করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত প্রায় ৩ সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটের লঞ্চ চলাচল। লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় লঞ্চের সাথে সম্পৃক্ত শ্রমিকদের আয়-রোজগারও বন্ধ হয়ে গেছে।
বিআইডব্লিউটিএর তথ্যমতে এ নৌরুটে ৮৬টি ছোট-বড় লঞ্চ রয়েছে। আর এ সকল লঞ্চের সাথে জীবিকা নির্বাহে জড়িয়ে আছে কমপক্ষে এক হাজার শ্রমিক। ঈদকে সামনে রেখে উপার্জন বন্ধ থাকায় এই শ্রমিকরা চরম বিপাকে পড়েছেন।
বাংলাবাজার লঞ্চ শ্রমিকদের সাথে আলাপ করলে তারা বলেন, গত ৫ এপ্রিল প্রথমে লকডাউন ঘোষণ করায় গণপরিবহনের সাথে নৌরুটের সকল লঞ্চ ও স্পিডবোট সরকারি নির্দেশে বন্ধ রাখা হয়। এদিকে লঞ্চ বন্ধ থাকলেও যাত্রীদের পারাপার বন্ধ হয়নি। লঞ্চ বন্ধের সুযোগে কিছু ট্রলারমালিক পদ্মায় যাত্রী পারাপার শুরু করে। তারা যাত্রী প্রতি এক-দেড়শ টাকা করে ভাড়া নিচ্ছে।
এদিকে কিছু কিছু স্পিডবোটও যাত্রী পারাপার চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের আয় রোজগার বরং বেড়েছে লকডাউনে। অথচ লঞ্চ বন্ধ থাকায় আমাদের মতো শ্রমিকদের রোজগার বন্ধ। লঞ্চ চললে আমাদের উপার্জন হত। লঞ্চও বন্ধ উপার্জনও বন্ধ। ঈদে অন্যান্য সময়ের চেয়ে বাড়তি খরচ। গত ২০ দিন ধরে বেকার হয়ে আছি আমরা।
বিআইডব্লিউটিএর বাংলাবাজার লঞ্চঘাট সূত্রে জানা গেছে, গণপরিবহন চালু হলেই লঞ্চ চালু হবে। আপাতত বন্ধ থাকছে লঞ্চ। ঈদকে সামনে রেখে বর্তমানে লঞ্চগুলো প্রস্তুতি নিচ্ছে। মেরামত-ত্রুটি সেরে নিচ্ছে অনেকেই। কারণ ঈদের কয়েকদিন আগে ও পরে যাত্রীদের বড় ধরনের চাপ মোকাবিলা করতে হবে। লঞ্চগুলো ঘাটসহ ঘাটসংলগ্ন নদীর বিভিন্ন স্থানে নোঙর করে রাখা আছে। সরকারি নির্দেশনা এলেই চলাচল শুরু হবে।
সরেজমিনে শিবচরের বাংলাবাজার লঞ্চ ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, যাত্রীশূন্য লঞ্চঘাট নীরব-নিস্তব্ধ। পল্টুনের অন্যপাশে নদীর মধ্যেও কিছু লঞ্চ নোঙর করে রাখা হয়েছে। অনেকে আবার ধোয়া-মোছার কাজও করছেন।
লঞ্চ কর্মচারী মো. রাকিব নামের এক যুবক বলেন, লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকলেও প্রতিদিন একবার ঘাটে আসি। মাঝে মধ্যে ধোয়ামোছার কাজও থাকে। টুকটাক মেরামতের কাজও অনেকে করতেছে। শুনতেছি সামনে সপ্তাহে লঞ্চ চালু হবে। চালু হইলেই বাঁচি। পকেটে পয়সা নাই।
অপর এক কর্মচারী রাসেল বলেন, লঞ্চে কাজ করি। লঞ্চ চালু থাকলে আমাদের ইনকাম চালু থাকে। এখন কোনো ইনকাম নাই। সারাবছর যেহেতু লঞ্চে কাজ করেছি তাই এখন অন্য কোথাও যাই নাই। অপেক্ষায় আছি লঞ্চ চালু হওয়ার।
তিনি আরও বলেন, ‘কষ্ট হইতাছে। আমরা গরিব মানুষ। আমাদের তো আর টাকা পয়সা বেশি জমানো থাকে না। এতদিন জমানো টাকাই খরচ করেছি। সংসারের খরচ তো আর কম না। ঈদে আরো বেশি খরচ। আসলে কষ্টে আছি।’
বিআইডব্লিউটিএর বাংলাবাজার লঞ্চঘাটের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আক্তার হোসেন বলেন, লঞ্চ বন্ধ থাকায় লঞ্চের সাথে সম্পৃক্ত কর্মচারী-শ্রমিকদের রোজগারও বন্ধ। অনেকে দিনমুজুরিও করছে বলে শুনেছি। লঞ্চের বেশিরভাগ কর্মচারী-শ্রমিকেরা পদ্মার চরাঞ্চল এলাকার। লঞ্চ বন্ধ থাকায় অনেকে বিপাকে পড়েছে। কেউ কেউ ভিন্ন কাজ করে উপার্জনের চেষ্টা করছে। লঞ্চ চালু হলে তাদের স্থায়ী উপার্জনের পথও সচল হবে।
নদী বন্দর / এমকে