জুলাই সনদের ভিত্তিতে এবং পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ অভিন্ন দাবিতে মাঠে নামছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দল দুটি একই দিনে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এই আন্দোলনে আরও কয়েকটি দল যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) নিজ নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন।
মগবাজারে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে এবং পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
ইসলামি ধারার শীর্ষ এই দুটি দলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বৈরী সম্পর্ক চলে এলেও কয়েক মাস ধরে দল দুটি কাছাকাছি আসতে শুরু করেছে। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে তারা একমত হয়ে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছে। আগামী নির্বাচনে আরও কয়েকটি দলসহ জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের মধ্যে নির্বাচনি সমঝোতা হতে পারে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনসহ পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এর অংশ হিসেবে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানী ঢাকায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মগবাজার আল-ফালাহ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন নায়েবে আমির সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের জন্য জামায়াত পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরছে। এর মধ্যে রয়েছে—
১. জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন,
২. জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতি চালু,
৩. সকল দলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি,
৪. পূর্ববর্তী সরকারের জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা,
৫. স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় সমাবেশের পর ১৯ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় শহরে এবং ২৬ সেপ্টেম্বর দেশের সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিল হবে।
এদিকে আইনি স্বীকৃতি দিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং এর ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। একই সঙ্গে দলটি সংসদ নির্বাচনে প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) পদ্ধতির বাস্তবায়ন, নির্বাচনে সমান সুযোগের নিশ্চয়তা এবং ফ্যাসিবাদী শক্তি ও তাদের সহযোগীদের বিচারের দাবি জানিয়েছে।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, গত বছরের জুলাই মাসে যে অভ্যুত্থান হয়েছিল, সেটি শুধু রাজনৈতিক ক্ষমতার পালাবদলের জন্য ছিল না; বরং স্বৈরতন্ত্র নির্মূল, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীন করা, ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি এবং জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য ছিল। কিন্তু দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও সেই লক্ষ্য পূরণ হয়নি। বরং বিভিন্ন পক্ষের রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে জুলাই সনদকে দুর্বল করে ফেলা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী আন্দোলন তাদের পরবর্তী কর্মসূচিও ঘোষণা করে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় বিক্ষোভ ও সমাবেশ, ১৯ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় শহরগুলোতে বিক্ষোভ এবং ২৬ সেপ্টেম্বর দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিল।
নদীবন্দর/জেএস