দেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকিসহ মৌলভীবাজার জেলায় চলতি বছর বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে হাওরাঞ্চলের ৯৪ শতাংশ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে পুরো জেলার শতভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হবে। কৃষকরা এখন শেষ মুহূর্তের ধান ঘরে তোলা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এ বছর বোরো মৌসুমের আগে দেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকি, কাউয়াদিঘি, হাইল হাওরসহ এ জেলার অন্যান্য হাওরগুলোর জলাবদ্ধতা নিরসনে পানি উন্নয়ন বোর্ড সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করে। এতে এবারে এ জেলায় হাওরপাড়ের জমিতে স্থায়ী কোনো জলাবদ্ধতা দেখা দেয়নি। যার ফলে হাওরপাড়ের বোরো চাষিরা সময়মতো বোরো চাষের জমি তৈরি করার সুযোগ পান। এ ছাড়া কৃষি বিভাগ অধিক উৎপাদনের লক্ষ্যে সরকারের দেওয়া আর্থিক প্রণোদনা ও বিনামূল্যে সারবীজ কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করে থাকে। কৃষকরা এসব সুযোগ-সুবিধা পেয়ে শুরু থেকেই ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে বোরো চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এতে অন্যান্য বছরের তুলনায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক পরিমাণ বোরো চাষাবাদ হয়।
কৃষি বিভাগ বলছে, আবহাওয়া সম্পূর্ণরূপে কৃষকের অনুকূলে থাকায় এবারে মৌলভীবাজার জেলায় বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। হাওরের জমিতে প্রতি হেক্টরে ৩ দশমিক ৯৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে। হাওর ছাড়াও উঁচু জমিতে প্রতি হেক্টরে এ বছর উৎপাদন হয়েছে, ৩ দশমিক ৮৫ মেট্রিক টন বোরো, যা অন্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। এ ছাড়া এবারই প্রথম মৌলভীবাজার শ্রীমঙ্গল হাইল হাওরে সমলয় পদ্ধতিতে ৫০ একর জমিতে হাইব্রিড জাতের বোরো চাষ করা হয়। ইতোমধ্যে শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি বিভাগ টানা তিন দিনে এ পঞ্চাশ একরের বোরো ধান কম্বাইন্ড হারর্ভেস্টারের সাহায্যে কাটা সম্পন্ন করেছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা মোনালিসা সুইটি জানিয়েছেন, সমলয় পদ্ধতির এ হাইব্রিড বোরো ধান প্রতি হেক্টরে আট মেট্রিক টন করে উৎপাদিত হয়েছে। এদিকে বৈরী আবহাওয়ার আশঙ্কায় এ জেলার হাওরাঞ্চলের কৃষক ধান ঘরে উঠানো নিয়ে প্রথম দিকে সংশয়ে ছিলেন। পরবর্তীতে তাদের এ সংশয় কেটে বৈরী আবহাওয়ার আগেভাগেই বোরো ধান কাটা সম্পন্ন করেছেন।
মৌলভীবাজার কৃষি বিভাগের উপপরিচালক কাজী লুৎফুল বারী জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত হাওরাঞ্চলের ৯৪ শতাংশ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ৬ শতাংশ ধান আগামী সপ্তাহ ১০ দিনের মধ্যে কাটা সম্পন্ন হওয়ার। অপরদিকে ধানের ভালো ফলনে জেলার কৃষকরাও খুশি। তবে কোনো কোনো স্থানের একাধিক কৃষক অভিযোগ জানিয়েছেন, ধান পাকার আগে তাদের জমিতে ব্যাপকভাবে পোকার আক্রমণ ও ধানে চিটা দেখা দেয়। এতে অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কৃষি বিভাগ এ ক্ষতির কথা স্বীকার করে বলছে- ক্ষতির পরিমাণ সামান্য এবং বিচ্ছিন্ন কিছু জমিতে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোনো সমস্যা হবে না। এ বছর মৌলভীবাজারে ৫৬ হাজার ৩৪৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষাবাদ হলেও উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ১৭ হাজার মেট্রিক টন ধান।
নদী বন্দর / এমকে