৫ হাজার ৮৫১ হেক্টর ফসলি জমি। ১০ থেকে ১৫ দিনব্যাপী স্থায়ী বন্যায় ৭ হাজার ৩৫১ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত এবং ৮ হাজার ৪২৭ হেক্টর জমির ফসল আংশিক ক্ষতি হয়েছে। এতে উৎপাদনে ক্ষতি হয়েছে মোট ৩৫ হাজার ৫৫ মেট্রিক টন ফসলের। যা মোট ফসলের ২৫ দশমিক ৫৭ ভাগ ক্ষতি হয়েছে।
তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পাট, আউশধান ও সবজি চাষে। মাঠে চাষ করা ১৬ হাজার ৫৭৭ হেক্টর পাটের মধ্যে ক্ষতি হয়েছে ৯ হাজার ৫২১ হেক্টর পাটের। মোট ৮ হাজার ৪৮০ হেক্টর জমিতে আবাদ করা আউশধানের মধ্যে ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৫৮০ হেক্টর আউশের।
এদিকে, ৪ হাজার ৩৪ হেক্টর জমিতে চাষ করা সবজির মধ্যে ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ১৬১ হেক্টর জমির সবজির। এরমধ্যে ১৫৪ হেক্টর জমির মরিচ ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে। কুড়িগ্রামের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলসহ ক্ষেতগুলোতে চাষ করা হয়েছে- আমন বীজতলা, পাট, আউশধান, তিল, শাকসবজি, কাউন, চিনা, কলা, ভুট্টা, চিনাবাদাম, মরিচ, আদা, হলুদ, পিয়াজ, আখ ও মুগডাল।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের পটলচাষী শামসুল আলম বলেন, নিজের ৫০ হাজার টাকা এবং এনজিও থেকে ৩০ হাজার টাকা লোনের ওপর নিয়ে ৮ বিঘা জমিতে পটল চাষ করছি। বানের পানিতে সব নষ্ট হয়া গেছে। বন্যার আগে সামান্য কিছু বিক্রি করছি, তাতে অর্ধেক টাকাও ওঠে নাই। লাভ তো দূরের কথা এবার বড় ক্ষতি হয়ে গেলো, সামনের দিনগুলা কীভাবে চলবো!
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চর ভগবতিপুরের কৃষক জয়নাল আবেদীন বলেন, এই বানটা হামার খুব ক্ষতি করি গেলো। ১৫ দিন ধরি ধান, পাট, কুমড়া ক্ষেত বানের পানির নিচে থাকি নষ্ট হয়া গেছে। চরে বিভিন্ন ফসল আবাদ করি সারাবছর সংসার চলে। এবার তো সব শ্যাষ।
কুড়িগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আব্দুর রশীদ বলেন, আমরা সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করে সরকারকে অবগত করেছি। যা আগামী দিনে একটি পুনর্বাসন ও প্রণোদনার আওতায় এই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ইতোমধ্যে আমরা ৭ হাজার কৃষককে প্রণোদনার আওতায় আনার একটি বরাদ্দ পেয়েছি। যা সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অন্তর্ভুক্ত করে তাদের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