হাওরের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া কিশোরগঞ্জের ইটনা-মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলাকে সংযুক্ত করে নির্মিত অলওয়েদার সড়কের দুই পাশে চোখে পড়বে রক্তলাল রঙের সমাহার। কালো পিচঢালা সড়কের সৌন্দর্য্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে লাল-হলুদের ভিন্ন এই গালিচা! দুই পাশে ফসলের সবুজ মাঠের বুক চিরে চলা উঁচু পথের দুই ধারে মরিচ আর ভুট্টার বাহারি রঙ মন কাড়ে পর্যটকদের।
হাওরবাসীর স্বপ্নের অলওয়েদার সড়কের দুই পাশে রোদে শুকাতে দেয়া লাল মরিচ আর হলুদ ভুট্টা যেন ফসলের কার্পেটে মোড়া জমিন। দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন লাল গালিচায় ঢেকে দেয়া হয়েছে অলওয়েদার সড়কের দুই পাশ।
উঁচু আর প্রশস্ত এ পাকা সড়কে ভারী যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আছে। অটোরিকশা, পিকআপসহ ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করে এ সড়কে। তাই চলতি বোরো মৌসুমে জমির ধান পরিবহনের পাশাপাশি সড়কের দুই পাশে রোদে শুকানো হচ্ছে মরিচ ও ভুট্টা। কোথাও কোথাও ধান মাড়াই-ঝাড়াই ও শুকানোর কাজও চলছে। বাড়ির পাশে মনোরম পরিবেশে জমির ফসল শুকাতে পেরে খুশি স্থানীয়রা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সড়কের বিভিন্ন অংশে বিশেষ কলে লোকালয়ের কাছাকাছি গ্রামের কৃষকরা রাস্তায় ধান মাড়াই করছেন। কৃষাণিরা ধান ঝাড়াই কিংবা শুকাচ্ছেন।
তবে সবকিছু মাড়িয়ে রক্তআভায় উদ্ভাসিত হয়ে পড়েছে মরিচ শুকানোর দৃশ্য। অষ্টগ্রাম উপজেলার মসজিদজাম এলাকার কৃষাণি মরিয়ম উদ্দাম বাতাস সামলে রাস্তার পাশে শুকাতে দেয়া মরিচ নেড়ে দিচ্ছেলেন।
তিনি জানান, বৈশাখের এ সময়টাতে ফসল শুকাতে আমাদের ভোগান্তির শিকার হতে হত। এখন নতুন রাস্তা হওয়ায় কোনো চিন্তা করতে হয় না।
একই এলাকার আবদুস ছোবহান বলেন, এ সড়ক আমাদের জন্য আশীর্বাদ। এখন আর বাড়ির পাশে খোলায় মরিচ-ভুট্টা শুকানো লাগে না। সড়কের দুই পাশে সকালে রোদে দিয়ে বিকেলেই ভালো করে শুকানোর পর বস্তায় ভরে মরিচ বাড়িতে নিতে পারি।
কিশোরগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. ছাইফুল আলম জানান, বোরো মৌসুমে ফসল বাড়িতে আসার পর শুকানো নিয়ে কৃষকদের নানা ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়। বিশেষ করে ঝড়-বৃষ্টির কাদা-জলে মাটিতে মরিচ-ভুট্টা শুকাতে তাদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। তাই নতুন সড়কটি তাদের জন্য আশির্বাদ। ভারী যানবাহন চলাচল না করায় বাড়ির পাশে রাস্তার ধারে তারা ফসল শুকিয়ে সহজেই বাড়িতে নিতে পারে।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এবার জেলায় সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা এবং সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। আর মরিচ ও ভুট্টার ফলনও ভালো হয়েছে।
গত বছরের ৮ অক্টোবর ৮৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ অলওয়েদার সড়ক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মিঠামইন উপজেলার জিরো পয়েন্ট থেকে ইটনা ও অষ্টগ্রামের দিকে ছুটে গেছে অলওয়েদার সড়ক। দুই পাশের দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার।
নদী বন্দর / জিকে