একটি সেতুর অভাবে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে দিনাজপুরের বিরামপুর ও হাকিমপুর উপজেলার ১০ গ্রামের মানুষ। একটি সেতুর জন্য দীর্ঘদিনের অপক্ষোর শেষ হয়নি তাদের। বিরামপুর ও হাকিমপুর উপজেলার বুকচিরে বয়ে যাওয়া চৌঘুরিয়া ঘাটে ছোট যমুনা নদী। দুই উপজেলার চৌঘুরিয়া ও ঘাসুরিয়া গ্রামের মধ্যবর্তী অংশ দিয়ে চলাচল করা ১০ গ্রামের দুই হাজার পানচাষিসহ প্রায় ২০ হাজার মানুষ একটি সেতুর অভাবে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।
বিরামপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী চৌঘুরিয়া গ্রামের সঙ্গে ছোট যমুনা নদীর পূর্বপাশে হাকিমপুর উপজেলার নয়ানগর গ্রামের দূরত্ব মাত্র ৫০০ মিটার। কিন্তু এ নদীতে কোনো সেতু না থাকায় নদীর পশ্চিম পাশের চৌঘুরিয়া, রামচন্দ্রপুর, রণগাঁও, দামোদরপুর ও দাউদপুর গ্রামের কয়েক হাজার মানুষকে কাটলাবাজার ও খট্টামাধবপাড়া গ্রাম হয়ে মোটরসাইকেল বা রিকশা-ভ্যানে করে নয়ানগর যেতে সড়কপথে প্রায় সাত কিলোমিটার রাস্তা ঘুরতে হয়। এলাকাবাসীর দাবি, ছোট নদীর ওপর একটি পাকা সেতু হলে দূরত্ব কমে যাবে। এতে করে দুই উপজেলার মানুষের চলাচল আরও সহজ ও সাশ্রয়ী হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নদীর পশ্চিম পাশের কয়েকটি গ্রাম থেকে অনেক স্কুলশিক্ষার্থী ও শতাধিক পানচাষি নৌকায় করে পূর্বপাশে নিয়মিত চলাচল করেন। শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ নয়ানগর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও হাকিমপুর ডিগ্রি কলেজে লেখাপড়া করে। এসব শিক্ষার্থী বর্ষা মৌসুমে নদীর ঘাটে সময়মতো নৌকা না পাওয়ায় ও ঘাটে অনেক সময় মাঝি না থাকায় ভোগান্তিতে পড়ে। শুধু তাই নয়, অনেকসময় মাঝি না থাকায় শিক্ষার্থীরা নিজেরাই নৌকার বৈঠা ধরে বা দড়ি টেনে নদী পার হয়।
অন্যদিকে, অল্প পানির মৌসুমে নদীতে বাঁশের সাঁকো চলাচলের উপযোগী না থাকায় শিক্ষার্থীদের নদীতে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এতে করে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানকে বিদ্যালয়ে যেতে দেন না।
নয়ানগর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী চৌঘুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ রানা জানায়, বর্ষাকালে নৌকায় নদী পার হতে প্রচণ্ড ভয় লাগে। নদীর পাড়ে ঘাটলা না থাকায় নৌকায় উঠতে বা নামতে অনেকে পানিতে পড়ে যায়। আবার অনেক সময় ঘাটে মাঝি না থাকায় স্কুলে যেতে অনেক দেরি হয়, ক্লাস মিস হয়। এখানে একটি সেতু হলে আমাদের অনেক উপকার হবে।
নদীতে কম পানি থাকলে ঘাটের ইজারাদার প্রতিবছর ওই নদীর ওপর বাঁশের সাঁকো তৈরি করে যাত্রী পারাপার করেন। কিন্তু জনসাধারণের অতিরিক্ত চলাচলে অল্পদিনেই সেটি ভেঙে চলাচলের অনুপোযুক্ত হয়ে পড়ে। আর এ বাঁশের তৈরি নড়বড়ে সাঁকো দিয়ে রিকশা-ভ্যান বা পান বহনকারী যান চলাচল করা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়।
বিরামপুর উপজেলার চৌঘুরিয়া, দামোদরপুর, রামচন্দ্রপুর, রণগাঁ ও দাউদপুর গ্রামে প্রায় পাঁচ হাজার পানের বরজ রয়েছে। এসব বরজে প্রায় দুই হাজার পানচাষি রয়েছেন। পানচাষিরা পান বিক্রি করতে এ এলাকার পানের সবচেয়ে বড় বাজার হাকিমপুরের হিলিহাটে যান। আর এ হাটে যেতে হলে ৫০০ মিটার রাস্তার বদলে প্রায় সাত কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে যেতে হয়।
অপরদিকে, হাকিমপুর উপজেলার মোংলা, নয়ানগর, খট্টামাধবপাড়া ও ঘাসুড়িয়া গ্রামের কয়েক হাজার মানুষকে মোটরসাইকেল ও রিকশা-ভ্যান যোগে একইভাবে ঘুরে আসতে হয়। বিশেষ করে নদীর পশ্চিম পাশের পানচাষি ও রোগীরা এ পথে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন।
চৌঘুরিয়া গ্রামের পানচাষি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম বলেন, ছোট যমুনা নদীর পশ্চিমপাশে কয়েক গ্রামে প্রায় পাঁচ হাজার পানের বরজ রয়েছে। নদীতে ব্রিজ না থাকায় এ এলাকার প্রায় দুই হাজার খেতাল (পানচাষি) কয়েক কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে হিলিহাটে যান। পান নিয়ে অনেক সময় দেরিতে হাটে পৌঁছানোর কারণে তারা পানের দাম কম পান। এখানে একটি ব্রিজ হলে এলাকার কয়েক হাজার মানুষ উপকৃত হবেন বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. শিবলী সাদিক বলেন, কাটলা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর সাধারণ মানুষ ও পানচাষিদের কষ্টের কথা চিন্তা করে চৌঘুরিয়া-ঘাসুড়িয়া ঘাটে ছোট যমুনা নদীর ওপর একটি পাকা সেতু তৈরিসহ উপজেলায় ছোট-বড় আরও ১০টি ব্রিজের জন্য একটি প্রস্তাবনা ঢাকায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি পাশ হলে ওই এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান হবে।
নদী বন্দর / সিএফ