চীনে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি বছর আগের একটি ডাইনোসরের ভ্রূণের জীবাশ্ম উদ্ধার করা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, নিখুঁতভাবে সুরক্ষিত ডাইনোসরের একটি ভ্রূণ খুঁজে পেয়েছেন তারা। ঠিক মুরগির বাচ্চার মতো ডিম ফুটে জন্ম নেওয়া পর্যায়ে ছিল ওই ভ্রূণটি। খবর বিবিসির।
ভ্রূণটির জীবাশ্ম তারা খুঁজে পেয়েছেন দক্ষিণ চীনের গানঝউ শহরে এবং তাদের হিসেবে এটি অন্তত ছয় কোটি ৬০ লাখ বছরের পুরোনো। ধারণা করা হচ্ছে, এটি দাঁতবিহীন থেরোপোড অথবা ওভিরাপ্টোরোসোর প্রজাতির ডাইনোসর। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন বেবি ইংলিয়াং।
গবেষক ড. ফিওন ওয়াইসুম মা বলেন, ইতিহাসে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট অবস্থায় সুরক্ষিত ডাইনোসরের ভ্রূণের জীবাশ্ম খুঁজে পাওয়া ঘটনা এটি।
এই আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের হাতে নতুন তথ্য এনে দিয়েছে যা দিয়ে তারা ডাইনোসরের সঙ্গে আধুনিক প্রজাতির পাখির কতটা মিল রয়েছে তা প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন।
এই জীবাশ্ম থেকে দেখা যাচ্ছে, ডাইনোসরের ভ্রূণটি ডিমের ভেতর গুটিয়ে থাকা অবস্থায় ছিল, যাকে বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় বলা হয় টাকিং, পাখিদের ডিম ফুটে বাচ্চা বের হবার কিছুক্ষণ আগে ভ্রূণ ঠিক এই অবস্থায় থাকে।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে ড. ফিওন ওয়াইসুম বলেন, এ থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, আধুনিক পাখি প্রজাতির পূর্বপুরুষ ছিল ডাইনোসর এবং ডাইনোসরের বিবর্তনের মধ্যে দিয়েই প্রথম জন্ম নেয় আজকের পাখি প্রজাতি।
ওভিরাপ্টোরোসোরসের অর্থ হচ্ছে ডিম চুরি করা সরীসৃপ। এই প্রজাতির ডাইনোসরের গা ছিল পালকে ঢাকা। ছয় কোটি ৬০ লাখ থেকে ১০ কোটি বছর আগে এদের বাসভূমি ছিল আজকের এশিয়া ও উত্তর আমেরিকায়।
গবেষণা দলে অংশ নেওয়া জীবাশ্মবিদ অধ্যাপক স্টিভ ব্রুসেট এক টুইট বার্তায় বলেন, এটি তার দেখা ‘অন্যতম সবচেয়ে চমকপ্রদ একটি ডাইনোসরের জীবাশ্ম’। তিনি বলেন, এই জীবাশ্ম থেকে দেখা যাচ্ছে এই বাচ্চাটির অবস্থান ছিল ঠিক ডিম ফুটে বের হওয়ার আগ মুহূর্তের।
গবেষকরা বলছেন, ডাইনোসরের ডিমের ভেতর ভ্রূণটি এই অবস্থায় সম্ভবত সুরক্ষিত হয়ে যায় আকস্মিক এক ভূমিধসের কারণে। ধসের নিচে চাপা পড়ার কারণে অন্যান্য প্রাণী ভ্রূণটিকে খেয়ে ফেলতে পারেনি।
বেবি ইংলিয়াংয়েও দৈর্ঘ্য মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত ১০.৬ ইঞ্চি (২৭ সেন্টিমিটার) এবং এটি ৬.৭ ইঞ্চি লম্বা একটি ডিমের মধ্যে গুটিয়ে ছিল। এটি এখন রাখা হয়েছে চীনের ইংলিয়াং স্টোন ন্যাচার হিস্ট্রি মিউজিয়ামে।
ডিমটির সন্ধান প্রথম পাওয়া যায় ২০০০ সালে। কিন্তু এটি দশ বছর যাদুঘরে ফেলে রাখা হয়েছিল।এরপর জাদুঘরটি সংস্কারের কাজ যখন শুরু হয়, তখন সেখানে গচ্ছিত বিভিন্ন পুরোনো জীবাশ্ম ঘেঁটে দেখার সময় গবেষকরদের নজরে আসে মূল্যবান ডাইনোসরের এই ডিমের জীবাশ্মটি। তাদের ধারণা হয় ডিমটির ভেতরে হয়ত ভ্রূণও রয়েছে।
ডাইনোসরটির দেহের বেশিরভাগ অংশই এখনও পাথরে ঢাকা অবস্থায় রয়েছে। গবেষকরা এখন উন্নত প্রযুক্তির স্ক্যানিং পদ্ধতি ব্যবহার করে তার পূর্ণাঙ্গ কঙ্কালের ছবি তৈরি করবেন বলে জানিয়েছেন।
নদী বন্দর / পিকে