1. badsha.dru@gmail.com : admi2017 :
  2. nadibandar2020@gmail.com : Nadi Bandar : Nadi Bandar
মাগুরার সেই আলোচিত শিশু ধর্ষণ ও হত্যার রায় আজ - Nadibandar.com
শনিবার, ১৭ মে ২০২৫, ০৪:৩৮ পূর্বাহ্ন
নদীবন্দর,মাগুরা
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫
  • ২ বার পঠিত

মাগুরার আট বছরের শিশুর ধর্ষণ ও হত্যার আলোচিত মামলার বিচার কাজ অল্প সময়ের মধ্যে শেষ করে রায় দিতে যাচ্ছে আদালত।

এই ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায়ের জন্য শনিবার দিন রেখেছে আদালত। ঘটনার মাত্র দুই মাস ১১ দিনের মাথায় এই মামলার রায় হতে চলেছে।

৬ মার্চ মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার শিশুটি তার বোনের বাড়ি বেড়াতে এসে ধর্ষণের শিকার হয়। সাত দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ১৩ মার্চ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতারে মারা যায় শিশুটি।

১৩ এপ্রিল মাগুরার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আলাউদ্দিন।

মামলা চার আসামি হচ্ছেন- শিশুটির বড় বোনের শ্বশুর হিটু শেখ, মেয়ে জামাই সজীব শেখ, তার ভাই রাতুল শেখ ও তাদের মা জাহেদা বেগম। তারা কারাগারে আছেন।

হিটু শেখ ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে তিনি মামলার সাক্ষ্য চলাকালে একাধিক দিন সাংবাদিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, তিনি এর সঙ্গে জড়িত নন।

মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মনিরুল ইসলাম মুকুল বলেন, “ধর্ষণের কারণে যে শিশুটি মারা গেছে তা রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে পেরেছে। আমরা আশাবাদী, আদালত ন্যায়বিচার করবে। হিটু শেখের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। অন্যদেরও যার যার অপরাধ অনুযায়ী সাজা হবে।”

জেলা পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদা বলেন, “আলোচিত এই মামলায় রায় ঘোষণা উপলক্ষে আদালত চত্বর ও এর আশপাশে শনিবার সকাল থেকে অতিরিক্ত পুলিশ পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে।”

ধর্ষণ ও হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে প্রধান আসামি হিটু শেখের যে ‘বিভৎসতার’ বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, তাতে তার ‘বিকৃত ও পৈশাচিক মানসিকতাই’ প্রকাশ পেয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মন্তব্য করেছেন।

আট বছরের শিশুটিকে যৌন নিপীড়ন করতে গিয়ে প্রধান আসামি ধারালো ব্লেড ব্যবহার করেছেন- অভিযোগপত্রের এমন বিবরণ শুনে একজন নারীনেত্রী মন্তব্য করেছেন, “এটা শুধু একজন বিকৃত, পৈশাচিক আর জানোয়ারের পক্ষেই সম্ভব। একটা নিষ্পাপ শিশুর সঙ্গে এটা কল্পনাতীত পশুত্বের আচরণ করা হয়েছে।”

বাড়িতে একা পেয়ে শিশুটিকে তিনি ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের পরেও তিনি স্বাভাবিক ছিলেন। খাওয়া-দাওয়া করেছেন এবং মাঠে গিয়ে কাজে যোগ দিয়েছেন।

মামলায় হিটু শেখের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আইনের ৯ এর ২ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

এই ধারায় বলা হয়েছে- “যদি কোন ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষণ বা উক্ত ধর্ষণ পরবর্তী তাহার অন্যবিধ কার্যকলাপের ফলে [ধর্ষণের শিকার] নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত [অনধিক বিশ লক্ষ টাকা] অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন।

শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়েছে এটা বুঝতে পেরে ঘটনা ধামাচাপা দিতে ও স্বামীকে বাঁচাতে ‘জ্বীনে আঁছড় করেছে বলে সুকৌশলে’ প্রথমেই হাসপাতালে না নিয়ে ঝাঁড়ফুঁক করানোর জন্য এক হুজুরের কাছে নিয়ে যান প্রধান আসামি হিটু শেখের স্ত্রী জাহেদা বেগম।

কিন্তু সদর উপজেলার নিজনান্দুয়ালি মদিনাতুল উলুম পৌর গোরস্থান মাদ্রাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের হুজুর শিশুটির গলার কালচে দাগ ও বুকে আঁচড়ের চিহ্ন দেখে বলেন, “এটি ঝাঁড়-ফুঁকের কাজ না। আপনারা দ্রুত বাচ্চাটাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।”

তারপরই শিশুটিকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট মাগুরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও শিশুটির বড় বোনের শাশুড়ি জাহেদা বেগম (৩৮) চিকিৎসক ও নার্সদের বিভ্রান্ত করেন। ঘটনার প্রকৃত তথ্য না দিয়ে তিনি বলেন, পেটের ব্যাথা নিয়ে শিশুটি মাটিতে গড়াগাড়ি দিয়েছে। এবং হাসপাতালে ভর্তি না করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি নিয়ে যেতে চান।

অভিযোগপত্রে জাহেদা বেগমের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২০১ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

যারা অপরাধীকে বাঁচানোর চেষ্টা করে, সত্য গোপন করে এবং আলামত নষ্ট করে তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২০১ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।

এ ছাড়া হিটু শেখ ও জাহেদা বেগমের দুই ছেলে সজীব শেখ ও রাতুল শেখের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি আইনের ৫০৪ অনুযায়ী অভিযোগ আনা হয়েছে।

আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি

শিশুটির মা শুক্রবার দুপুরে শ্রীপুরের গ্রামের বাড়িতে গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি তার মেয়ের ধর্ষণ ও হত্যার রায় শুনতে শনিবার আদালতে যাবেন। তিনি আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আশা করছেন।

তিনি বলছিলেন, “আমার মেয়ের মত কাউকে যেন জীবন দিতে না হয়।”

জেলা মহিলা পরিষদের সভানেত্রী কাজী লাবনী জামান এই মামলার ন্যায়বিচার চেয়েছেন।

তিনি বলেন, “সারাদেশে নারীরা ধর্ষণসহ নানা ধরনের যৌন নিপীড়ণের শিকার হচ্ছেন। অধিকাংশ নারীই বিচার পাচ্ছেন না। এর মধ্যে এত অল্প সময়ে মাগুরার আট বছরের শিশুটির ধর্ষণ ও হত্যার বিচারকাজ শেষ হওয়ায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।”

রায়ে শিশুটির পরিবার ন্যায়বিচার পাবে এমন প্রত্যাশা রেখে তিনি এজন্য সরকারের আইন বিভাগকে ধন্যবাদ জানান।

জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহেদ হাসান টগর বলেন, “ধর্ষণের পর আইনজীবী সমিতি সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, কোনো আইনজীবী এ মামলায় আসামিপক্ষকে আইনি সহায়তা দেবে না। আমরা এখন এই মামলার ন্যায়বিচার চাই। যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন বিভৎস্য ঘটনা ঘটাতে না পারে।”

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন মাগুরা জেলার সাধারণ সম্পাদক খান শরাফত হোসেন বলেন, “আমরা এই ধর্ষণ-হত্যার ঘটনায় সর্ব্বোচ শাস্তি চাই। যাতে রায়ের মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়।”

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও মাগুরা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আলাউদ্দিন বলেন, “এত অল্প সময়ের মধ্যে আলোচিত এ মামলার তদন্ত শেষ করে রায় ঘোষণা একটি বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”

নদীবন্দর/জেএস

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 Nadibandar.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com