খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার শরাফপুর, সাহস, ভান্ডারপাড়া ইউনিয়নের ভিতর দিয়ে বয়ে যাওয়া মরা ভদ্রা এবং গুটুদিয়া ইউনিয়নের ভিতর দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট-বড় খালে সংশ্লিষ্ট এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি অসৎ উদ্দেশ্যে গেটের কপাট তুলে দিয়ে লবণ পানি ঢুকিয়ে শত শত কৃষকের হাজার হাজার বিঘা জমির সবজি ও ধানসহ অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতির মুখে ফেলে দিয়েছে।
লবণ পানির প্রভাবে ইতিমধ্যেই মরে ভেসে উঠতে শুরু করেছে মৎস্য অভয়াশ্রমে চাষকৃত বড় বড় সাইজের রুই কাতলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। ফলে কৃষকরা তাদের মাছ ও চাষাবাদের ফসল নিয়ে চরম দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন।
সরজমিনে গিয়ে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ডুমুরিয়ার শরাফপুর,সাহস,ভান্ডারপাড়া ইউনিয়নের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত মরা ভদ্রা নদী(বদ্ধ) এবং বটিয়াঘাটার জলমা ইউনিয় হতে ডুমুরিয়ার গুটুদিয়া ইউনিয়নের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত ছোট-বড় খাল সংলগ্ন সহস্রাধিক কৃষকের হাজার হাজার বিঘা জমিতে বোরো ধান, তিল, তরমুজ, ঢেরস, পুইশাক, ঝিঙ্গা, উঁচ্ছে করলা, বরবটিসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষাবাদ করেছেন কৃষকরা।
কিন্তু আকষ্মিক ভাবে ওই নদী-খালে লবণ পানি প্রবেশের কারণে চাষিদের ফসলের ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতির আশংকা দেখা দিয়েছে। চাষিদের জমিতে সেচের এক মাত্র এই নদীর মিষ্টি পানিই ভরসা। পুরা নদীজুড়ে লবন পানির প্রভাবে ছোট বড় মাছ মরে ভেসে উঠছে। শত শত দিনমজুর ও জেলেদের জীবন জীবিকার একমাত্র অবলম্বন এই মরা ভদ্রা নদী।
চাষীরা জানান, অনেকেই এই নদীতে জাল দড়ি বেয়ে অভাব গ্রস্থ পরিবারের সংসার চলে এই নদীতে মাছ ধরে। তাছাড়া এই নদীতে সরকারি ভাবে মাছের পোনা অবমুক্ত করে মৎস্য অভায়শ্রম ঘোষণা করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধির নির্দেশে শারাফপুরের মতলেব মোল্লা, কবির শেখ, ওলিদ ও আফি শেখ গত শুক্রবার রাত ৮ টা হতে পরদিন শনিবার পর্যন্ত শরাফপুর নদীর তেলিখালী গেটের কপাট তুলে লবন পানি ঢুকিয়েছে।
অপর দিকে কৈয়া বাজার পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির নেতৃবৃন্দ শুক্রবার রাতে বটিয়াঘাটার জয়পুরের রামদিয়া গেট দিয়ে লবন পানি প্রবেশ করিয়ে গুটুদিয়ার বাদুরগাছা, ধাইগা, কুলটী, গুটুদিয়া, পশ্চিম বিলপাবলা, লতা খামারবাটিসহ বিভিন্ন এলাকায় ছোট বড় খালের পাশ্ববর্তি কৃষকের শত শত বিঘা জমির ফসল নষ্ট করেছে।
সংশ্লিষ্ট এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ বর্ষা না হওয়ায় ক্ষেতে পানির অভাব মেটাতে নদী-খালের পানি সেচ দিয়ে তারা ফসলাদী উৎপাদন করছে। হঠাৎ করে নদী-খালে জোয়ারের লবন পানি প্রবেশ করানোর ফলে খাল সংলগ্ন ফসলের ক্ষেতে লবন পানি উঠে তরমুজ,সবজি,ধান,তিল ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। একইভাবে অসংখ্য কৃষক খালের মিষ্টি পানি লবন পানিতে নষ্ট হওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন।
এছাড়া এলাকার মৎস্যজীবিরা জানান, তারা এই নদীতেই জাল দড়ি বেয়ে মাছ ধরে সংসার চালায়। লবন পানি ঢুকানোর ফলে নদী-খালে থাকা রুই,কাতলা জাতীয় সাদা মাছ মরে ভেসে উঠছে। এখন তাদের জীবিকার পথ বন্দ হয়ে যাবে।
এ অবস্থায় স্থানীয় অসংখ্য কৃষকদের দাবি, সংশ্লিষ্ট এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি পানি ব্যবস্থাপনার নামে নদী-খালে নেট-পাটা দিয়ে অবৈধ ভাবে মাছ ধরে আসছে। সম্প্রতি কচুরিপানায় নদী-খাল ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে তাদের মাছ ধরায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।
তাই তারা লবন পানি তুলে খালের কচুরিপানা মারতে এবং বাগদা চিংড়ি চাষ নির্বিঘ্ন করতে এমন করছে। যারা নদী-খালে লবন পানি ঢুকিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় শরাফপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রবিউল ইসলাম রবি জানান, কিছু লোক গেইটের কপাট ঠিক করতে যায়। কিন্তু অসাবধানতা বসত জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে। বর্তমানে আবার শুকিয়ে গেছে।
নদী বন্দর / জিকে