ভারতের গজলডোবা ব্যারেজের প্রভাবে তিস্তাসহ সবগুলো নদী এখন ধু ধু বালুচরে পরিণত হয়েছে। ফলে পানির অভাবে ক্ষীণ ও শুকিয়ে যাচ্ছে তিস্তা, ধরলা, সানিয়াজান ও দুধকুমারসহ উত্তরের সব নদ-নদী।
একসময় তিস্তায় যৌবন ছিল। কুমার নদী ভরা ছিল পানিতে। সারা বছরই স্থানীয় জেলেরা মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাতেন। এখন নদীতে পানি নেই, তাই আট হাজার জেলে বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
তিস্তার ১০০ কিলোমিটার অদূরে অবস্থিত ভারতের গজলডোবা ব্যারজের প্রভাবে লালমনিরহাটসহ গোটা উত্তরাঞ্চলের ছোট বড় অন্তত ১৬টি নদী কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। এভাবে নদনদীর বিলুপ্তির ফলে এবং চাষাবাদের জন্য ভূগর্ভস্থ পানির অপব্যবহারের ফলে উত্তরাঞ্চলের ভূমিগর্ভে পানির স্তর নামতে নামতে এখন বিপজ্জনক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে।
শুধু তাই নয়, এ অঞ্চলের জেলে সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষ, নদ-নদী ও প্রাকৃতিক খাল ও বিলের মাছ আহরণ করে সেগুলো বিক্রি করে জীবন ধারণ করত। তবে এখন বিলুপ্ত প্রায় জেলে সম্প্রদায়ের লোকজন।
তিস্তা নদীর এই করুণ দশার জন্য দীর্ঘ সময় ঝুলে থাকা পানি চুক্তিকে দায়ী করেছেন, তিস্তাপাড়ের জেলে-কৃষক পরিবারগুলো। সমগ্র তিস্তা দেশের উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ নদনদী শাখা-প্রশাখা খাল, বিলগুলো এবং জলাশয়গুলো শুকিয়ে যাওয়ায় অযোগ্য ভূমিতে পরিণত হয়েছে তিস্তা ও আশপাশের এলাকা।
লালমনিরহাটসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের বেশির ভাগ জেলা তিস্তা নির্ভর। কিন্তু তিস্তার উজানে গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে পানি নিয়ন্ত্রণ করায় বাংলাদেশ পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়েছে। বর্তমানে এ অঞ্চলের ভূগর্ভের পানির স্তর ক্রমেই নিচে নেমে যাচ্ছে।
তিস্তা পাড়ের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক মফিদার রহমান বলেন, তিস্তার উজানে গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে প্রতিবেশী দেশ ভারত একতরফাভাবে নদীর পানি নিয়ন্ত্রণে রাখায় বর্ষা শেষেই তিস্তা তার আশপাশের এলাকায় মরুভূমিতে পরিণত হয়। ফলে লালমনিরহাট, রংপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম জেলার অন্তত ১৪৫ কিলোমিটার মরুভূমিতে পরিণত হয়ে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে পড়ে। দেশের সবচেয়ে বড় সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের আশপাশের এলাকায় ধু ধু বালুচরে পরিণত হয়।
খেয়াঘাটের মাঝি মাজেদুল মিয়া বলেন, তিস্তা ব্যারেজের মূল গেটগুলোতে সামান্য পানি প্রবাহ রয়েছে, বাকি পুরো তিস্তা নদী বালুচরে পরিণত হয়েছে। এ কারণে আমাদের বেকার জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারুকুল ইসলাম বলেন, দেশের উত্তরাঞ্চলের এ জেলার দুই পাশে দুটি বড় নদী তিস্তা এবং ধরলা প্রবাহিত। যদি উন্মুক্ত জলাশয়, তিস্তা নদী এবং ধরলা নদীতে মৎস্য আইন বাস্তবায়ন করে মাছের উৎপাদন করা হয়। মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আমরা প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে থাকি। কিন্তু জেলেরা আগের মতো মাছ ধরতে পাচ্ছে না। যদি তিস্তায় খনন এবং মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, সে ক্ষেত্রে জেলেদের যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, তেমনি মাছ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউ দৌলা বলেন, নদীতে মাত্র ২ হাজার কিউসেক পানি রয়েছে। পানি কম থাকায় সবগুলো গেট বন্ধ রাখা হয়েছে। এ কারণে পানি শূন্য তিস্তা নদী।
নদী বন্দর/এসএইচ