বন্যার ভয়াবহ স্মৃতি মনে হলে এখনো আঁতকে উঠে সিলেটবাসী। এরই মধ্যে সিলেটে ফের বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত তিনদিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি আরো ১৫ দিন অব্যাহত থাকবে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।
শনিবার (১৭ জুন) সকাল থেকেই সিলেটে অনবরত বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে সুরমা-কুশিয়ারার সব কয়টা পয়েন্টে বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে পানি।
সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, ঢল আর বৃষ্টিতে সিলেটের নদনদীর পানি বেড়ে চলছে। সিলেটের উজানে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ভারতের মেঘালয় রাজ্যেও বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ফলে ঢল নামছে। এ অবস্থায় বন্যার আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে জেলা প্রশাসন।
এখনই বিপদসীমা ছুঁইছুঁই করছে পানি। ঢল আর বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে চলতি সপ্তাহেই মাঝারি ধরনের বন্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঢলে ইতোমধ্যে সিলেটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বিভিন্ন হাওরে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।
সুরমা ও কুশিয়ারা নদীতে পানি বেড়েছে বলে জানিয়েছে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড। বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশিফ আহমেদ জানান, নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। সামান্য বাড়লে তা অতিক্রম করবে।
সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটারের মধ্যে সকালে ১২ দশমিক ৬৮ এবং সুরমা নদীর পয়েন্টে ১০ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার মধ্যে ৯ দশমিক ৩৮ সেন্টিমিটার উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে। একই অবস্থা এ দুই নদীর অন্যান্য পয়েন্টেও।
শুক্রবার সিলেটে ১৩৫ মিলিমিটার এবং এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ২২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ভারী বর্ষণে নগরীতে জলাবদ্ধতাও দেখা দিয়েছে।
এরআগে গতবছর সিলেটে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হয়। এতে তলিয়ে গিয়েছিলা সিলেটের ৭০ শতাংশ এলাকা। ক্ষতিগ্রস্থ হন জেলার প্রায় সব মানুষ। বন্যায় ভেঙে যায় প্রায় ১০ হাজার ঘরবাড়ি। গতবারের বন্যার ধকল এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি ক্ষতিগ্রস্তরা।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিলেট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৬ টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬ টা পর্যন্ত ১৩৫.৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আর সকাল ৬ টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৭৫ মিলিমিটার। এর আগে বুধবার সকাল ৬ টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬ টা পর্যন্ত ২৭১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।
সিলেটের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, আগামি ৪৮ ঘণ্টা সিলেটে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এ জন্য সবাইকে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে পাহাড়ি ঢল নামতে পারে।
এদিকে বর্ষণ ও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বন্যার আশঙ্কা থেকে বৃহস্পতিবার সিলেটের জেলা প্রশাসন জরুরি সভা করে আগাম বন্যার প্রাথমিক প্রস্তুতিও নিয়েছে। ত্রাণ ও আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান।
নদী বন্দর/এএম