মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পশ্চিমে এবং রাজনগর উপজেরার পূর্বদিকে রয়েছে বিশাল পাহাড়ি জনপদ। চা বাগান আর সংরক্ষিত বনাঞ্চলের টিলা কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর কিংবা উপজেলা প্রশাসন নামকাওয়াস্তে জরিমানা করেই তাদের দায়িত্ব শেষ করে।
কুলাউড়া উপজেলার পশ্চিমে অবস্থিত ব্রাহ্মণবাজার, বরমচাল ও ভাটেরা ইউনিয়ন এবং রাজনগর উপজেলার টেংরা ও মুন্সীবাজার ইউনিয়ন নিয়ে বিশাল পাহাড়ি জনপদ।
যেখানে ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা, চা বাগান ছাড়াও রয়েছে সরকারের সংরক্ষিত বনাঞ্চল। এর বেশির ভাগ জায়গা জবরদখল হয়ে গেছে। যার সিংহভাগ খাসিয়া গারো এবং কিছুটা বাঙালিদের দখলে। জবরদখলীয় পাহাড়ি টিলায় গড়ে উঠছে জনবসতি। এই জনবসতি গড়তেই অবাধে কাটা হচ্ছে পাহাড়-টিলা।
সরেজমিন কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ও রাজনগর উপজেলার মুন্সিবাজার ইউনিয়নের পাহাড়ি জনপদ ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন টিলা থেকে ট্রাকযোগে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। আবার অনেক স্থানে বাড়ি বানাতে জবরদখলকারীরা বিনা টাকায় মাটি দিচ্ছেন। শুধু ট্রাক ভাড়ায় মাটি নিয়ে নিম্নাঞ্চলের মানুষ তাদের ভিটেমাটি উঁচু করছেন।
কুলাউড়া উপজেলার হলিছড়া চা বাগানে টিলা কেটে রাস্তা নির্মাণ ও চা লাগানোর জন্য মেশিন দিয়ে টিলা কাটার অপরাধে পরিবেশ অধিদপ্তর জরিমানা করে।
ফেব্রুয়ারি মাসে কুলাউড়া উপজেলার বাহ্মণবাজার ইউনিয়নের সিরাজনগর চা বাগান সংলগ্ন এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে টিলা কাটার অপরাধে ৩ ব্যক্তিকে ৫০ হাজার টাকা করে সর্বমোট ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
এরা হচ্ছেন ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের নবীনগর গ্রামের আজিজুল ইসলাম, পশ্চিম জালালাবাদ গ্রামের আলিম উদ্দিন ও মির্জাপুর গ্রামের রুহেল মিয়া। কিন্তু তারপরও থেমে নেই মাটি কাটা। জরিমানার টাকা পুষিয়ে নিতে ওই চক্রটি যেন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজনগর ইউনিয়নের ইটা চা বাগান সংলগ্ন চেয়ারম্যানের টিলা থেকে প্রতিদিন অবাধে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। এই টিলার মালিক মুন্সিবাজার ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান।
এলাকার প্রভাবশালী লোক এবং নিজের টিলা থেকে মাটি বিক্রি করছেন বলে স্থানীয়দের প্রতিবাদ করারও কোনো সুযোগ নেই।
এদিকে কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের পশ্চিম জালালাবাদ, নবীনগর ও মির্জাপুর এবং সিরাজনগর চা বাগানের পার্শ্ববর্তী বরমচাল ইউনিয়নের পশ্চিম সিংগুর থেকে প্রতিদিন সকাল-বিকালে ট্রাকযোগে একটি সংঘবদ্ধ চক্র মাটি বিক্রি করে থাকে। ওই চক্রটি এলাকায় সন্ত্রাসী হিসাবে পরিচিত হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করার সুযোগ পায় না।
মাটি কাটা প্রসঙ্গে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী জানান, মাটি কাটার মুহূর্তে খবর পেলে অভিযান চালিয়ে জেল-জরিমানা করা যায়।
অনেক সময় খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যেতে যেতে মাটি নিয়ে ট্রাক পালিয়ে যায়। তারপরও প্রশাসন খবর পেলেই ঘটনাস্থলে গিয়ে টিলাকাটা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।
নদী বন্দর / জিকে