বর্ষায় বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। বড়দের পাশাপাশি এ মৌসুমে শিশুরা বিভিন্ন সংক্রমণের শিকার হয়ে থাকে। বর্ষায় ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
আবহাওয়ার আকস্মিক পরিবর্তনের ফলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা পায়। এর ফলে সহজেই বিভিন্ন সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে থাকে শিশুরা। বর্ষার স্যাঁতসেঁতে এবং আর্দ্রতায় ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ।
বর্ষা মৌসুমে যে সর্বাধিক সাধারণ সংক্রমণ দেখা যায়, তা হলো মূত্রনালীর সংক্রমণ (ইউটিআই)। বিশেষত শিশুদের মধ্যেই ইউটিআই বেশি দেখা দেয়। ইউটিআইতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ মূত্রনালীতে প্রবেশ করে এবং প্রস্রাব করার সময় জ্বালার সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে তা সংক্রমণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সাধারণত এক বছরের কম ছেলে শিশু এবং ৪ বছরের পর থেকে বয়সী মেয়ে শিশুদের ইউটিআই সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। শিশুর প্রস্রাবে ইনফেকশন হয় তখনই; যখন ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালীতে প্রবেশ করে এবং মূত্রনালীসহ এবং দেহে বিচরণ করে।
শিশুদের ক্ষেত্রে ইউটিআইয়ে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে মূত্রাশয় সংক্রমণ এবং কিডনি সংক্রমণ। যখন কোনো ইউটিআই বাচ্চার ব্লাডারকে প্রভাবিত করে; তখন তাকে ‘সিস্টাইটিস’ বলা হয়। আর যখন সংক্রমণ মূত্রাশয় থেকে কিডনিতে পৌঁছায়; তখন এটি ‘পাইলোনেফ্রাইটিস’ নামে পরিচিত।
উভয় সংক্রমণই অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিত্সা করা যেতে পারে। তবে কিডনিতে যদি গুরুতর সংক্রমণ হয় এবং চিকিত্সায় বিলম্ব ঘটে; সেক্ষেত্রে এটি গুরুতর স্বাস্থ্যগত জটিলতা তৈরি করতে পারে। ইউটিআই এর জটিলতার মধ্যে আছে কিডনি এবং উচ্চ রক্তচাপের ক্ষতি।
অল্প বয়সেই যদি এই সংক্রমণ শিশুর কিডনিকে প্রভাবিত করে; তাহলে তা মারাত্মক রূপ নিতে পারে। এজন্য তাত্ক্ষণিকভাবে ইউটিআই সনাক্ত এবং দ্রুত চিকিত্সা গ্রহণ করলে সংক্রমণ কিডনিতে পৌঁছানোর ঝুঁকি কমায়।
শিশুর ইউটিআই প্রতিরোধে অভিভাবকদের বেশ কিছু বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। অবশ্যই শিশুকে পর্যাপ্ত পানি করাতে হবে। সাধারণত বর্ষা মৌসুমে পিপাসার অভাবে শিশুরা পানি পান করতে অনীহা দেখায়। মূত্রনালীর সংক্রমণ রোধ করার কয়েকটি উপায় জেনে নিন-
>> আপনার শিশুকে হাইড্রেটেড রাখতে প্রতিদিন ৭-৮ গ্লাস পানি খাওয়াতে হবে। পাশপাশি ফলের রস, স্যুপের মতো তরল খাবারগুলো খাওয়াতে পারেন।
>> শিশুর প্রসাবের পর গোপনাঙ্গ পরিষ্কার রাখুন।
>> শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করুন। মলদ্বারে অনেক ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধতে পারে। তাই স্বাস্থ্যকর পটির অভ্যাস রাখুন।
>> শিশুর ব্যবহৃত বিছানার চাদর, বালিশ ও কাপর নিয়মিত ধুয়ে ইস্ত্রি করুন। এতে ফ্যাব্রিকে থাকা ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু মারা যায়।
>> ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি হ্রাস করতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি এবং জিঙ্ক আছে এমন খাবার খাওয়ান।
>> টাইট আন্ডারওয়্যার পরাবেন না শিশুকে।
ইউটিআইয়ের সর্বাধিক সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো প্রস্রাবের সময় তীব্র জ্বালা-পোড়া অনুভব করা। এ ছাড়াও প্রস্রাব ঘন এবং তীব্র গন্ধ, গাঢ় বর্ণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে। প্রস্রাবের সমস্যার পাশাপাশি ইউটিআই হলে জ্বর হয়ে থাকে। আরও যেসব লক্ষন দেখা দেয়-
>> প্রস্রাব করার সময় তীব্র ব্যথা এবং জ্বলন্ত সংবেদন।
>> ১০১ এর ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে জ্বর থাকা
>> প্রস্রাবের রঙ এবং গন্ধে পরিবর্তন
>> এ ছাড়াও মূত্রে রক্তের চিহ্ন থাকা।
মূত্রনালীর সংক্রমওেণর ভীতিকর দিক হলো এটি যদি দীর্ঘকাল ধরে চলতে থাকলে; শিশুর কিডনিতে প্রভাব ফেলতে পারে। যা বড় ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার দিকে নিয়ে যায়।
সুতরাং, বাচ্চাদের ইউটিআই নিরাময়ের জন্য উল্লেখিত ঘরোয়া প্রতিকারগুলো অনুসরণ করুন। ইউটিআই সনাক্তের পর তা সহজেই নিরাময় সম্ভব। তাই অভিভাবকের উচিত আতঙ্কিত না হয়ে বরং সচেতন থাকা।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
নদী বন্দর / সিএফ