সাতক্ষীরার আম বাজারে ধস নেমেছে। মৌসুমের শুরুতে ঢাকাসহ বাইরের পাইকাররা বাজারে না আসায় আম পেড়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। সোমবার (১৭ মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বসে থাকার পরও ক্রেতার অভাবে তারা আম বিক্রি করতে পারেননি।
ইতোমধ্যে আম পাড়ার সরকারি নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে। অন্যদিকে গাছে থাকা প্রতিটি আমই ৫০ থেকে ৭৫ ভাগ পেকে গেছে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঝড়-বৃষ্টির হাত থেকে পরিপক্ক আম রক্ষা করতে জেলার আমচাষিরা ক্রেতা ও বাজারের অবস্থা না জেনেই যে যার মতো আম পাড়তে শুরু করেন। এ কারণে আকস্মিকভাবে একসঙ্গে বাজারে আমের আমদানি বেশি হয়েছে। ক্রেতাশূন্য বাজারে চাহিদার তুলনায় জোগান বেশি হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় পাইকাররা।
সাতক্ষীরা বড় বাজারের আড়তদার হাসান এন্টারপ্রাইজের মালিক আবুল হাসান জানান, অপরিপক্ক আম পাড়ার ব্যাপারে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় আমচাষিরা আম পাড়তে পারেননি। সম্প্রতি সরকারি বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ায় চাষিরা একযোগে আম পাড়া শুরু করেন। বর্তমানে লকডাউন চলছে। ফেরি ও দূরপাল্লার গাড়ি বন্ধ থাকায় ঢাকা ও ঢাকার বাইরের পাইকাররা বাজারে আসেনি। আম পচনশীল পণ্য হওয়ায় লাখ লাখ টাকার আম কিনে ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও। এসব কারণে গাছ থেকে আম পেড়ে মহাবিপদেই আছেন জেলার আমচাষিরা।
সদর উপজেলার মিয়া সাহেবেরডাঙ্গী গ্রামের সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আম পেকে পড়ে যাচ্ছে, গাছে আম রাখা যাচ্ছে না। বাধ্য হয়েই আম পেড়ে বাজারে নিয়ে আসতে হচ্ছে। আম নিয়ে এখন বিপদে আছি। আম বিক্রি না হলে পচে যাবে।’
মাধবকাটি গ্রামের আমচাষি আকতারুল ইসলাম বলেন, ‘আম নিয়ে সকাল থেকে বসে আছি। বাইরের ক্রেতা নেই। কেউ দাম বলছে না। দুই হাজার টাকার আম ৯০০ টাকায় বিক্রি করছেন ক্ষুদ্রচাষিদের অনেকেই। গাছ থেকে আম পেড়ে বিপদে আছি।’
লকডাউনের কারণে আম ঢাকা বা অন্য কোনো জেলায় পাঠানো যাচ্ছে না বলে জানালেন বড় বাজারের আড়তদার মিরাজ হোসেন। তিনি বলেন, ‘গত ২০ বছরের মধ্যে এবারই আমের দাম সর্বনিম্ন। আজ গোপালভোগ আম ৯শ টাকা ও হিমসাগর ১৪শ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। অনেকে আম বিক্রি করতে না পেরে আড়তে রেখে চলে গেছেন।’
ঢাকার পাইকার আম ব্যবসায়ী আনারুল ইসলাম বললেন, ‘লকডাউনে ঢাকার বাজারে আম পাঠানো যাচ্ছে না। দুই ট্রাক মাল (আম) পাঠিয়ে লোকসান হয়েছে। এখন ঝুঁকি নিয়ে আমের ব্যবসা করার আগ্রহ নেই। বোঝেন তো পচে গেলে আঁটিও কাজে লাগে না।’
সাতক্ষীরা বড় বাজার কাঁচামাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বাবু। তিনিও জানালেন সাতক্ষীরা বাজারে আমের জোগান বেশি। এজন্য দাম কম।
তিনি বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা থাকায় মে মাসের ১৭ তারিখের পর হিমসাগর আম বাজারজাত করার কথা। ঈদের ছুটির পর হঠাৎ করেই প্রথম দিনের বাজারে শত শত টন আম নিয়ে আসেন বাগান মালিকরা। লকডাউনের কারণে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় দেশের অন্য অঞ্চল থেকে ক্রেতা আসছে না। বাজারে চাহিদার তুলনায় জোগান বেশি হওয়ায় চাষিরা কাঙিক্ষত দাম পাননি। ফলে চাষি ও স্থানীয় আম ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা থাকায় এবার ১৭ মে থেকে হিমসাগর আম পাড়া শুরু হয়েছে। তীব্র গরমে গাছের আম দ্রুত পেকে যাওয়ায় চাষিরা একযোগে গাছ থেকে আম পেড়ে বিক্রি শুরু করেছেন। চলমান লকডাউনে বাজারে এবার ক্রেতা কম থাকায় চাষিরা আমের সঠিক দাম পাচ্ছেন না। তবে বাজার পরিস্থিত ভালো হলে চাষিরা আমের ন্যায্যমূল্য পাবেন।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আম গাছ থেকে পাড়ার পর তা দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায় না। ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যে তা বিক্রি করতে না পারলে কৃষকের ক্ষতি হয়। ঈদ ও করোনা মহামারির কারণে এবার বাজারে ক্রেতা কম বলে ব্যবসায়ীরা আমাদের জানিয়েছেন। কৃষি বিভাগ থেকে আমরা এ বিষয়ে তদারকি করছি। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে এবার ৫শ মেট্রিক টন আম বিদেশে রফতানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু আম বিদেশে গেছে। কিছু দিনের মধ্যে আরও আম রফতানি হবে।’
নদী বন্দর / এমকে