পদ্মাপারে এখন অপেক্ষা উৎসবের। আগামী ২৫ জুন চালু হতে যাচ্ছে পদ্মা সেতু। দিনের হিসাবে বাকি মাত্র ১২ দিন। তাই উৎসবের প্রস্তুতি নিচ্ছে কোটি মানুষ।
এরই মধ্যে কাজ প্রায় শেষ হয়ে গেছে। এখন শুধু উদ্বোধনের জন্য দিন গণনা। এ সেতুর মাধ্যমে দেশের যোগাযোগ খাতে সৃষ্টি হতে যাচ্ছে এক নতুন ইতিহাস।
উদ্বোধনের জন্য সেতু পুরোপুরি প্রস্তুত করতে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের খুঁটিনাটি কাজ। আগামী ২২ জুনের মধ্যে সেতুর চলমান কাজের সমাপ্তি হতে যাচ্ছে। তখন ০.৫০ শতাংশ কাজ বাকি থাকবে। সেই কাজসহ আগামী এক বছর সেতুর পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কম্পানি লিমিডেট। এর মধ্যে কোনো সমস্যা হলে সেটিও দেখবে প্রতিষ্ঠানটি। উদ্বোধনের এক বছর পর পদ্মা সেতু সরকারকে হস্তান্তর করা হবে।
নিজের বাগানে যত্ন করে ফলানো ফল এত দিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরিপারের অপেক্ষায় থেকে পচে যাওয়ার সাক্ষী আমিনুল ইসলাম। পিরোজপুরের এই বাসিন্দা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি প্রায়ই ঢাকা আসা-যাওয়া করি। দূর থেকে পদ্মা সেতুর দিক তাকিয়ে ভাবতাম কবে সেতুর কাজ শেষ হবে। এখন আর কোনো ভাবনা নয়। সেতু উদ্বোধন হলে এই অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি হবে। আমরা সত্যি সত্যি আধুনিক জীবনের স্বাদ পেতে চলেছি। ’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া ছাত্র সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘অনেকেই শুধু যোগাযোগব্যবস্থার জন্য উন্নত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে পিছিয়ে রয়েছে। পদ্মা সেতু সব ক্ষেত্রে সফলতার বার্তা নিয়ে আসছে। বদলে যাবে আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের চেহারা। অনেকেই এখন বাধ্য হয়ে ঢাকায় থাকে। ঢাকায় যারা থাকতে চায় না, তারা ফিরবে শিকড়ের কাছে। ’
বর্তমানে সেতুতে সড়ক সংকেত (রোড মার্কিং), বিদ্যুতের সাবস্টেশন, গ্যাস পাইপলাইন, বিদ্যুত্লাইন এবং কেবল লাইনিংয়ের কাজ প্রায় শেষ অবস্থায় রয়েছে। সেতুতে চলছে রেলিং বসানোর কাজও। শেষ হয়েছে সেতুতে লাগানো ৪১৫টি বাতির পরীক্ষামূলক প্রজ্বালন। টোলপ্লাজা পুরোপুরি প্রস্তুত হয়েছে। পরিবেশের কথা বিবেচনা করে সেতু প্রকল্পে লাগানো হয়েছে গাছ। আরো গাছ লাগানোর কাজ চলমান থাকবে।
গতকাল রবিবার পদ্মা সেতু প্রকল্পে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মাওয়া প্রান্তের টোলপ্লাজায় শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে। সেতুর প্রথম সংযোগ উড়াল সেতুর (ভায়াডাক্ট) ডিভাইডারে ঘষামাজা করে রং করা হচ্ছে। মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতু (উত্তর) থানার পাশেই সুধী সমাবেশের আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। সংযোগ সড়ক থেকে টোলপ্লাজা সড়কের মিডলাইনের কাজ চলছে।
এ ছাড়া সার্ভিস এরিয়ার ভাঙাচোরা রাস্তা মেরামত করা হচ্ছে। সেতুর নিচতলায় গ্যাস পাইপলাইনে কাজ করা হচ্ছে। অনাকাঙ্ক্ষিত কেউ যেন ঢুকতে না পারে সে জন্য টোলপ্লাজা এবং সংযোগ সড়ক পুরোটা তারের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেওয়ার কাজ চলছে। চলছে মূল সেতুতে রেলিং বসানোর কাজ।
পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষের দিকে, তাই আনন্দিত সেতুতে কর্মরত শ্রমিকরাও। মো. মাহবুব হোসেন নামের এক শ্রমিক জানান, গত দেড় বছর ধরে তিনি সেতুর গ্যাস লাইনে কাজ করছেন। কিছুদিন পর সেতু উদ্বোধন হতে যাচ্ছে তাই তিনি খুশি।
মো. আলমগীর নামের আরেক নির্মাণ শ্রমিক বলেন, ‘এই সেতুতে আমি কাজ করেছি সেটা সারা জীবন গর্ব করে বলতে পারব। আমি গর্বিত পদ্মা সেতুতে কাজ করতে পেরে। ’
নদী বন্দর/আরকে