পূর্ণিমার জোয়ারে বাগেরহাটের ভৈরব, পানগুছি, পশুর, দড়াটানাসহ বিভিন্ন নদী ও খালের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বিভিন্ন এলাকার অন্তত সহস্রাধিক বাড়িঘরে পানি উঠেছে।
বুধবার (২ আগস্ট) দুপুরে জোয়ারে হঠাৎ করে নদী-খালের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
দুপুরে হাড়িখালি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভৈরব নদীর তীরে থাকা হাড়িখালি ও মাঝিডাঙ্গা এলাকার অন্তত ২০টি বসতঘর প্লাবিত হয়েছে। কারও কারও ঘরের মধ্যেও পানি উঠে গেছে। ছাগল ও গবাদি পশু ঘরের খাটের ওপর রেখেছেন তারা। পানি ওঠায় রান্নাবান্না বন্ধ রয়েছে কয়েকজনের।
বাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানিতে মাঝিডাঙ্গা সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকার কিছু অংশ প্লাবিত হয়েছে। শুধু হাড়িখালি-মাঝিডাঙ্গা নয়, বাগেরহাট সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর, কলাবাড়িয়া, পানিঘাটসহ বেশকিছু এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
অন্যদিকে, পানগুছি নদীর পানিতে মোরেলগঞ্জ উপজেলা সদরের প্রধান বাজার, পৌরসভার একাংশ, উপজেলা পরিষদ চত্বর প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া মোরেলগঞ্জ উপজেলার খাউলিয়া, বহরবুনিয়া, পঞ্চকরণ, তেলিগাতি, হোগলাবুনিয়া ইউনিয়নের বেশকিছু এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে অন্তত সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
হাড়িখালি এলাকার আফছার আলী হাওলাদার বলেন, বেরিবাঁধ নেই, ঘর-দুয়ার সব তলাইয়া গেছে। ঘরে যাওয়া লাগে কাছা দিয়া। রান্নাবান্না সব বন্ধ। আমাদের দিকে কেউ খেয়াল করে না।
একই এলাকার মনির শেখ বলেন, আষাঢ়-শ্রাবণ মাস আসলে খুবই কষ্টে থাকতে হয়। মাঝে মাঝেই পানি উঠে যায়। ভৈরবের পাশে যদি একটি বাঁধ দেওয়া থাকত, তাহলে আমরা কিছুটা শান্তিতে থাকতে পারতাম।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা সদরের বুলি কাজী বলেন, জোয়ারের পানিতে মোরেলগঞ্জ বাজার, উপজেলা চত্বরসহ পৌর শহরের বেশকিছু এলাকায় হঠাৎ পানি উঠে যায়। লোকজনের খুব ভোগান্তি হয়েছে। পানগুছি নদীর পাড়ে টেকসই শহর রক্ষা বাঁধ থাকলে আমাদের এই সমস্যায় পড়তে হতো না।
বহরবুনিয়া এলাকার রফিকুল ইসলাম বলেন, চারপাশে নদী-আর খালের মধ্যে আমাদের বহরবুনিয়া ইউনিয়ন। হঠাৎ করে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেশকিছু পরিবার জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। মাঝে মাঝে বৃষ্টি থাকায়, পানি সহজে নামছে না। খাউলিয়া, পঞ্চকরণ, তেলিগাতি ও হোগলাবুনিয়া তেলিগাতি ইউনিয়নের বেশকিছু পরিবার পানিবন্দি আছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মহিতুর রহমান পল্টন বলেন, আমার ইউনিয়নের মাঝিডাঙ্গা এলাকায় প্রায় শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। স্থায়ী সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
বহরবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তালুকদার মো. রিপন বলেন, জোয়ারের পানিতে ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় তিন শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আমরা পানিবন্দি পরিবারের খোঁজ-খবর নিচ্ছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে যদি পানি না নামে তাহলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাগেরহাট মোড়েলগঞ্জ উপজেলার তেলিগাতী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোরশেদা খানম বলেন, পূর্ণিমার জোয়ারের পানিতে আমার ইউনিয়নে প্রায় দেড় শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে পানি না নামলে এখানকার মানুষের অনেক সমস্যা হবে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনিও কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, দুপুরের জোয়ারে স্বাভাবিকের থেকে দেড় ফুটের বেশি পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের যে বাঁধ রয়েছে সেগুলো এখনো ঝুঁকিমুক্ত। তবে বাঁধ না থাকা কিছু এলাকায় পানি ওঠার খবর পেয়েছি।
বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, পানিতে যাতে কারও কোনো অসুবিধা না হয় সেজন্য খোজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
নদী বন্দর/এসএইচবি