যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের অনেক দেশের ওপর নতুন করে যেসব শুল্ক বসিয়েছেন, যা আজ (০৭ আগস্ট) থেকে কার্যকর হয়েছে। এতে ট্রাম্পের নেতৃত্বে চলা বাণিজ্যযুদ্ধ আরও তীব্র হলো।
বৃহস্পতিবার (০৭ আগস্ট) মধ্যরাতে নিজস্ব সামাজিক মাধ্যম ট্রুর্থ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘এখন মধ্যরাত! বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের শুল্ক আমেরিকায় ঢুকছে!’
সবশেষ আলোচনার পর বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপিত বাড়তি শুল্কের হার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে আগে থেকে বাংলাদেশের পণ্যে গড়ে ১৬.৫ শতাংশ মার্কিন শুল্ক ছিল, ফলে এখন মোট শুল্কহার দাঁড়াবে ৩৬.৫ শতাংশে।
এদিকে বুধবার রাতে ট্রাম্প ভারতের ওপর শুল্ক আরও বাড়িয়ে মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। কারণ তিনি চান বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম জ্বালানি আমদানিকারক দেশটি রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করুক।
ভারত এই সিদ্ধান্তকে ‘অন্যায়, অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন” বলে জানিয়েছে। তবে ভারতের ওপর এই শুল্ক ২৭শে অগাস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
ট্রাম্প আরও বলেন, যদি প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো যুক্তরাষ্ট্রয় বিনিয়োগ না করে তাহলে বিদেশে তৈরি কম্পিউটার চিপের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে।
এরপরই প্রযুক্তি জায়্যান্ট অ্যাপল ঘোষণা দেয় তারা যুক্তরাষ্ট্রে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ করবে।
এর আগে ট্রাম্প প্রশাসন নতুন করে আমদানি পণ্যের তালিকা তৈরি করে এবং দেশগুলোকে চুক্তি করার সময় দেয় ৭ আগস্ট পর্যন্ত। এরপর থেকেই অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে চুক্তি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, যাতে শুল্ক কমানো বা বাদ দেওয়া যায়। ট্রাম্প মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রকে বাকি দুনিয়া ঠিকমতো বাণিজ্যের সুযোগ দেয় না।
এদিকে ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপের কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ যেমন লাওস ও মিয়ানমার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব দেশের সঙ্গে চীনের ভালো ব্যবসায়িক সম্পর্ক আছে, ট্রাম্প সেসব দেশকেই টার্গেট করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাজ্য, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো কিছু বড় দেশ আগেই যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে চুক্তি করে শুল্ক কমিয়ে নিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও একটি চুক্তি করেছে, যেখানে তারা ১৫ শতাংশ শুল্ক মেনে নিয়েছে।
তাইওয়ানের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছে, তবে তাদের প্রেসিডেন্ট বলেছেন এটা অস্থায়ী এবং আলোচনাও চলছে।
কানাডার ওপর শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশ করা হয়েছে, কারণ ট্রাম্প বলছেন, তারা মাদক পাচার ঠেকাতে সাহায্য করছে না। তবে কানাডার বেশিরভাগ পণ্য আগের এক চুক্তির কারণে এই শুল্কের বাইরে থাকবে। মেক্সিকোর ওপর বাড়তি শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে, আলোচনা চলছে।
বুধবার ট্রাম্প বলেন, বিদেশে তৈরি সেমিকন্ডাক্টরের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে। তবে যেসব কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রয় অনেক বিনিয়োগ করেছে, যেমন- টিএসএমসি, স্যামসাং, এসকে হাইনিক্স তারা এই শুল্ক থেকে রেহাই পাবে।
ব্রাজিলের ওপরও ৫০ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছে। ট্রাম্প বলছেন, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রর প্রযুক্তি কোম্পানিকে অন্যায়ভাবে আক্রমণ করছেন এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট বলসোনারোর বিরুদ্ধে মামলা চালানোকে উইচ হান্ট বলছেন।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে বসে আলোচনা করছে যাতে ১২ই অগাস্ট শেষ হতে যাওয়া ৯০ দিনের শুল্ক বিরতির সময়সীমা বাড়ানো যায়।
সূত্র: বিবিসি
নদীবন্দর/এএস