ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা কিংবা নিউজিল্যান্ড- ক্রিকেটের এসব পরাশক্তির বিপক্ষে বহু আগেই সিরিজ জয় হয়ে গেছে বাংলাদেশের। কিন্তু উপমহাদেশের ক্রিকেট শক্তি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই অধরা সিরিজ জয়টাই কোনোভাবে আসছিল না। ঘরের মাঠে হোক কিংবা শ্রীলঙ্কা গিয়ে হোক, সম্ভাবনা জাগিয়েও সিরিজ জয় সম্ভব হচ্ছিল না টাইগারদের।
অবশেষে সেই অধরা আক্ষেপটা পূরণ হলো মঙ্গলবার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। শ্রীলঙ্কাকে বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে ১০৩ রানের ব্যবধানে পরাজিত করে। প্রথম ম্যাচে ৩৩ রানে জয়ের পর দ্বিতীয় ম্যাচে জয় এলো ১০৩ রানের বড় ব্যবধানে। এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতে গেলো বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচে লঙ্কানদের হোয়াইটওয়াশ করার অপেক্ষা শুধু।
এই সিরিজ জয়ে ব্যাট হাতে একক কৃতিত্ব বলা চলে মুশফিকুর রহীমের। প্রথম ম্যাচের মত দ্বিতীয় ম্যাচেও ব্যাট হাতে তিনি ছিলেন দুর্বার। বরং, বলা ভালো ত্রানকর্তা। মঙ্গলবার দ্বিতীয় ম্যাচেই বরং মুশফিকুর রহীম ছিলেন এককভাবে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক। ব্যাট হাতে টপ অর্ডার যখন পুরোপুরি ব্যর্থ। তখন, তিনিই দাঁড়িয়ে গেলেন বাংলাদেশকে টেনে তোলার ভূমিকায়। অনবদ্য সেঞ্চুরিই করলেন না শুধু, বাংলাদেশকেও এনে দিলেন ২৪৬ রানের লড়াকু সংগ্রহ। যার ফলে ১০৩ রানের জয় এলো।
অথচ, সেই মুশফিকুর রহীমই কি না ম্যাচ শেষে খুব আক্ষেপ করলেন মাত্র ১১টি বল নিয়ে। হ্যাঁ, ১১ বল। বাংলাদেশ অলআউট হয়ে গিয়েছিল ১১ বল আগে, ৪৮.১ ওভারে। মুশফিকুর রহীম আউট হয়ে যাওয়ার পরই অলআউট বাংলাদেশ। তিনি ছিলেন শেষ ব্যাটসম্যান। ইনিংসের এই যে শেষ ১১টি বল খেলতে পারলেন না, ম্যাচ শেষে সেই আক্ষেপটাই ঝরে পড়লো মুশফিকের কণ্ঠে।
নিজের ব্যাটিংটা স্বস্তির কি না জানতে চাইলে মুশফিক বলেন, ‘ব্যাটিংয়ে স্বস্তি বলতে আলহামদুলিল্লাহ ভালো লেগেছে অবশ্যই; কিন্তু আরও ১১টা বল বাকি ছিল। ক্লোজ গেমে এই ১১ বলে ১০ বা ২০ রান করতে পারলে আমরা আরও এগিয়ে থাকতাম। সেদিক থেকে আমার ব্যাটিংয়ে আরও উন্নতির জায়গা আছে। আর রিভার্স সুইপ আমার অন্যতম প্রিয় শট। এ রকম সিচুয়েশন আসেনি। আসলে আবারও খেলব। এটাও বলতে চাই, তৃতীয় ওয়ানডেতে ওই রকম সিচুয়েশন আসলে একটা না চার পাঁচটাও খেলতে পারব ইনশাআল্লাহ।’
শুরুতেই বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি উইকেট পড়ে যাওয়ায় চাপ তৈরি হয়েছিল। মুশফিক জানালেন, এমনটা হতে পারে তা আগে থেকেই তারা আঁচ করতে পেরেছিলেন। এ কারণে মানসিকভাবে প্রস্তুতও ছিলেন তারা। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, ওয়ানডে ক্রিকেটে স্বাভাবিক নতুন বলে যে কোনো সময় আর্লি উইকেট পড়তেই পারে। আমরা মানসিকভাবে তৈরি থাকি। যদিও অ্যাজ অ্যা ব্যাটিং ইউনিট চেষ্টা করি প্রথম দশ ওভারে যাতে যত কম উইকেট পড়ে।’
নিজেরা প্রস্তুতি নেন যেন শুরুতে উইকেট না পড়ে। তাদের চেষ্টা ছিল জানিয়ে মুশফিক বলেন, ‘কিন্তু অনেক সময় এটা হয় না। আমরা প্র্যাক্টিস ওভাবেই করি। আমরা নতুন বলে সবসময় প্র্যাক্টিস করি। আমরা চেষ্টা করেছি ৫-৭ ওভারে যাতে আর কোনো উইকেট না পড়ে।’
প্রথম ওয়ানডের চেয়ে উইকেট ভালো ছিল দাবি করেন মুশফিক। একই সঙ্গে তিনি জানান, লিটন ভালো ব্যাট করছিল। তিনি বলেন, ‘আজকের উইকেটটা প্রথম ওয়ানডের চেয়ে অনেক ভালো ছিল। পেস বাউন্স ছিল, ব্যাটে আসছিল। আমি লিটনকে এটাই বলছিলাম যে, পাঁচ সাত ওভার যাতে বলের ম্যারিট অনুযায়ী খেলি। আমরা যদি বিশ রানের পার্টনারশিপ করতে পারি তাহলে মোমেন্টামটা আমাদের দিকে শিফট হয়ে যাবে। লিটনও খুব ভালো ব্যাটিং করছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সে আউট হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে আমাদের ব্যাটসম্যানরা ভালো খেলেছে।’
নদী বন্দর / বিএফ