মৌসুমের প্রথম সুপার ওভার দেখল ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) ক্রিকেট। সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ও দিল্লি ক্যাপিট্যালসের মধ্যকার নির্ধারিত ২০ ওভারের জমজমাট লড়াই টাইয়ে শেষ হলে খেলা গড়ায় সুপার ওভারে। যেখানে শেষ বলে ম্যাচ জিতে নিয়েছে দিল্লি।
মূল ম্যাচে আগে ব্যাট করে ১৫৯ রানের সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছিল দিল্লি। চেন্নাইয়ের মাঠে যা এবারের আসরে জয়ের জন্য যথেষ্ট প্রমাণিত হচ্ছে। কিন্তু কেন উইলিয়ামসনের লড়াকু ইনিংসে জয় পায়নি দিল্লি। তবে হারেওনি তারা। শেষ পর্যন্ত ১৫৯ রানেই থামে হায়দরাবাদেরও ইনিংস। ফলে ম্যাচ হয় টাই।
খেলা সুপার ওভারে গড়ালে আগে ব্যাট করে হায়দরাবাদ। যেখানে অক্ষর প্যাটেলের বিপক্ষে এক চারের মারে ৭ রানের বেশি নিতে পারেননি কেন উইলিয়ামসন এবং ডেভিড ওয়ার্নার। যা তাড়া করতে সুপার ওভারের একদম শেষ বল পর্যন্ত খেলে দিল্লি।
নিজেদের ওভারের শেষ বলে দুই রান নিয়েছিলেন উইলিয়ামসন ও ওয়ার্নার। কিন্তু প্রথম রান নেয়ার সময় পপিং ক্রিজে ব্যাট ছোঁয়াননি ওয়ার্নার। ফলে শর্ট রানের কারণে সেই বলে দেয়া হয় ১ এবং তাদের সংগ্রহ থামে ৭ রানে। পরে এই শর্ট রানটিই তাদের হারের বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
দিল্লি ৮ রান তাড়া করতে নামলে তা ঠেকানোর দায়িত্ব বর্তায় রশিদ খানের কাঁধে। তার তৃতীয় বলেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে কাজ সহজ করে নেন দিল্লি অধিনায়ক রিশাভ পান্ত। পরের বল হয় ডট। তবে শেষ দুই বলে লেগ বাই থেকে ১ রান করে নিয়ে অসাধারণ এক জয় তুলে নেয় দিল্লি।
এ জয়ের ফলে পাঁচ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দুই নম্বরে উঠে গেছে দিল্লি। তাদের সমান ম্যাচে চার জয়ে ৮ পয়েন্ট রয়েছে চেন্নাই সুপার কিংস এবং রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুরও। তবে নেট রানরেটের কারণে শীর্ষে চেন্নাই ও তিন নম্বরে ব্যাঙ্গালুরু। অন্যদিকে পাঁচ ম্যাচে ২ পয়েন্ট নিয়ে সাত নম্বরে হায়দরাবাদ।
মূল ম্যাচে দিল্লির করা ১৫৯ রানের জবাবে খেলতে নেমে অল্পেই অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারের উইকেট হারায় হায়দরাবাদ। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে সাজঘরে ফেরার আগে মাত্র ৬ রান করেন ওয়ার্নার। তবে চালিয়ে যান আরেক ওপেনার জনি বেয়ারস্টো। যার সুবাদে পাওয়ার প্লে’র পূর্ণ ফায়দা নিতে পারে হায়দরাবাদ।
প্রথম ছয় ওভারে ২ উইকেট হারালেও ৫৬ রান করে হায়দরাবাদ। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে আউট হওয়ার আগে মাত্র ১৮ বলে ৩৮ রান করেন বেয়ারস্টো। যেখানে ছিল ৩ চার ও ৪টি ছয়ের মার। এরপর ব্যর্থ হন বিরাট সিং (৪), কেদার যাদবরা (৯)। তবে একপ্রান্ত আগলে রাখেন কেন উইলিয়ামসন।
