করোনা সংক্রমণ রোধে চলমান বিধি-নিষেধের মধ্যে দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ থাকায় উবার-পাঠাও চালিত প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। অভিযোগ রয়েছে, গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে দালালদের সহযোগিতায় যাত্রী তুলে গাড়ি চালকরা পাটুরিয়া ঘাটে নিয়ে নামিয়ে দিচ্ছেন।
রোববার (১১ এপ্রিল) গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে সরেজমিনে দেখা গেছে, আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে সারাদেশে কঠোর লকডাউনের ঘোষণা আশায় ঢাকায় অবস্থানরত বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ গ্রামের বাড়ি যেতে সকাল-সকাল গাবতলি বাসস্ট্যান্ডে এসে অপেক্ষা করছেন। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় উবার-পাঠাও চালিত মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেলে চড়ে তারা পাটুরিয়া ঘাটে যাচ্ছেন। সেখান থেকে লোকাল বাসে চড়ে ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছেন। মাইক্রো ও প্রাইভেট কারে যাত্রী তোলার সময় মাঝে মাঝে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের বাধা দিতে দেখা গেছে। পুলিশ সরে গেলে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে জটলা করে দালালদের মাধ্যমে যাত্রী তুলতে দেখা গেছে।
উবার চালক ওয়াহেদের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, তার প্রাইভেট কারে সামনে একজন ও পেছনে চারজন নিয়ে তিনি পাটুরিয়া ঘাটে নামিয়ে দিচ্ছেন। মাথাপিছু ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা ভাড়া আদায় করছেন। যেসব দালালের মাধ্যমে যাত্রী তোলা হচ্ছে এজন্য তাদের ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে দিতে হচ্ছে।
ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাসের চালক নাজমুল হক জানান, সাত জন করে যাত্রী নিয়ে তিনি সদরঘাটে নামিয়ে দিচ্ছেন, এজন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫০০ টাকা ভাড়া নেয়া হচ্ছে। প্রতিবার ১০ জন করে যাত্রী নিয়ে প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার করে যাচ্ছেন। রাস্তায় পুলিশ ধরলে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা দিলে ছেড়ে দিচ্ছে বলেও জানান তিনি।
গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষারত মোটরসাইকেল চালক তোফায়েল জানান, গাবতলী থেকে পাটুরিয়া ঘাটে একজন বা দুইজন করে যাত্রী নিয়ে যান। ভাড়া বাবদ মাথাপিছু ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
পড়ালেখা শেষ করে চাকরির জন্য চেষ্টা করছেন শিবু চন্দ্র রায়। ঢাকায় একটি ম্যাচে কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে বসবাস করেন। সামনে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হতে পারে- এমন সংবাদে বন্ধুদের নিয়ে রংপুর গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য সকালে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে এসে অপেক্ষা করছেন। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় ভিন্ন পন্থায় যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘মেসে থাকি, লকডাউনের মধ্যে কিছু করার নাই, তাই বাড়ি যাওয়ার জন্য সকালে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে এসেছি। বাস না পেয়ে মাইক্রো ভাড়া করে বন্ধুরা মিলে যাওয়ার চেষ্টা করছি। ভাড়া অনেক বেশি চাওয়ায় সিদ্ধান্তহীনতায় আছি।’
ঢাকায় রাজমিস্ত্রির কাজে এসেছিলেন রাজশাহীর হৃদয়। কাজ শেষ হয়ে যাওয়ায় রাজশাহী যাওয়ার জন্য রোববার ভোরে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে এসে অপেক্ষায করছেন। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় সদরঘাট হয়ে রাজশাহী যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ভাড়া বেশি হওয়ায় দুই ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে গাবতলীতে কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট ওবায়দুর বলেন, ‘দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমরা এক জায়গায় স্থির থাকতে পারি না। এই সুযোগে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল চালকরা যাত্রী নিয়ে যাচ্ছেন। এরপরও আমরা যাদের ধরতে পারছি, তাদের মামলা-জরিমানা করছি। এ ছাড়াও আমরা এ ব্যাপারে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।’
নদী বন্দর / জিকে