বহুগুণে গুণান্বিত লাতিন আমেরিকার ফসল চিয়া সিড। যেটিতে প্রচুর পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট থাকে। এটি দেখতে তিল বা সরিষার দানার মতো। এটি শরীরে কার্বো হাইটের অন্যতম উৎস। ফ্যাটি অ্যাসিড, মিনারেলস, ভিটামিন, ক্যালসিয়ামসহ বিভিন্ন ধরনের উপকারী উপাদান রয়েছে যা দেহের ক্ষয়রোধে, ওজন কমানোতে এবং দেহের ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে থাকে। কৃষিবীদদের মতে, দুধের চেয়ে পাঁচগুন বেশি আয়রন এবং সামুদ্রিক ছেমন মাছের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফসল এটি।
নওগাঁয় এইবারই প্রথম চাষ হচ্ছে ফসলটি। জেলার বদলগাছি উপজেলার মাথুরাপুর ইউনিয়নের পরশরামপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রউফ তার এক বিঘা জমিতে চাষ করছেন চিয়া সিড। ফসল উৎপাদনের ১০০ দিনের পরিকল্পনায় মাত্র ১৫-২০ হাজার টাকা খরচে ৭০-৮০ হাজার টাকা লাভে বিক্রির সম্ভাবনা দেখছেন তিনি।
লাতিন আমেরিকা, ইউরোপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন উপমহাদেশে চিয়া সিডের ব্যবহার চলে আসছে যুগ যুগ থেকে। এটি মূলত তেল হিসেবে রান্নার কাজে ,সালাদ হিসেবে খাবারে, বার্গারে মিশিয়ে এবং ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে থাকে।
বদলগাছি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবাব ফারহান জানান, চিয়া সিড মূলত সালভে হিমপানিকা নামক মিউনিক প্রজাতির একটি উদ্ভিদ। এটিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট পদার্থ থাকে। যা শরীরের বিভিন্ন রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। নওগাঁয় এইবারই প্রথম কৃষক আব্দুর রউফ তার এক বিঘা জমিতে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্পের সহযোগিতায় এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণে চিয়া সিড চাষ করছেন। যার উৎপাদন ব্যয় ২০ হাজার টাকা ধরা হয়েছে এবং এই থেকে তিনি প্রায় ২-৩ মণ ফসল পাবেন বলে আশা করছেন।
যার লাভ ধরা হয়েছে প্রায় ৭০-৮০ হাজার টাকা। চিয়া সিড থেকে তেল উৎপাদনের বিষয়ে তিনি জানান, চিয়া সিড থেকে তেল উৎপাদনের জন্য আলাদা এক্সট্রাক্ট্র মেশিন ব্যবহার করতে হয়। যেমন সূর্যমুখী ফুল থেকে যেভাবে তেল নির্গমন করা জন্য আলাদা মেশিন ব্যবহার করা হয় ঠিক এটি থেকেও আলাদা মেশিনের সাহায্যে তেল উৎপাদন সম্ভব। ১ কেজি চিয়া সিড থেকে চার শ’ থেকে সাড়ে ৪শ গ্রাম তেল উৎপাদন সম্ভব বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।
এদিকে কৃষক আব্দুর রউফ জানান, বরেন্দ্র অফিস থেকে তাকে তার জমিতে চাষ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে। এর পাশাপাশি উপজেলা কৃষি অফিস তাকে সার্বিক সহোযোগিতা করে। উচ্চ ফলনশীল এবং লাভজনক ফসল হওয়ায় ফসলটির দাম অনেক। প্রথমে দুই চাষ দিয়ে মই, নিরানী, বীজ বপন, সার ফসফেটসহ তার এক বিঘা জমিতে খরচ ২০ হাজার টাকা। এই খরচ করে ৮০ হাজার টাকা লাভের আশা করছেন নওগাঁর এই কৃষক।
কৃষক রউফের সফলতা দেখে স্থানীয় অনেক কৃষক এই ফসল উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, প্রথমে ছোট আকারে এটি জেলার বদলগাছি উপজেলায় পরিক্ষামূলক চাষ করা হচ্ছে চিয়াসিড। উৎপাদন ভালো এবং লাভজনক হওয়ায় এটি দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়াই তাদের উদ্দেশ্য।
চিয়া সিডের উপকারিতা নিয়ে পুষ্টিবিদ শায়লা সাবরিন বলেন, চিয়া সিড স্থুলতা বা ওজন কমাতে সহায়তা করে। সেই সঙ্গে এটি সুস্থ থাকতে সহায়তা করে। এটি কার্ডিয়াক রোগিদের জন্য খুব স্বাস্থ্যকর খাবার। চিয়া সিড রক্তের ভালো চর্বি বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে। এর পাশাপাশি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুব ভালো উপাদেয় খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
নদী বন্দর/এসএইচ