ভারতে গত কয়েক সপ্তাহে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বেগ উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিনে একের পর এক সংক্রমণের রেকর্ড ভাঙছে সেখানে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে নরেন্দ্র মোদির দেশ।
শুধু মহারাষ্ট্রেই সাপ্তাহিক সংক্রমণের হার প্রায় ২৩ শতাংশ। উদ্বেগজনক পরিস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে পাঞ্জাব, দিল্লি ও মধ্যপ্রদেশে। এসব রাজ্যে সংক্রমণ এভাবে বাড়তে থাকলে দেশের করোনা পরিস্থিতি অচিরেই হাতের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।
গত কয়েক সপ্তাহে পরিস্থিতি খারাপ থেকে আরও খারাপ হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। মাঝখানে কিছুদিন মনে করা হচ্ছিল যে, সংক্রমণের গতি হয়তো রোধ করা যাচ্ছে কিন্তু এর মধ্যেই প্রবল শক্তি নিয়ে সংক্রমণ আরও দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে।
তবে ভারতে করোনার যে নতুন ধরন পাওয়া গেছে তা নিয়ে বেশি আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই বলেই মনে করছেন স্বাস্থ্যকর্মকর্তারা।
করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ধাক্কার শিকার হয়েছে মূলত মহারাষ্ট্র, পাঞ্জাব, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, তামিলনাড়ু এবং দিল্লির মতো রাজ্যগুলো। স্বাস্থ্যকর্মকর্তাদের চিন্তায় রেখেছে সংক্রমণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকা মৃত্যুর সংখ্যাও।
তাই বুধবার বিভিন্ন রাজ্যে চিঠি পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এসব চিঠিতে মৃত্যুহার কমিয়ে আনার ওপর বিশেষ ভাবে জোর দেয়ার কথা বলা হয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে যে এলাকা ও হাসপাতালগুলো থেকে মৃত্যুর তথ্য বেশি আসছে, প্রশাসনকে সেগুলোকে প্রথমেই চিহ্নিত করতে হবে।
পরবর্তী ধাপে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে পর্যালোচনা করে দেখতে হবে কেন মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হচ্ছে। সংক্রমিত ব্যক্তিকে দেরিতে হাসপাতালে নিয়ে আসার কারণে মৃত্যু ঘটছে কি না, তা সবার আগে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। যদি তাই হয়, তা হলে ধরে নিতে হবে, নজরদারি চালানোর প্রশ্নে গাফিলতি রয়েছে রাজ্যের।
সংক্রমিত ব্যক্তিকে দেরিতে হাসপাতালে ভর্তির অন্য একটি কারণ হলো, চিকিৎসকদের গাফিলতি। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা যথাযথ প্রোটোকল মেনে চলছেন কিনা, সংক্রমিত ব্যক্তি হাসপাতালে ঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন কিনা, বিশেষ করে একজন করোনা রোগীর চিকিৎসার প্রশ্নে ন্যূনতম যে প্রোটোকলগুলো প্রয়োজন যেমন-অক্সিজেন, শয্যা, অক্সিজেনযুক্ত শয্যা ইত্যাদি রয়েছে কিনা, নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে কিনা, এ সবই পর্যালোচনার প্রয়োজন রয়েছে।
সংক্রমণের হার কমাতে বিশেষ ভাবে জোর দেওয়া হয়েছে টিকাকরণের ওপর। আগামী ১ এপ্রিল থেকে ৪৫ বছরের ঊর্ধ্বে সব ভারতীয় নাগরিক কোভিডের টিকা নিতে পারবেন। যে জেলাগুলোতে সংক্রমণের হার বেশি, সেখানে ৪৫ বছরের বেশি বয়সিদের ১০০ শতাংশ টিকাকরণ নিশ্চিত করতে বলেছে কেন্দ্র।
সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রুখতে বিশেষভাবে জোর দেওয়া হয়েছে কন্টেনমেন্ট জোন গঠনের ওপর। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রতিটি কন্টেনমেন্ট জোনকে পরিবর্তনশীল হতে হবে, প্রয়োজনে যাতে তার আকার বড় বা ছোট করা সম্ভব হয়।
প্রতিটি কন্টেনমেন্ট জোনে সংক্রমিত এলাকার যথাসম্ভব বেশি সংখ্যক বাড়িকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙতে অন্তত ১৪ দিন কন্টেনমেন্ট জোনে অপ্রয়োজনীয় গতিবিধি নিষিদ্ধ করতে হবে। কন্টেনমেন্ট জোন ও তার বাইরের এলাকায় রোজ কত নতুন সংক্রমণ হচ্ছে, সেই তথ্য সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে রাজ্যগুলোকে। যদি কন্টেনমেন্ট জোনের বাইরে সংক্রমণ বেশি থাকে, সেক্ষেত্রে তার পরিধি বড় করার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্র। জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যারা যুক্ত, তারা ছাড়া সংক্রমিত এলাকায় আর কারও ঢোকা বা বের হওয়া বন্ধ করায় নজর দিতেও বলা হয়েছে রাজ্যগুলোকে।
কোনও রাজ্যের কোনও বিশেষ প্রান্ত বা এলাকা থেকে সংক্রমিত রোগী বেশি আসছে কি না, তা খতিয়ে দেখার জন্য ম্যাপিং করতে বলা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, এর ফলে সংক্রমণের কারণ খুঁজতে সুবিধা হবে রাজ্যের।
করোনা পরীক্ষা, বিশেষ করে আরটি-পিসিআর পরীক্ষার অনুপাত বাড়ানো, মাস্ক পরাসহ কোভিড সতর্কতাবিধি মেনে চলার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। মাস্ক না পরলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে আর্থিক জরিমানার মতো কড়া পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্র।
অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যায় দেশের প্রথম দশ জেলার তালিকা আজ প্রকাশ করেছে কেন্দ্র। এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে পুণে। এরপর যথাক্রমে মুম্বাই, নাগপুর, ঠাণে, নাশিক, ঔরঙ্গবাদ, বেঙ্গালুরু, নান্দেড়, দিল্লি এবং আহমেদনগর। দশের মধ্যে আটটিই মহারাষ্ট্রের।
এখন পর্যন্ত বিশ্বে করোনা সংক্রমণের শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই তালিকায় ভারতের অবস্থান তৃতীয়। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ২১ লাখ ৪৮ হাজার ৪৮৭। এর মধ্যে মারা গেছে ১ লাখ ৬২ হাজার ৫০২ জন।
নদী বন্দর / পিকে