নওগাঁয় দিন দিন বাড়ছে পেয়ারা চাষ। লাভজনক হওয়ায় এটি চাষে কৃষকদের মাঝে আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিজেদের জমি না থাকলেও জমি বন্ধক নিয়ে পেয়ারা বাগান করছেন কৃষকরা। তবে যে পরিমাণ পেয়ারার বাগান রয়েছে তা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে জেলার বাইরে পাঠানো সম্ভব হয় না বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
পেয়ারা চাষের প্রতি আগ্রহ থাকায় জমি বন্ধক নিয়ে বাগান করেছেন নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার সফাপুর ইউনিয়নের বিনোদপুর গ্রামে আহাদ আলী। নিজের বসবাসকৃত বাড়ি ছাড়া চাষাবাদের কোনো জমি নেই। তিনি ও তার ছেলে সামছুলকে নিয়ে পেয়ারা বাগান করেছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় ৪৪৭ হেক্টর জমিতে পেয়ারা বাগান রয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৪৫ হেক্টর, নিয়ামতপুরে ১১৮ হেক্টর, মান্দায় ২২ হেক্টর, মহাদেবপুরে ৩০ হেক্টর এবং ধামইরহাটে ৭০ হেক্টর।
জানা গেছে, বিভিন্ন রকমের ফলের ব্যবসা করে সংসার চালান আহাদ আলী। ছেলে সামছুল কলা ব্যবসা করার সুবাদে কুষ্টিয়া জেলায় তার আসা-যাওয়া রয়েছে। সেখানে পেয়ারা বাগান মালিকদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তাদের কাছ থেকে পেয়ারা চাষের ধারণা নিয়ে থাই পেয়ারার চারা কিনে নিয়ে আসেন। তবে পেয়ারা বাগানের পরিচর্চা থেকে শুরু করে সবকিছুর তদারকি করেন আহাদ আলী।
পেয়ারা চাষি আহাদ আলী এ প্রসঙ্গে বলেন, বছরে ২০ হাজার টাকা বিঘা হিসেবে বাড়ির পাশে পাঁচ বছরের জন্য জমি বন্ধক নেওয়া হয়। গত তিন বছর আগে বন্ধক নেওয়া দেড় বিঘা জমিতে জৈব ও রাসায়নিক সার দিয়ে জমি প্রস্তুত করে ৪৫০টি গাছ লাগানো হয়। গাছ লাগানো দেড় বছর পর থেকে ফল আসা শুরু হয়।
২২০০ টাকা মণ হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে পেয়ারা কিনে নিয়ে যান। বিক্রি নিয়ে কোনো সমস্যা হয় না। গত বছর সর্বোচ্চ ৩২০০ টাকা মণ বিক্রি করা হয়েছিল। এখন পর্যন্ত এ বাগান থেকে ১০ লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি হয়েছে।
তিনি বলেন, পেয়ারার বাগান করার জন্য আরো তিন বিঘা জমি ১৮ হাজার টাকা বছর হিসেবে বন্ধক নেওয়া হয়েছে। পেয়ারায় লাভ ভালো হওয়ায় আশার স্বপ্ন দেখছি। বাগানে নিয়মিত ৬ জন শ্রমিক কাজ করেন। শ্রমিকদের একবেলা খাবার দিলে ২৫০ টাকা মজুরি দিতে হয়। আর খাবার না দিলে ৩০০ টাকা মজুরি দিতে হয়। আমার ঘরবাড়ি ছাড়া চাষাবাদের কোনো জমি নেই। ছেলেকে নিয়ে ফল ব্যবসা করে আমার সংসার চলে। এখন অনেকেই পেয়ারা বাগান করছেন।
একই গ্রামের পেয়ারা চাষি ওমর ফারুক বলেন, এলাকায় অন্যান্যদের দেখাদেখি গত তিন বছর থেকে পেয়ারা চাষ করছি। পাঁচ বছরের জন্য ২০ হাজার টাকা বিঘা হিসেবে দুই বিঘা জমিতে পেয়ারার বাগান করেছেন। যেখানে ৫৫০টি গাছ রয়েছে। পেয়ারার প্রধান সমস্যা পোকার আক্রমণ। এ কারণে অনেক পেয়ারা নষ্ট হয়ে যায়। সেগুলো অর্ধেক দামে বিক্রি করা হয়।
৮-১০ দিন পরপর ৭০০-৮০০ টাকার কীটনাশক স্প্রে করতে হয়। বর্তমানে প্রকারভেদে ১৮০০-২২০০ টাকা মণ হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। যখন পেয়ারার উৎপাদন বেশি হয়, তখন ৮০০-১০০০ টাকা মণ বিক্রি হয়। আমরা যে পরিমাণ পেয়ারা উৎপাদন করি তারা জেলার চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় না। তবে পেয়ারার প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
পেয়ারার বাগানের শ্রমিক মোতাহার, তোতামিয়া ও রফিকুল ইসলাম জানান, এলাকায় কয়েকটি পেয়ারার বাগান গড়ে উঠেছে। বছরের অধিকাংশ সময়ই তারা সেখানে কাজ করেন। পেয়ারা বাগানের কাজ শেষ হলে অন্য কাজ করে তাদের সংসার চলে।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শামসুল ওয়াদুদ বলেন, মৌসুমী ফলের মধ্যে পেয়ারা বেশ পুষ্টিকর ফল। স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রাখলে পেয়ারা খেলে প্রচুর লাভ। ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ ফল। লাভজনক হওয়ায় পেয়ারার আবাদ প্রতি বছরই বাড়ছে। বাজারে এখন দামও ভালো। পেয়ারা চাষে চাষিদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।
নদী বন্দর / এমকে