উত্তরের সীমান্তঘেঁষা জেলা কুড়িগ্রামে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ চলমান রয়েছে। হাড় কাঁপানো ঠান্ডাতে চরম বিপাকে পড়েছে শিশু ও বয়স্করা। তীব্র ঠান্ডা ও হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দিনমজুর, খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষ।
কুড়িগ্রামে শনিবার থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ চলমান রয়েছে। গতকালের তাপমাত্রা ৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে আজ রোববার কুড়িগ্রামের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রাজারহাট আবহাওয়া অফিস।
কুয়াশার চাদর ভেদ কর দেরিতে সূর্যের দেখা মিললেও তীব্র ঠান্ডার কারণে ব্যাহত হচ্ছে জনজীবন। অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে শিশু ও বয়স্কদের বিভিন্ন শীতজনিত রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাসপাতালেও শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
হিমেল হাওয়া আর কনকনে শীত ও ঘন কুয়াশায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ। বন্যায় বসতবাড়ীহারা কয়েক হাজার মানুষ রয়েছেন নিদারুণ শীত কষ্টে। অসহায় জীবন যাপন করছেন খোলা আকাশের নিচে বসবাসকারী মানুষজন। শীত বস্ত্রের অভাবে ভোগান্তিতে রয়েছেন জেলার সাড়ে চার শতাধিক চরাঞ্চলের মানুষ।
চলমান শৈত্যপ্রবাহে শ্রমজীবী মানুষদের দুর্দশা বেড়েছে। কনকনে ঠান্ডার কারণে ঘরের বাইরে বের হতে পারছেন না তারা। একটু উষ্ণতা পাওয়ার আশায় গ্রামাঞ্চলের শীতবস্ত্রহীন মানুষজন তাকিয়ে থাকছেন সূর্যের আলোর দিকে। ঠান্ডার তীব্রতার কারণে হাট-বাজারে লোকের সমাগম অনেকটাই কম দেখা যাচ্ছে।
এদিকে ধুম পড়েছে লেপ-তোষক তৈরির। নতুন শীতবস্ত্র কিনতে না পারা হতদরিদ্র মানুষগুলো ফুটপাতের দোকানগুলোতে পুরাতন কাপড় কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন।
শীতের প্রকোপ থেকে রেহাই পেতে জেলার সাড়ে চার শতাধিক চরাঞ্চলের হতদরিদ্র মানুষ এখন সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করছেন।
চরযাত্রাপুর এলাকার ঘোড়ার গাড়ি চালক আবুল হোসেন জানান, তীব্র ঠান্ডার কারণে আমরা চরের মানুষ ঘর হতে বের হতে পারছি না। আমরা গরম কাপড় গায়ে দিয়ে বের হলেও ঘোড়াগুলোর কী হবে? ঠান্ডায় ঘোড়ার অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই রোদের দেখা মিললে ঘোড়ার গাড়ি বের করব।
বল্লভেরখাস ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আকমল হোসেন জানান, আমার ইউনিয়নটি একটি দ্বীপ ইউনিয়ন। এর চারদিক নদ-নদীবেষ্টিত। নদ-নদী অববাহিকার মানুষজন শীতবস্ত্রের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। মাত্র ৪৫০টি কম্বল পেয়েছি সরকারিভাবে। যা ইউনিয়নের সব থেকে অসহায় মানুষগুলোর মাঝে বিতরণ করেছি।
এই ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ খেটে-খাওয়া ও নিম্ন আয়ের হওয়ায় শীতবস্ত্র কেনার সামর্থ্য নেই। সকলেই তাকিয়ে থাকে সরকারি ও বেসরকারি সহায়তার দিকে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, হাসপাতালে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা এখনও খুব বেশি না। তবে শীতজনিত রোগীদের জন্য উপজেলা মেডিকেল টিম, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ অনান্য মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে।
রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, রোববার (২০ ডিসেম্বর) কুড়িগ্রামের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়ে আজও তা চলমান রয়েছে। এই মাসে আরও একটি শৈত্য প্রবাহ হতে পারে। এই শীত ফেব্রুয়ারি কিংবা মার্চে গিয়ে শেষ হতে পারে।
নদী বন্দর / পিকে