গত বছর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মধুমতি নদীর কয়েকটি পয়েন্টে জিও ব্যাগ ফেলার প্রকল্প গ্রহণ করলেও চলতি বর্ষা মৌসুমের আগে কাজ শেষ না করায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এতে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাট-বাজারসহ শতাধিক ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে বেশকিছু ঘরবাড়ি ও স্থাপনা।
মাকড়াইল, চাকশী, নওখোলা, চরবকজুড়ি, তেতুলিয়া, লংকারচর ও ঘাঘা এলাকা ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা যায়। তেঁতুলিয়া গ্রামটি কয়েক বছর আগেই উপজেলার মানচিত্র থেকে নদীগর্ভে প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। সচ্ছল বাসিন্দারা গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে গেলেও দরিদ্র জনগোষ্ঠী পাশের কৃষি জমিতে বসতবাড়ি নির্মাণ করে বসবাস শুরু করে। কিন্তু সেখানেও ভাঙন শুরু হয়েছে।
গত এক সপ্তাহের মধ্যে ওই গ্রামের হারুন মোল্যা, ইউনুস শেখ, সাহেদ আলী, সুরুজ মোল্যা, জব্বার মোল্যা ও আকিরণ বেওয়ার বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এছাড়া একইস্থানে আরও কয়েকটি বসতবাড়ির বাসিন্দারা ভাঙন আতঙ্কের মধ্যে দিন-রাত পার করছেন। যেকোনো সময় ওইসব বাড়ি নদীতে ভেঙে যেতে পারে।
গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ মোল্যা জানান, বসতবাড়ি ছাড়াও অনেক কৃষি জমি নদীতে ভেঙে গেছে। বারবার বসতবাড়ি স্থানান্তর করা দরিদ্র কৃষক পরিবারের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এদের অন্তরের চাপা কষ্ট দেখার কেউ নেই।
এদিকে, ২০২০-২১ অর্থবছরে শিয়রবর হাট সংলগ্ন এলাকা ও ঘাঘা গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে মধুমতি নদীতে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙনরোধ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। কিন্তু ওই স্থানে কাজ সময় অনুযায়ী শেষ না করায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। মাকড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির কিছু অংশ ভেঙে যাওয়ার পর বালুর বস্তা ফেলে কোনোরকম টিকিয়ে রাখা হয়েছে।
শিয়রবর এলাকার মধুমতি নদীভাঙন প্রতিরক্ষা কমিটির সভাপতি সৈয়দ আশরাফ আলী জানান, ‘শিয়রবরে নদীভাঙন রোধে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। অথচ বর্ষা মৌসুমের আগে ভাঙন রোধের কাজ শেষ পর্যায়ে থাকার কথা থাকলেও ২৫ শতাংশ কাজ হয়েছে কিনা সন্দেহ। নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় প্রবল স্রোতের কারণে আবারও ভাঙতে শুরু করেছে। ঠিকাদারের গাফিলতি আর নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবহেলার কারণে শেষ সম্বল হারাতে বসেছে এলাকাবাসী। তারা নদীভাঙন রোধের কা দ্রুত শেষ করার জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বার বার জানালেও আমলে নিচ্ছে না।
নদীভাঙন কবলিত ঘাঘা গ্রামের বাসিন্দা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসলাম হোসেন টুটুল জানান, নব্বই হাজার জিও ব্যাগ ফেলার কথা থাকলেও ফেলা হয়েছে মাত্র ২০ থেকে ২১ হাজার ব্যাগ। পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ রয়েছে অথচ তা ভাঙন পয়েন্টে বসানো হচ্ছে না। নদীভাঙনের ফলে সর্বশেষ আশ্রয়স্থল টুকু আবারও মধুমতি নদীগর্ভে হারানোর ভয়ে গ্রামবাসী চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। এলাকাবাসী জরুরি ভিত্তিতে নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জল কুমার সেন বলেন, ‘কাজের মেয়াদ প্রায় তিন বছর। এছাড়া বর্তমানে ফান্ডের অভাবে কাজ করা যাচ্ছে না। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে সাধারণত কাজ করা হয় না।
নদী বন্দর / জিকে