দুই দশকের বেশি সময় ধরে বিএনপির সঙ্গে জোটে ছিল বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)। প্রয়াত মন্ত্রী নাজিউর রহমান মঞ্জুর পর দলের হাল ধরে ছেলে ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থও ছিলেন বিএনপির সঙ্গে। কিন্তু ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা এবং পরবর্তী সময়ে বিএনপির নির্বাচিতদের সংসদে যোগ নিয়ে বিরোধ শুরু হয়। এক পর্যায়ে ২০১৯ সালের মে মাসে বিএনপির সঙ্গে জোট থেকে বের হয়ে যান পার্থ। দীর্ঘদিন পর আবারও বিএনপির কাছাকাছি এলেন তরুণ এই রাজনীতিবিদ।
রোববার (২৭ এপ্রিল) ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকের ধারাবাহিকতায় বিজেপিও আমন্ত্রণ পায়। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে সদলবলে যোগ দেন আন্দালিব রহমান পার্থ।
বিকেল সাড়ে চারটায় শুরু হওয়া বৈঠকে ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থর নেতৃত্বে ১০ সদস্য প্রতিনিধি দল যোগ দেন। বাকিরা হলেন- মহাসচিব মতিন সাউদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মোস্তফা তামজিদ, ওয়াশিকুর রহমান, সালাউদ্দিন মতিন প্রকাশ, সোহেল আসিফ, এবিএম আজিজুল হক, অ্যাডভোকেট গোলাম রাব্বানী, ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুর রহমান, ফয়সাল তাহের।
বৈঠকে বিএনপি নেতাদের মধ্যে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ও লিয়াঁজো কমিটি প্রধান আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু।
ভোলার সংসদ সদস্য নাজিউর রহমান মঞ্জু জাতীয় পার্টি থেকে বেরিয়ে বিজেপি গঠনের পর ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটে যোগ দেন। মঞ্জুরের মৃত্যুর পর তার বড় ছেলে পার্থ দলের হাল ধরেন। সেই সময় থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গে জোটেই ছিল বিজেপি।
২০১২ সালে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের লক্ষ্যে চারদলীয় জোটের পরিসর বাড়িয়ে ১৮ দলীয় জোট গঠন করে বিএনপি। পরে আরও দুটি দল তাতে যোগ দিলে ২০ দল হয়। বিজেপি পুরোটি সময় বিএনপির সঙ্গেই ছিল।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি কামাল হোসেনের গণফোরামসহ আরও তিনটি দলকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর থেকে পুরনো জোটে টানাপড়েন শুরু হয়। তবে ২০ দলীয় জোট থেকে বিএনপির নতুন জোটকে আনুষ্ঠানিক সমর্থন দেওয়া হয়েছিল।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচন তারা একসঙ্গেই করেছিল, ঢাকার একটি আসনে পার্থ প্রার্থীও হয়েছিলেন ধানের শীষ প্রতীকে। ভোটের ফল প্রত্যাখ্যানেও এক ছিলেন তারা। জোট থেকে নির্বাচিতরা শপথ নেবেন না বলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু বিএনপি ও গণফোরাম থেকে নির্বাচিতরা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার পর জোটে আরও টানাপড়েন শুরু হয়। এক পর্যায়ে জোট ছাড়ার ঘোষণা দেন পার্থ। ওই সময় জোট ছাড়ার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অতিমাত্রায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টমুখী হয়ে গেছে (বিএনপি), ২০ দলীয় জোটের কর্মকাণ্ড শুধু সহমত, সংহতি ছাড়া তেমন কিছুই নয়। প্রহসন ও ভোট ডাকাতির নির্বাচনের পর বিএনপি যে সংসদে যাবে, এটা আমার দল শুধু নয়, জোটের কেউ জানে না। এসব কারণেই আমি জোট ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।’
তবে শেখ হাসিনার আত্মীয় (ফুফাতো বোনের ছেলে) আন্দালিব রহমান পার্থ জোট ছাড়লেও বরাবরই বিভিন্ন টক শোতে বিএনপির পক্ষে কথা বলেছেন। ২০২৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনেও তিনি যাননি। এমনকি জুলাই আন্দোলনে তিনি গ্রেফতারও হন। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর তিনি কারামুক্ত হন।
নদীবন্দর/ইপিটি