তার উপাধির শেষ নেই। কেউ বলেন বিউটি কুইন, কেউ বলেন ঢাকাই সিনেমার সম্রাজ্ঞী। কেউ আবার তাকে মহানায়িকা বলে সম্মান করেন।
অভিনয় গুণে নিজেকে তিনি অতুলনীয় করে তুলেছেন। সিনেমার পর্দায় তিনি হয়ে উঠেছিলেন সব প্রেমিকের প্রেমিকা, সব স্বামীর আদর্শ স্ত্রী, সব মা-বাবার যোগ্য কন্যা, সব ভাইয়ের আদরের বোন।
বলছি শাবানার কথা। সিনেমার ব্যবসার জন্য তিনি যেন একাই একশ’ ছিলেন। তার সিনেমা মানেই হিট-সুপারহিট।
কিংবদন্তি এ অভিনেত্রীর জন্মদিন আজ। অভিনয়ে নেই কয়েক দশক। চোখের সামনেও নেই, স্থায়ী হয়েছেন সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে। তবু এতটুকু কমেনি তার আবেদন। ভক্তরা মনে রেখেছেন শাবানাকে। মনে রেখেছেন তার জন্মদিন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাই জন্মদিনের প্রথম প্রহরেই ভেসে গেলেন শাবানা ভালোবাসা আর শ্রদ্ধায়।
বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের সোনালী দিনের প্রথম সারির চিত্রনায়িকা ছিলেন শাবানা। টানা তিন দশক তার সুনিপুণ অভিনয়ের মাধ্যমে জয় করে নিয়েছেন কোটি দর্শকের মন। তার পারিবারিক নাম আফরোজা সুলতানা রত্মা।
ভাষা আন্দোলনের বছর ১৯৫২ সালের ১৫ জুন চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার ডাবুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন শাবানা। ঢাকার গেণ্ডারিয়া হাই স্কুলে ভর্তি হলেও মাত্র ৯ বছর বয়সে তার শিক্ষা জীবনের ইতি ঘটে।
১৯৬২ সালে ‘নতুন সুর’ চলচ্চিত্রে শিশুশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন শাবানা। ওই সময় পর্দায় নাম ছিল রত্মা। এরপর ‘তালাশ’-সহ বেশ কয়েকটি সিনেমায় নৃত্যশিল্পী ও অতিরিক্ত শিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন তিনি। সহনায়িকা চরিত্রে দেখা যায় ‘আবার বনবাসে রূপবান’ ও ‘ডাক বাবু’তে।
১৯৬৭ সালে এহতেশাম পরিচালিত ‘চকোরী’তে চিত্রনায়ক নাদিমের বিপরীতে নায়িকা হয়ে অভিনয় করেন তিনি। আর তখন রত্মা থেকে হয়ে যান শাবানা। বাংলা ও উর্দু ভাষায় নির্মিত ‘চকোরী’ ছবি ব্যবসা সফল হয়। এরপর থেকে শাবানাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
তিন দশকের ক্যারিয়ারে নাদিম, রাজ্জাক, আলমগীর, ফারুক, জসীম, সোহেল রানার সঙ্গে জুটি বেঁধে শাবানা উপহার দেন জনপ্রিয় অনেক ছবি। তিনি কাজ করেছেন বলিউডের রাজেশ খান্নার বিপরীতেও।
তার উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো হচ্ছে- ‘ভাত দে’, ‘অবুঝ মন’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘দোস্ত দুশমন’, ‘সত্য মিথ্যা’, ‘রাঙা ভাবী’, ‘বাংলার নায়ক’, ‘ওরা এগারো জন’, ‘বিরোধ’, ‘আনাড়ি’, ‘সমাধান’, ‘জীবনসাথী’, ‘মাটির ঘর’, ‘লুটেরা’, ‘সখি তুমি কার’, ‘কেউ কারো নয়’, ‘পালাবি কোথায়’, ‘স্বামী কেন আসামি’, ‘দুঃসাহস’, ‘পুত্রবধূ’, ‘আক্রোশ’ ও ‘চাঁপা ডাঙার বউ’।
অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে শাবানা ১০ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। পেয়েছেন আজীবন সম্মাননা। বাংলাদেশের হয়ে বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়েছেন শাবানা।
১৯৭৩ সালে সরকারি কর্মকর্তা ওয়াহিদ সাদিককে বিয়ে করেন শাবানা। দুজনে মিলে প্রতিষ্ঠা করেন প্রযোজনা সংস্থা এসএস প্রোডাকশন। ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে নির্মিত হয়েছে অনেক জনপ্রিয় সিনেমা।
১৯৯৭ সালে শাবানা অজানা কারণে হঠাৎ বিদায় নেন চলচ্চিত্র থেকে। ২০০০ সাল থেকে সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে বসবাস করছেন। এরপর বেশ কয়েকবার বাংলাদেশে আসলেও জনসম্মুখে দেখা যায়নি এ অভিনেত্রীকে।
নদী বন্দর / সিএফ