নিউমোনিয়ার কারণে প্রতিবছর হার হাজার শিশু ও বয়স্কদের মৃত্যু ঘটছে। ফুসফুসের সংক্রমণের প্রভাবে যেসব অসুখে মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের অন্যতম হলো নিউমোনিয়া। এই অসুখে ফুসফুসে প্রদাহ তৈরি হয়, অনেক সময় পানি জমতে পারে ফুসফুসে।
স্ট্রেপ্টোকক্কাস নিউমোনি নামের ব্যাকটেরিয়া এই রোগের অন্যতম কারণ হলেও ভাইরাস বা ছত্রাকের প্রভাবেও এই অসুখ দানা বাঁধে শরীরে।
এ বিষয়ে ভারতীয় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী জানান, ‘মূলত ক্রনিক ঠান্ডা লাগা, বুকে শ্লেষ্মা জমে থাকার সূত্র ধরেই এই অসুখ ছড়ায়। ঠান্ডা লাগলেই যে সবার নিউমোনিয়া হবে তা নয়, তবে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, মূলত, বয়স্ক ও শিশুরাই এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।
তার মতে, নিউমোনিয়ার প্রাথমিক লক্ষণ হলো প্রচণ্ড জ্বর। ওষুধে জ্বর কমলেও এর প্রভাব শেষ হতেই জ্বর বেড়ে যায়। ১০৩-১০৪ ডিগ্রি উঠতে পারে জ্বর। এর সঙ্গে শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা ইত্যাদি তো থাকেই।
তবে নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীকে ছুঁলেই নিউমোনিয়ার জীবাণু শরীরে ছড়ায় না। তবে আক্রান্তের কাশি বা হাঁচি থেকে তা ছড়াতে পারে নিউমোনিয়া। এই ‘ড্রপলেট ইনফেকশন’ থেকে বাঁচতে মাস্ক ব্যবহার করুন।
নিউমোনিয়ার উপসর্গগুলো নির্ভর করে শারীরিক অবস্থা এবং কী ধরনের জীবাণুর সংক্রমণ হয়েছে তার ওপর। জেনে নিন এ রোগের কয়েকটি লক্ষণ-
>> জ্বর (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাদের দুর্বল তাদের জ্বর নাও থাকতে পারে)
>> কাশি
>> শ্বাসকষ্ট
>> কাঁপুনি
>> বুকে ব্যথা যা শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে ওঠা নামা করে।
>> মাথাব্যথা
>> বমি বমি ভাব
>> ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়া
>> খাওয়াদাওয়ায় অনীহা ইত্যাদি।
সাধারণ সর্দি-জ্বরের সঙ্গে এর বেশ কিছু পার্থক্য থাকে। একটু খেয়াল রাখলেই এই রোগ নির্ণয় করা সহজ। চিকিৎসকের মতে, প্রাথম দিকে সাধারণ জ্বর-সর্দি-কাশি দিয়ে নিউমোনিয়া শুরু হলেও পরে দেখা যায় জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও কশি বাড়ে।
সাধারণত ভাইরাল ফিভার হলে যেখানে ওষুধ খেলে কমে যায় সেখানে নিউমোনিয়া হলেও তা সারতে চায় না। বুকের ব্যথাও বাড়তে থাকে। অনেক সময় জ্বরের ওষুধের কড়া ডোজে জ্বর নামলেও তা আরও ফিরে আসে। অবস্থা গুরুতর হলে কাশির সঙ্গে রক্তও উঠতে পারে।
এসব লক্ষণ দেখা দিলেই দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। একমাত্র চিকিৎসকই বুঝতে পারেন কোনো ব্যক্তি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত কি না। তবু নিশ্চিত হতে কিছু পরীক্ষা করাতে হয়। এক্স-রে, সিটি স্ক্যানও করে দেখা হয় অনেক সময়।
নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি কাদের?
>> বৃদ্ধ
>> ধূমপায়ী
>> যাদের ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত
>> ফুসফুসে কোনো আঘাত পেয়েছেন যারা
>> কেমোথেরাপি (ক্যানসারের চিকিৎসা) বা অন্য কোনো ওষুধ খাওয়ার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে এমন রোগীদের।
নিউমোনিয়া থেকে বাঁচতে কী কী করবেন?
>> পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।
>> প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হবে।
>> চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে।
>> ভালোভাবে পরিষ্কার করে হাত ধুতে হবে।
>> নিজের প্রতি যত্ন নিন।
>> সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন।
>> ধূমপান এড়িয়ে চলুন।
>> অন্যের সামনে হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় রুমাল ব্যবহার করুন।
>> সর্দি-কাশি হলে মাস্ক পরে থাকুন।
>> টিকা দিতে হবে। যেমন- ইনফ্লুয়েঞ্জার জন্য ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন খুবই কার্যকর।
>> ডায়াবেটিস, এইডস, পুষ্টিহীনতা ইত্যাদির চিকিৎসা করাতে হবে।
নদী বন্দর / বিএফ