কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার রমনা ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গন থেকে জনবসতি ও ফসলি জমি রক্ষায় দেওয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্লক প্রটেকশনের কাছেই অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে নদ থেকে বালু উত্তোলন করছে বালু ব্যবসায়ীরা। একাধিক ড্রেজার মেশিন বসিয়ে প্রতিনিয়ত বালু উত্তোলনের ফলে ঝুঁকিতে পড়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্লক প্রটেকশন প্রকল্পসহ স্থানীয়দের বসত বাড়ি। এ অবস্থায় বসত বাড়ি ও স্থাপনা রক্ষায় এসব অবৈধ ড্রেজারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পানিউন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার রমনা ইউনিয়নের জোড়গাছ পুরাতন বাজার থেকে রমনা সোনারী পাড়া পর্যন্ত এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গন হতে তীর রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্লক প্রটেকশন প্রকল্পের কাছে অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে ঝুঁকিতে পড়েছে ব্লক প্রটেকশন প্রকল্পসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের বসতভিটা।
উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগায় অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হলেও আইনগত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় মানুষজন। তারা বলেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রকাশ্যে এমন ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড চালালেও তারা কোনও প্রতিকার পাচ্ছে না। অথচ পানি উন্নয়ন বোর্ডেও প্রকল্প এখনও চলমান।
রমনা ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কোকিল চন্দ্র দাস জানান, ‘কয়েক বছর ধরে ভাঙ্গনে স্থানীয় মাঝি পাড়ার অনেক বাসিন্দা বসত ভিটাসহ সর্বস্ব হারিয়ে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বোল্ডার ফেলার কাজ (ব্লকপ্রটেকশনওয়ার্ক) চললেও তার কাছ থেকেই ড্রেজার বসিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। ড্রেজার মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় তারা প্রশাসনকে তোয়াক্কা করেন না। আমরাও নিষেধ করলে আমাদের কোনও কথা তারা শুনেন না। আমরা অসহায়।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের সত্যতা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন এসব অবৈধ ড্রেজার ও বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা চেয়েছি।
পানিউন্নয়ন বোর্ড বলছে, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার এখতিয়ার তাদের নেই। এ জন্য তারা অভিযোগ পাওয়ার পর পরই তা স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছেন। কিন্তু স্থানীয়দের আবেদন পাওয়ার এক সপ্তাহ পার হলেও অবৈধ ওই ড্রেজারের কার্যক্রম বন্ধের কোনও পদক্ষেপ নেয়নি কতৃপক্ষ।
চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পানিউন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে তারা বিষয়টি অবগত হয়েছেন। এ ব্যাপারে শিগগির আইন গত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পানিউন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে ব্লক প্রটেকশন ওয়ার্ক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। ড্রেজার ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী লোক জনের ছত্র ছায়ায় থাকায় তাদের বাঁধা দিয়েও লাভ হচ্ছেনা। পানি উন্নয়ন বোর্ড ইউএনও সহ জেলা প্রশাসনের কাছে সহায়তা চেয়েছে।
তিনি আরও বলেন এসব ড্রেজার ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন কারীদের সাথে স্থানীয় প্রভাবশালীদের লিংক থাকায় তাদের নিষেধ করেও কোন লাভ হচ্ছে না। কিন্তু আমরাতো মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে পারিনা। এজন্য ইউএনও মহোদয়ের সহায়তা চেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে আমি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে কথা বলে প্রয়োজনে জেলা থেকে কোনও টিম পাঠানোর অনুরোধ করবো।’
নদী বন্দর / জিকে