1. badsha.dru@gmail.com : admi2017 :
  2. nadibandar2020@gmail.com : Nadi Bandar : Nadi Bandar
ভুল হলেই বলুন ‘ক্ষমা করে দিন!’ - Nadibandar.com
বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:১১ পূর্বাহ্ন
নদী বন্দর প্রতিনিধি:
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১০ মার্চ, ২০২১
  • ১৩৫ বার পঠিত

সমাজ জীবনে বাসা-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কিংবা চাকরি স্থলে ইচ্ছা-অনিচ্ছায়, তুচ্ছ-বড় ঘটনাকে কেন্দ্র করে মানুষ ভুল করে থাকে। এসব ভুলে তাৎক্ষণিক করণীয় কী?

হ্যাঁ, কোনো কারণে ভুলে হয়ে গেলে প্রথমেই অনুতপ্ত হয়ে বলুন- ক্ষমা করে দিন!

ইসলামের সোনালী যুগের ছোট্ট একটি ঘটনাই এর অনন্য প্রমাণ। যা ঘটেছিল বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দুই প্রিয় সাহাবি হজরত আবু জর ও হজরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুমার মধ্যে। চমৎকার এ ঘটনায় ওঠে এসেছে ক্ষমা চাওয়ার অনন্য দৃষ্টান্ত। তাহলো-

প্রায় দেড় হাজার বছর আগের কথা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামর দুই প্রিয় সাহাবির ঘটনা। একজন হজরত আবু জর রাদিয়াল্লাহু আনহ। আর অন্যজন হজরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু। একজন গোত্রের প্রধান। আর অন্যজন হাবশি ক্রীতদাস। ইসলাম গ্রহণে তারা ভুলে গেছেন তাদের বংশ গৌরব ও পরিচয়। ইসলামের কল্যাণে একে অপরের ভাই, মুসলিম ভাই হিসেবেই সহাবস্থান করে তারা।

কোনো একটি বিষয় নিয়ে তাদের মাঝে তর্ক-বি তর্ক হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবি হলেও তারা তো মাটিরই মানুষ। তারাও তো মানবীয় দুর্বলতার উর্ধে ছিলেন না। তাই রাগের বশে হজরত আবু জর রাদিয়াল্লাহু আনহু একপর্যায়ে হজরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে অশালীন শব্দ বলে বসলেন। বললেন- ‘ওহে! কালো ঘরের সন্তান…!’

হজরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু এ কথা শুনে মনে কষ্ট নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিষয়টি জানালেন। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম আবু জর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ডাকলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন- ‘হে আবু জর! তুমি কি তাকে গালি দিয়েছ?’

হজরত আবু জর রাদিয়াল্লাহু আনহু কোনো কিছু গোপন করার চেষ্টা না করেই অকপটে স্বীকার করলেন। বললেন- হ্যাঁ।

প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবারও জিজ্ঞাসা করলেন- ‘তুমি কি তার মায়ের কথা উল্লেখ করে গালি দিয়েছ …?’

এবারও হজরত আবু জর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর দোষ স্বীকার করে মাথা পেতে নিয়ে সরল স্বীকারোক্তি দিলেন- ‘হে আল্লাহর রাসুল! কেউ কাউকে গালি দিলে তো বাবা-মায়ের নাম নিয়েই গালি দেয়!’

এবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বললেন- ‘হে আবু জর! এখনও তো তোমার মাঝে জাহেলি যুগের প্রভাব রয়ে গেছে।’

প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ছোট্ট এ আফসোস! হজরত আবু জর রাদিয়াল্লাহু আনহু হৃদয়ে অনেক বড় ধাক্কা দেয়। তার চেহারা বিবর্ণ হয়ে যায়। তিনি বার্ধক্যের বয়সে উপনীত। তিনি আফসোস করছেন আর নিজেকে প্রশ্ন করে বলছেন- হায়! এ বার্ধক্যেও আমার মাঝে জাহেলিয়াত রয়ে গেছে?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- ‘হ্যাঁ’, হে আবু জর! তোমার মাঝে জাহেলিয়াত রয়েগেছে।’

হজরত আবু জর রাদিয়াল্লাহু আনহু অনুতপ্ত হয়ে ভাবছেন- জীবনের এত দীর্ঘ সময় ইসলামের ছায়ায় কাটানোর পরও সেই নিন্দিত জাহেলিয়াত আমার মাঝে রয়ে গেল! এ ঘটনায় তিনি খুবই অনুতপ্ত। অনুতাপের ভার মাথায় নিয়ে বসে আছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে।

এবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত আবু জর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে উপদেশ দিলেন- কীভাবে অধীনস্থ ও অপেক্ষাকৃত ছোটদের সঙ্গে আচার-আচরণ করতে হয়। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোমল ভাষায় বললেন-
‘শোন! অধীনস্থরা তোমাদের ভাই, আল্লাহ তাআলাই তাদেরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন। অধীনস্থ সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে। তুমি যা খাবে তাকেও তা খাওয়াবে। তুমি যে মানের কাপড় পরকে. তাকেও সে মানের কাপড় পরাবে। সাধ্যের বেশি কাজের তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেবে না। কাজ করতে তাদের কষ্ট হলে নিজে তাকে সহায়তা করবে।’

অনুতপ্ত আবু জর রাদিয়াল্লাহু আনহু উপদেশ শুনে তার হৃদয় বিগলিত হয়ে যায়। তিনি নিজের ভুল বুঝতে পারলেন। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গেলেন হজরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে।

তার কাছে অনুতপ্ত হলেন। নিজের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে নতজানু হয়ে হজরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুর সামনে মাটিতে বসে পড়লেন। ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। বললেন- আমাকে ক্ষমা করে দিন!

হজরত আবু জর রাদিয়াল্লাহু আনহু নত হতে হতে নিজের চেহারা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিলেন। যেন মাটির ভেতর ঢুকে যেতে চাইছেন। হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ মুসলিমে তার অনুতপ্ত হৃদয়ের হৃদয় বিগলিত কথা এভাবে ওঠে এসেছে-
‘অনুতপ্ত অবনত হজরত আবু জর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে বেলাল! আপনার পা দিয়ে আমার মুখ মাড়িয়ে দিন! আপনার পদধূলি আমার চেহারায় লাগিয়ে দিন! (মুসলিম)

সাহাবায়ে কেরামের ভুল হয়ে গেলে এ ছিল ক্ষমা চাওয়ার নমুনা। ভুলে হলে তারা দেরি করতেন না। যত দ্রুত সম্ভব তা সমাধান করার চেষ্টা করতেন।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, সাহাবায়ে কেরামের জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। কোনো কারণে ভুল হয়ে গেলে, দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়া। আর তাতেই ব্যক্তি পরিবার ও সমাজ জীবনে আসবে শান্তি আর প্রশান্তি।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সাহাবায়ে কেরামের অনুসরণ ও অনুকরণে ক্ষমা চাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

নদী বন্দর / এমকে

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 Nadibandar.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com