হংকংয়ের নির্বাচন সংক্রান্ত বিধি-বিধানে পরিবর্তন আনছে চীন। মঙ্গলবারই এটি চূড়ান্ত হওয়ার কথা। সমালোচকরা বলছেন এই আইনের মাধ্যমে হংকংয়ের ওপর চীনের নিয়ন্ত্রণ আরও দৃঢ় করবে। খবর বিবিসির।
এই আইন সংস্কারের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র ‘দেশপ্রেমিক’ ব্যক্তিরাই যেন নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। সমালোচকরা সতর্ক করে বলছেন, এই আইন বিরোধীদেরকে পার্লামেন্টের বাইরে রাখবে, যার অর্থ সেখানে গণতন্ত্রের অবসান ঘটবে।
চীনের এ পদক্ষেপের অর্থ হলো যে কোন সম্ভাব্য সংসদ সদস্যর বিষয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আগেই পরীক্ষা করে দেখা হবে যে তিনি চীনের প্রতি যথেষ্ট অনুগত কিনা।
এর আগে গত মার্চে চীনের ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের সময় বেইজিং হংকংয়ের নির্বাচনী পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা অনুমোদন করে।
এখন হংকংয়ের মিনি সংবিধানে সংযোজনের আগে কংগ্রেসের স্ট্যান্ডিং কমিটি প্রস্তাবিত আইনটির সবকিছু খতিয়ে দেখছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী হংকংয়ের পার্লামেন্টের আসন সংখ্যা ৭০ থেকে বেড়ে ৯০টি হবে।
কিন্তু এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এটা হবে এমন এক পদ্ধতি যেখানে পার্লামেন্টের সদস্য হতে যারা লড়বেন তাদের আগে ভেটিংয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে ফলে চীনের সমালোচক কোনো রাজনীতিককে আগেই বাদ দেয়া সম্ভব হবে।
এখন পার্লামেন্টের অর্ধেক সদস্যকে সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে হয় এবং অতীতে এমন কিছু আসনে গণতন্ত্রপন্থীরা নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর বাকী অর্ধেক আসনগুলোতে মূলত ব্যবসা, বাণিজ্য কিংবা ব্যাংকিং খাতের মতো খাতগুলো থেকে নেয়া হয় যেগুলো ঐতিহাসিকভাবেই বেইজিংপন্থী হিসেবে পরিচিত।
মূল আইনটিই পাল্টে ফেলা হচ্ছে কিনা তা নিয়ে এখন বিতর্ক চলছে। এটি ছিল মূলত ব্রিটেন ও চীনের মধ্যে একটি চুক্তি যা ১৯৯৭ সালে হংকংকে চীনের হাতে ফিরিয়ে দেয়ার সময় সম্পাদিত হয়েছিল।
হংকংয়ের বেইজিংপন্থী শিবির বলছে, সংবিধান পাল্টে ফেলা হচ্ছে না তবে গনতন্ত্রপন্থীরা বলছেন সেটিই করা হচ্ছে। সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রাজনীতির অধ্যাপক ইয়ান চং বলছেন, ‘কার্যত বেসিক ল’র পরিবর্তন এটা নয়’। তবে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের যে চেতনা বা সার্বজনীন ভোটাধিকারের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
২০২০ সালের নভেম্বরে বিরোধী অনেক আইন প্রণেতাকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছিল। এখন সমালোচকদের বাইরে রাখা গেলে এমন বিব্রতকর পরিস্থিতি হয়তো হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।
চলতি বছর দেশটিতে অনেকগুলো স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এটা পরিষ্কার নয় যে এসব নির্বাচনের ক্ষেত্রে সংশোধিত ব্যবস্থা কার্যকর হবে কিনা।
এর আগে হংকংকে নিয়ে ব্রিটেন ও চীনের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল তাতে চীনের চেয়ে হংকংয়ে বেশি স্বাধীনতা দেয়া হয়েছিল যা ২০৪৭ সাল পর্যন্ত ‘এক দেশ দুই পদ্ধতি’ হিসেবে বলবৎ থাকার কথা।
কিন্তু এরপর থেকেই বেইজিং তার প্রভাব বাড়ানোর কাজ শুরু করে। তবে চীনের বিরুদ্ধে ওই চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ দেশটি সবসময় অস্বীকার করে আসছে।
কয়েক বছর ধরে গণতন্ত্রপন্থীদের বিক্ষোভের পর ২০১৯ সালে ব্যাপক সহিংসতা তৈরি হয় এবং স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে বিরোধীরা ব্যাপক সাফল্য পায়।
২০২০ সালে বেইজিং বিতর্কিত ন্যাশনাল সিকিউরিটি ল’ পাস করে এবং এটিকে হংকংয়ের বেসিক ল’তে সংযুক্ত করে যা হংকংয়ের বিচার বিভাগীয় স্বায়ত্তশাসন হ্রাস করে এবং বিক্ষোভকারীদের শাস্তির পথ সহজ করে। এরপর থেকে ওই আইনের আওতায় অনেক সমালোচককে আটক করা হয়েছে যাদের অনেককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত দেয়া হয়েছে।
নদী বন্দর / পিকে