ঢাকাই সিনেমার সোনালী দিনের সুপারস্টার অভিনেতা ওয়াসিম আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় শনিবার (১৭ এপ্রিল) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ওয়াসিমকে মৃত ঘোষণা করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
হাসপাতালের চিকিৎসক জয়ন্ত নারায়ণ শর্মা আচার্য বলেন, ১২টা ৪০মিনিটে জরুরি বিভাগে আনা হলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। হাসপাতালে তার নাম লেখা হয় মেজবাহউদ্দিন আহমেদ ওয়াসিম।
তিনি জানান, চিত্রনায়ক ওয়াসিম বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছিলেন।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান সম্প্রতি তার গুরুতর অসুস্থ হওয়ার খবর জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। তিনি ফেসবুকে লেখেন, ‘রাজকীয় ছবি মানেই ওয়াসিম ভাই। অনেক ছবি সুপারহিট দিয়েছেন তিনি। কিছুদিন ধরে অনেক অসুস্থ, হাঁটতে পারছেন না। বিছানাতে শুয়েই কাটছে সময়। সবার কাছে দোয়া চাচ্ছি ওয়াসিম ভাইয়ের জন্য।’
এক সময় বাণিজ্যিক-অ্যাকশনের পাশাপাশি ফোক-ফ্যান্টাসি সিনেমার এক নম্বর আসনটি দখলে ছিল ওয়াসিমের। ১৯৭২ সালে ঢাকাই সিনেমাতে ওয়াসিমের অভিষেক হয় সহকারী পরিচালক হিসেবে ‘ছন্দ হারিয়ে গেলো’র মাধ্যমে। আর নায়ক হিসেবে তার যাত্রা শুরু হয় মহসিন পরিচালিত ‘রাতের পর দিন’ সিনেমার মাধ্যমে। দিন যতই যেতে থাকে ওয়াসিমের জনপ্রিয়তা ততই আকাশচুম্বী হয়। এক সময় বাণিজ্যিক ঘরানার সিনেমায় অপরিহার্য নায়ক হয়ে উঠেছিলেন তিনি।
এদিকে, নায়িকা কবরীর মৃত্যুর শোক না কাটতেই ওয়াসিমের চলে যাওয়া বাকরুদ্ধ করে দিয়েছে চলচ্চিত্রাঙ্গনকে।
মোহসিন পরিচালিত ‘রাতের পর দিন’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে প্রথম নায়ক হিসেবে রূপালী পর্দায় আসেন নায়ক ওয়াসিম। সিনেমাটি ব্যবসাসফল হয়। এরপর ১৯৭৬ সালে মুক্তি পাওয়া এস এম শফী পরিচালিত ‘দি রেইন’ সিনেমা তাকে পরিচিতি এনে দেয়।
১৯৭৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত চলচ্চিত্রে শীর্ষ নায়কদের একজন ছিলেন তিনি। ফোক ফ্যান্টাসি আর অ্যাকশন ছবির অপ্রতিদ্বন্দ্বী অভিনেতা ছিলেন ওয়াসিম।
অভিনয় জীবনে ১৫২টির মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি।
তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হলো- ‘দ্য রেইন’, ‘ডাকু মনসুর’, ‘জিঘাংসা’, ‘কে আসল কে নকল’, ‘বাহাদুর’, ‘দোস্ত দুশমন’, ‘মানসী’, ‘দুই রাজকুমার’, ‘সওদাগর’, ‘নরম গরম’, ‘ইমান’, ‘রাতের পর দিন’, ‘আসামি হাজির’, ‘মিস লোলিতা’, ‘রাজ দুলারী’, ‘চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা’, ‘লুটেরা’, ‘লাল মেম সাহেব’, ‘বেদ্বীন’, ‘জীবন সাথী’, ‘রাজনন্দিনী’, ‘রাজমহল’, ‘বিনি সুতার মালা’, ‘বানজারান’।
বেশিরভাগ ছবিতেই তিনি খ্যাতিমান অভিনেত্রী অলিভিয়া, অঞ্জু ঘোষ ও শাবানার বিপরীতে অভিনয় করেছেন।
নদী বন্দর / জিকে