গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের তিন দিকেই মধুমতী নদী। প্রায় ৩০ বছর ধরে নদীভাঙনে এ ইউনিয়নের অনেক গ্রামের অর্ধেক অংশ চলে গেছে নদীগর্ভে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা চালালেও কোনো ফল হয়নি।
এলাকাবাসী দাবি, ভাঙনকবলিত এলাকায় স্থায়ী নদীশাসনের ব্যবস্থা করা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিবছর নদীভাঙনে বিলীন হয়েছে এ ইউনিয়নের শত শত একর ফসলি জমি। নিঃস্ব হয়েছে অনেক পরিবার। মধুমতীর ভাঙনে গত কয়েক বছরে এমন অন্তত ৬০০ পরিবার তাদের বসতঘর সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন।
অনেকেই সহায় সম্বল হারিয়ে অন্য এলাকায় বসবাস করছেন। অনেক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে নদীর পশ্চিমপাড়ে চর ইছাখালী গ্রামে।
ইছাখালী গ্রামের ৭৫ বছরের বৃদ্ধ নফের আলি মোল্যা বলেন, পাঁচ বিঘা জমি গাঙে চইলে গেইছে। নদীতে এম্নে বাড়িও চইলে যাবে। এহন সরকার যুদি বাইন্দে দেয়, তাইলি থাকতি পারব। আর না হলি আমাগের থায়ার কোনো কায়দা নাই।
একই গ্রামের বীর মুক্তিযাদ্ধা ইউসুফ আলি বলেন, নদী যদি না বান্দে, তাইলে এহানে থায়ার কোনো কায়দা নাই। নিঃস্ব হইয়ে গেইছি। বিলীন হইয়া গেইছি। এহন সরকার কয়ডা ভাতার টাহা দেয়, তাই দিয়ে খাইয়ে বাঁইচে আছি। আর তো কিছু নাই। জমি নদীর মইধ্যে যাওয়ার পর আর কি কিছু থায়ে?
গ্রামের যুবক ঈমান আলি বলেন, গত ২৫-৩০ বছর ধরে নাকি এভাবে নদী ভাঙছে। আমার বাবার কাছ থেকে জেনেছি, আমাদের বাড়ি পাঁচবার সরিয়ে নিয়ে নতুন করে বানাতে হয়েছে। দাদাদের আমল থেকেই এ এলাকার নদী ভাঙছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর কোনো স্থায়ী সমাধান হয়নি।
সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুপারুল আলম বলেন, আমার ইউনিয়নের তিন দিকেই মধুমতী নদী। ইছাখালী, ডুবসীসহ বিভিন্ন গ্রামের বাড়িঘর, ফসলি জমি প্রতিবছরই মধুমতীর ভাঙনের কবলে পড়ছে।
ভাঙনপ্রবণ এলাকায় স্থায়ী নদীশাসনের দাবি জানান তিনি।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাশেদুর রহমান বলেন, প্রায় প্রতিবছরই মধুমতী নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। এর একটা স্থায়ী সমাধান দরকার। আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিষয়টি সরেজমিন তদন্ত করে জানিয়েছি। আশা করছি তারা দ্রুত এর ব্যবস্থা নেবে।
গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফায়জুর রহমান জানান, নদীশাসনের জন্য এরই মধ্যে একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। এটি অনুমোদন পেলে তারা টেন্ডার প্রক্রিয়ার দিকে যাবেন।
নদী বন্দর / জিকে