পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দোষীদের চূড়ান্ত বিচারের রায় এই বছরের মধ্যেই কার্যকর করার দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ১২তম বার্ষিকীতে বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে বনানী সেনা কবরস্থানে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণের পর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান (অবসরপ্রাপ্ত) মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের কাছে এই দাবি জানান।
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ১২টি বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডের চূড়ান্ত ফয়সালা করা সম্ভব হয়নি। বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা আমাদেরকে হতাশ করেছে, দেশবাসী মর্মাহত হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার অত্যন্ত স্লো এবং শ্লথ গতিতে চলছে।’
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘এই বছরের মধ্যে লিভ টু আপিল এবং আপিলের কার্যক্রম শুরু হবে বলে এমন কোনো আশা, এমন কোনো লক্ষণ আমরা দেখতে পারছি না। এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার জন্য বিচার বিভাগের প্রতি আমরা আবেদন জানাচ্ছি। আমরা আশা করি, এই বছরের মধ্যেই এই হত্যাকাণ্ডের চূড়ান্ত ফয়সালা করা হবে, চূড়ান্ত রায় দেয়া হবে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।’
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিপথগামী বিদ্রোহী বিডিআর জওয়ানরা পিলখানায় নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালায়। এ ঘটনায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ঢাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে জওয়ানদের বিদ্রোহ। রক্তাক্ত সেই বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর নাম বদলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) হয়।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তৎকালীন কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল লে. জেনারেল জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে সেনা কর্তৃপক্ষের একটা কোর্ট অব ইনকোয়ারির প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানান অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা হাফিজ।
তিনি বলেন, ‘এই ধরনের হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে এক গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে। তদন্তপূর্বক এর সুষ্ঠু বিচার কামনা করি। এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীকে দুর্বল করার জন্য। এর বেনিফিশিয়ারি কারা সেটিও দেশবাসী পরিষ্কার জানতে চায়।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘ইতোমধ্যে নিম্ন বিচারিক আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ নেতাকে খালাস দিয়ে দেয়া হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের সাথে যারা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত তাদেরকে সবাইকে বিচারের আওতায় আনা হয় নাই, কয়েকজনকে আনা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডে যারা পরিকল্পনাকারী দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারী তারা এখন পর্যন্ত পর্দার অন্তরালে রয়েছে। দেশবাসীর সামনে তাদের পরিচিতি স্পষ্ট নয়। আমরা সরকারকে অনুরোধ জানাবো হত্যাকাণ্ডের যারা পরিকল্পনাকারী দেশি-বিদেশি শক্তিসমূহ, ষড়যন্ত্রকারী তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনা হোক।’
হাফিজ বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডে নিহত ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে একজন সুবেদার মেজর যিনি অফিসারদেরকে রক্ষা করার জন্য … যাকে হত্যা করা হয়েছিল তার পরিবার এখন পর্যন্ত কোনো সুযোগ-সুবিধা পায়নি। আমি এ ব্যাপারে সরকারের আশু দৃষ্টি কামনা করছি। একই সঙ্গে যারা নিহত হয়েছিলেন সেই শহীদ পরিবারসমূহ কষ্টে, মনোবেদনার মধ্য দিয়ে দিনযাপন করছেন। তাদের এবং শহীদদের আত্মার শান্তির বিধান করার জন্য দ্রুত এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার আমরা আশা করি।’
হাফিজ আরও বলেন, ‘এদেশে আমরা সুশাসন কামনা করি। এদেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন অতি অল্প সময়ের মধ্যে সুপ্রতিষ্ঠিত হবে- এই কামনা করি।’ এ সময় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিও জানান তিনি।
বেলা পৌনে ১১টায় হাফিজ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে বিএনপির নেতারা স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। তারা নিহত সেনা কর্মকর্তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করেন।
এ সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান (অবসরপ্রাপ্ত) মেজর শাহজাহান ওমর, (অবসরপ্রাপ্ত) এয়ার ভাইস মার্শাল আলতাফ হোসেন চৌধুরী, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান (অবসরপ্রাপ্ত) লে. জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, (অবসরপ্রাপ্ত) মেজর জেনারেল ফজলে এলাহী আকবর, (অবসরপ্রাপ্ত) কর্নেল মো. ইসহাক, (অবসরপ্রাপ্ত) কর্নেল মনিষ দেওয়ান, (অবসরপ্রাপ্ত) কর্নেল কামরুজ্জামান, (অবসরপ্রাপ্ত) মেজর মো. হানিফ, (অবসরপ্রাপ্ত) মেজর সারোয়ার হোসেন, (অবসরপ্রাপ্ত) মেজর সাঈদুল ইসলাম, (অবসরপ্রাপ্ত) মেজর মো. হাসান, বিএনপি নেতা শামীমুর রহমান, শাহ খালেদ হাসান চৌধুরী, চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।
নদী বন্দর / পিকে