প্রায় এক সপ্তাহ ধরে সুয়েজ খাল আটকে রেখেছিল যে জাহাজটি, তার ক্যাপ্টেন-নাবিক সবাই ভারতীয় নাগরিক। দৈত্যাকার সেই জাহাজ ‘এভার গিভেন’কে প্রাণপণ চেষ্টার পর আবার ভাসানো গেছে ঠিকই, কিন্তু এভাবে বিশ্ব বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান পথটি আটকে যে ক্ষতি হয়েছে, তার জন্য কঠিন শাস্তির মুখে পড়তে পারেন ওই নাবিকরা।
বিবিসি বাংলার খবর অনুসারে, বিশালাকার কার্গো জাহাজটি জাপানের মালিকানাধীন, পানামার পতাকাবাহী এবং তাইওয়ানের ‘এভারগ্রিন’ কোম্পানির মাধ্যমে পরিচালিত হলেও এর সব নাবিক ও ক্যাপ্টেন ছিলেন ভারতের নাগরিক।
জাহাজটি কেন সুয়েজ খালে আটকে গিয়েছিল, তা নিয়ে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছে মিসর কর্তৃপক্ষ।
ভারতের জাহাজ চলাচল শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করছেন, ওই ঘটনার জেরে ভারতীয় নাবিকরা ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি হতে পারেন।
ইতোমধ্যে ওই ২৫ নাবিককে সুয়েজ কর্তৃপক্ষ ‘গৃহবন্দি’ করে রেখেছে বলে জানা যাচ্ছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের মিসর ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
ভারতে মার্চেন্ট নেভি অফিসারদের বৃহত্তম সংগঠন ‘দ্য মেরিটাইম ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া’র একটি সূত্র বিবিসি’কে বলেন, ‘সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষের নিজস্ব কিছু আইনকানুন রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইনের চেয়েও বেশি কড়া!’
‘যেমন, যখনই কোনও জাহাজ ওই খালে প্রবেশ করবে, তার আগে থেকেই কর্তৃপক্ষের নিজস্ব দুজন লোক জাহাজে উঠে দায়িত্ব নেবেন এবং পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবেন। কিন্তু তারপরও যদি জাহাজটি কোনও দুর্ঘটনায় পড়ে, সেক্ষেত্রে তার দায় বর্তাবে জাহাজের ক্যাপ্টেনের ওপরই।’
এই কারণেই সুয়েজে দুর্ঘটনার দায় শেষ পর্যন্ত ভারতীয় নাবিকদের ওপর পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অবশ্য জাহাজের ক্যাপ্টেন বা অন্য নাবিকদের পরিচয় এখনও প্রকাশ করেনি কোনও পক্ষ। তবে বিবিসি বাংলা জানতে পেরেছে, সুয়েজ খালের ওই দুর্ঘটনার পর ভারত সরকার তাদের সবার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে আশ্বস্ত করেছে যে, ওই নাবিকদের সুরক্ষার জন্য তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করবে।
গত ২৩ মার্চ সুয়েজ খাল ধরে এগোনোর সময় দুর্ঘটনার মুখে পড়ে এভার গিভেন। প্রবল ধূলিঝড় ও জোরালো বাতাসে জাহাজটির মুখ ঘুরে গিয়ে খালের মধ্যে আড়াআড়িভাবে আটকে যায় বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
এর পরিণতিতে প্রায় সাড়ে তিনশ’র বেশি মালবাহী জাহাজ খালের দু’দিকে আটকে পড়ে। এতে দৈনিক কয়েকশ’ কোটি ডলারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
নদী বন্দর / জিকে