ম্যাচের শেষ ৪ ওভারে হায়দরাবাদের বাকি ছিল ৪৩ রান। ইনিংসের ১৭তম ওভার করতে এসে মাত্র ৪ রান খরচ করেন অক্ষর প্যাটেল, নেন অভিষেক শর্মা (৪) ও রশিদ খানের (০) উইকেট। ফলে ১৮ বলে বাকি থাকে ৩৯ রান। এমতাবস্থায় ১৮তম ওভারে এক চারের মারে ১১ রান নেয় হায়দরাবাদ।
এরপর ১৯তম ওভারে লাগে ধাক্কা। প্রথম তিন বলে আসে মাত্র ৪ রান, সাজঘরে ফিরে যান বিজয় শংকর (৮)। তবে শেষ তিন বলে দুই চারের মারে ৮ রান নিয়ে ফেলেন জগদেশ সুচিথ। তাই শেষ ৬ বলে বাকি থাকে ১৬ রান। শেষ ওভারের দায়িত্ব বর্তায় কাগিসো রাবাদার কাঁধে।
শেষ ওভারের প্রথম বলটি ছিল ওয়াইড, পরে ওভারের প্রথম বৈধ বলে বাউন্ডারি হাঁকান উইলিয়ামসন। দ্বিতীয় বলে ১ রান নিয়ে দেন সুচিথকে। আগের ওভারে জোড়া চার হাঁকানো সুচিথ এবার রাবাদার মুখোমুখি প্রথম বলেই হাঁকান ছক্কা। ফলে সমীকরণ নেমে আসে ৩ বলে ৪ রানে।
কিন্তু এই তিন বলে আবার ৩ রানের বেশি নিতে পারেনি হায়দরাবাদ। যার ফলে দেখা মেলে মৌসুমের প্রথম সুপার ওভারের। গত আসরের দ্বিতীয় ম্যাচটিই ছিল সুপার ওভার। এবার তা হতে লাগল ২০ ম্যাচ। উইলিয়ামসন অপরাজিত ছিলেন ৫১ বলে ৬৬ রানে, সুচিথ করেন ৬ বলে ১৫ রান।
এর আগে চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন দিল্লি অধিনায়ক পান্ত। শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। পৃথ্বির মারকুটে ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লে’র প্রথম ছয় ওভারে ৫১ রান তুলে দিল্লি, যার মধ্যে শিখর ধাওয়ানের অবদান মাত্র ১১।
এরপরও চালিয়ে গেছেন পৃথ্বি, ৩৫ বলে তুলে নেন হাফসেঞ্চুরি। যার তুলনায় ধাওয়ান ছিলেন অনেকটাই ধীরগতির। ১০ ওভারে বিনা উইকেটে ৮০ রান তুলে দিল্লি। একাদশতম ওভারে রশিদ খানের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন ধাওয়ান, ২৬ বলে ২৮ রান নিয়ে।
এর পরের ওভারে রানআউট হয়ে যান পৃ্থ্বিও। ৩৯ বলে ৭ চার আর ১ ছক্কায় ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান তখন ৫৩ রানে। এই দুই আউটেই রানের গতি কিছুটা কমে যায় দিল্লির।
সেখান থেকে দলকে তোলার চেষ্টা করেছেন পান্ত। ২৭ বলে ৪ বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায় ৩৭ রান করে দিল্লি অধিনায়ক ১৯তম ওভারে আউট হয়েছেন, ওই ওভারেই সিমরন হেটমায়ারকে (১) তুলে নেন সিদ্ধার্থ কাউল।
ধীরে শুরু করা স্টিভেন স্মিথ খলিল আহমেদের করা ইনিংসের শেষ ওভারটিতে একটি করে চার-ছক্কা হাঁকান। কিন্তু দলের রান মাঝখানে যে আটকে গিয়েছিল, সেটি আর পুষিয়ে ওঠা যায়নি সেভাবে। ২৫ বলে ৩৫ রানে অপরাজিত থাকেন স্মিথ।
নদী বন্দর / এমকে