জুলাই জাতীয় সনদের সমন্বিত খসড়ায় আবারও সংশোধনী আনতে যাচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল খসড়া নিয়ে যে আপত্তি ও পরামর্শ দিয়েছে, সেগুলো পর্যালোচনা করে নতুন করে কিছু পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। কমিশন বলছে, সনদের চূড়ান্ত রূপে যেন দলগুলোর মতামতের প্রতিফলন ঘটে, সেজন্য এই সংশোধন আনা হচ্ছে।
গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে কমিশনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। আজ বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) এ বিষয়ে আরও একটি বৈঠক করার কথা রয়েছে। এরপর চূড়ান্ত খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে উপস্থাপন করা হবে। আগামী সপ্তাহ থেকেই দলগুলোর সঙ্গে সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে সরাসরি আলোচনায় বসার প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশন।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। গঠিত হয় ছয়টি সংস্কার কমিশন। এসব কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত এই আলোচনায় যে সংস্কার প্রস্তাবগুলোতে একমত হওয়া গেছে, সেগুলোকেই ভিত্তি করে তৈরি হচ্ছে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’।
তবে সনদে উল্লেখ থাকা অঙ্গীকারনামা ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। গত ২৯ জুলাই কমিশন ৩০টি রাজনৈতিক দলকে একটি প্রাথমিক খসড়া দেয়। পরে তাদের মতামতের ভিত্তিতে ১৬ আগস্ট দেওয়া হয় সমন্বিত খসড়া। এ পর্যন্ত ২৯টি দল তাদের মতামত দিয়েছে। এই খসড়ায় তিনটি ভাগ রয়েছে—সনদের পটভূমি, ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব এবং বাস্তবায়নের জন্য ৮টি অঙ্গীকারনামা।
মূল আপত্তিগুলো এসেছে তৃতীয় ভাগ অর্থাৎ অঙ্গীকারনামা ঘিরে। বিএনপি মনে করে, খসড়ায় সনদকে সংবিধানের ঊর্ধ্বে রাখার প্রস্তাব এবং আদালতে এটি চ্যালেঞ্জ করা যাবে না, এমন শর্ত যুক্তিসংগত নয়। জামায়াতে ইসলামীর মতে, এই ধরনের বিধান থাকা জরুরি। বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়েও দলগুলোর মতভেদ রয়েছে।
বিএনপি চায়, আইন সংশোধনের মতো বিষয়গুলো অন্তর্বর্তী সরকারের অধ্যাদেশের মাধ্যমে, আর সংবিধান সংশোধনের মতো বিষয়গুলো আগামী সংসদে বাস্তবায়ন হোক। জামায়াত চায়, রাষ্ট্রপতির ঘোষণার মাধ্যমে সনদ কার্যকর হোক। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) চায়, গণপরিষদ গঠন করে এবং সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে একযোগে সেই নির্বাচনের মাধ্যমে সংস্কার কার্যকর হোক।
সনদের বাস্তবায়ন নিয়ে কমিশনের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন সময় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সেখানে গণভোট, রাষ্ট্রপতির প্রোক্লেমেশন, আইন কাঠামো তৈরিসহ একাধিক বিকল্প প্রস্তাব এসেছে। গতকালের বৈঠকে দলগুলোর দেওয়া মতামত এবং বিশেষ করে অঙ্গীকারনামা অংশে যেসব আপত্তি এসেছে, তা নিয়ে আলোচনা হয়। কমিশন সূত্রে জানা গেছে, খসড়ার ভাষাগত দিকেও কিছু পরিবর্তন আনা হতে পারে।
বৈঠক শেষে কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে। আইনি ও সাংবিধানিক দিক মাথায় রেখেই কিছু সংশোধনী আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সভায় রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত বিশ্লেষণ করে সেগুলোর প্রতিফলন কীভাবে খসড়ায় ঘটানো যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একই সঙ্গে বাস্তবায়নের আইনি কাঠামো এবং সরকারের সামনে থাকা সম্ভাব্য বিকল্পগুলো নিয়েও কথা হয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি আলী রীয়াজ, সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
নদীবন্দর/ইপিটি