ফরিদপুরের চরাঞ্চলে আবাদ করা সরিষার ক্ষেতগুলো ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে। নর্থচ্যানেল, মুনসুরাবাদ এলাকার মাঠজুড়ে যত দূর চোখ যায়, তত দূর দেখা যায় হলদে রঙের সরিষা ফুল। বিশাল এ মাঠ দূর থেকে দেখতে মনে হয় বিশাল আকৃতির হলুদ চাদর বিছানো।
নর্থ চ্যানেল ও মুনসুরাবাদ এলাকার ফসলি জমিতে এখন হলদে রঙের সরিষা ফুলে ছেয়ে গেছে। ওই এলাকার সরিষা চাষি মো. সােজা মৃধা, ফারুক মুন্সি ও জামাল টিকাদার জানান, এলাকার এই দুটি মাঠজুড়ে এখন সরিষার আবাদ। হলদে রঙের সমারোহে চোখজুড়িয়ে যায়।
তবে পুরোপুরি ফুল আসতে আরও সময় লাগবে। বিভিন্ন উপজেলায় জমির পর জমিতে সরিষার আবাদ দেখা গেছে। মাঠের পর মাঠজুড়ে সরিষা ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্যে ভরে ওঠার পালা। ফুলে ফুলে মধু আহরণে ভিড়ছে মৌমাছি। ভালো ফলনের সম্ভাবনার জানান দিচ্ছে। সবমিলিয়ে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন সরিষা চাষিরা।
সাধারণত রবি মৌসুমে কার্তিকের মাঝামাঝি থেকে অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সরিষার বীজ বপনের সময়। শীতকালে ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি সরিষা ফুলে ছেয়ে থাকে চারদিক। তবে ফরিদপুরে চর এলাকাগুলোতে অগ্রীম জাতের সরিষা আবাদ করা হয়। এছাড়া যে জমিতে সরিষা আবাদের পর বোরো ধানের চাষ করা হবে সেসব জমিতে আগাম সরিষা চাষ করা হয়।
জেলার বোয়ালমারী, মধুখালী, সদরপুর, ভাঙ্গা, সালথা, নগরকান্দা আলফাডাঙ্গা ও চরভদ্রাসনের বিভিন্ন স্থানে এ মৌসুমে সরিষার আবাদ লক্ষ্য করা যায়। আমন ধান ঘরে তোলার পরই কৃষকরা ওই জমিতে সরিষা চাষ করেন। ইতোমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠে সরিষার আবাদ নব্বই ভাগ শেষ হয়েছে কিছুদিন আগে। বিশেষ করে চর এলাকায় পুরোদমে ফুল ফুটতে শুরু করেছে।
চর এলাকায় সরিষাক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, সরিষা মাঠে ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসছে বিভিন্ন বয়সের নারী, পুরুষ, শিশুসহ বিনোদনপ্রেমীরা। হলুদ সরিষা ফুলের সাথে ছবি-সেলফি তুলছেন কেউ কেউ। তবে কিছুদিনের মধ্যেই ভিড় বাড়বে ছবি তুলতে।
প্রকৃতিপ্রেমীদের ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়বে এসব ছবি। ছবি, ভিডিও ধারণের জন্য এসেছেন এলাকার পলাশ খান নামের এক যুবক। তিনি জানান, এবার একটু আগে-ভাগে ছবি, ভিডিও সংগ্রহ করতে এসেছি। সত্যি এখানে এসে মন ভরে গেছে। মনজুড়ানো দৃশ্য। চারদিকে শুধু হলুদ আর হলুদ।
উপজেলার রামকান্তপুর এলাকার ওসমান সেখ, আলাল খাঁ, সুরুজ মোল্লাসহ একাধিক কৃষক জানান, উপজেলার অধিকাংশ জমিতে সরিষা আবাদ শেষ হয়েছে প্রায় ১৫-২০ দিন আগে। আবার অনেকে মাসখানেক আগে শেষ করেছেন। আগাম চাষিদের জমিতে সরিষা গাছে ফুল এসেছে। তবে সব জমিতে পুরোপুরি ফুলে ফুলে ভরে উঠতে সময় লাগবে এক থেকে দেড় মাস।
বোয়ালমারী উপজেলার গুনবহা এলাকার চাষি হারুন মোল্লা, বাইখীর গ্রামের মানোয়ার খান, সুইট মণ্ডল, লংকারচর গ্রামের সুশান্ত গয়ালী, সুধাংশু গয়ালী, রুপদিয়া-বেড়াদি এলাকার জাকিরুল হোসেন জানান, এ বছর সরিষাক্ষেতে ভালো ফলন হবে বলে আশাবাদী।
এখন পর্যন্ত জমিতে কোনো সমস্যা দেখা যায়নি। বরং গাছগুলো সুন্দর আর স্বাস্থ্যবান হয়ে উঠেছে। তবে বেশিরভাগ জমিতে ফুল আসতে শুরু হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. হযরত আলী বলেন, গত বছর সরিষার ফলন বেশ ভালো হয়েছে।
চলতি মৌসুমে জেলায় ৮ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে। এ জেলার চাষিরা বারি-১৪, বিনা-১৬, বিনা-৪, বিনা-৯ জাতের সরিষা আবাদ করেন। বপন থেকে শুরু করে এ ফসল ফলনে সময় লাগে ৮০-৯০ দিন। এরই মধ্যে সব জমিতে সরিষা আবাদ শেষ হয়েছে। তবে এখনও ৫ ভাগ কৃষক সরিষার চাষ করতে বাকি। চর এলাকার কৃষকদের আগাম চাষ করা সব জমিতে ফুল ফুটেছে।
নদী বন্দর / জিকে