সম্প্রতি চীন এবং পাকিস্তানের মধ্যে একটি নতুন ট্রেন্ড চালু হয়েছে। চীনের পুরুষদের সঙ্গে পাকিস্তানি নারীদের বিয়ের হার অনেক বেড়ে গেছে। এক্ষেত্রে প্রাধান্য পাচ্ছে লাহোর, রাওয়ালপিন্ডি, গুজরানওয়ালা, মান্ডি বাহাউদ্দিন এবং ফয়সালাবাদের নারীরা।
চীনের এক সন্তান নীতির প্রভাব পড়েছে নতুন প্রজন্মের জীবনসঙ্গী খোঁজার ক্ষেত্রেও। আর এক্ষেত্রে চীনের মিত্র দেশ পাকিস্তানেরও ভূমিকা বেশ চোখে পড়ছে। চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডরের (সিপিইসি) হাত ধরে চীন ও পাকিস্তানে সাধারণ মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ছে।
এর ফলে চারহাত এক হওয়ার ঘটনাও কম ঘটছে না। তবে বেশ কিছু ক্ষেত্রে জবরদস্তির অভিযোগও উঠছে। সিপিইসিকে ঢাল করে পাকিস্তান ও চীনের দালালরা সামাজিক ও আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারগুলোর মেয়েদের টার্গেট করে বিয়েতে রাজি করাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিশেষ করে সংখ্যালঘু খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের মেয়েদের চীনা পুরুষদের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
সিয়াসাত ডেইলির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীনে সচ্ছ্বল জীবনের আশ্বাস পেয়ে অনেক তরুণীই রাজি হয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু পরবর্তীকালে বিদেশের মাটিতে তাদের জীবন খুব একটা সুখের হচ্ছে না। এ ধরনের বিয়ের সবচেয়ে খারাপ দিক হচ্ছে অনেক নারীই চীনে গিয়ে সেখানকার জীবনধারার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছেন না। নারীদের অনেকেই তাদের স্বামী ও শ্বশুরবাড়িতে খারাপ ব্যবহারের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন।
চীনের বিবাহযোগ্য পুরুষদের বিয়ের জন্য পাকিস্তানি কনের সন্ধানের অন্যতম কারণ হলো দেশটির জনসংখ্যার ক্ষেত্রে ক্রমবর্দ্ধমান পার্থক্য। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, পাকিস্তানের বেশ কিছু জায়গায় ব্যাপক দারিদ্র জনগোষ্ঠী অভাব থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। এসব পাক নারীদের বেশিরভাগই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। আর বিয়ে করতে গিয়ে চীনের বরপক্ষ থেকে অনেকক্ষেত্রেই এসব নারীদের নানা ধরনের প্রলোভন দেখানো হয়। বাস্তবে দেখা যায় যে, বেশিরভাগ দাবিই আসলে মিথ্যা।
চীন এক সন্তান নীতির কারণে বেশ ভুগছে। পুত্রসন্তানরা প্রাধান্য পাওয়ায় লিঙ্গ সংক্রান্ত যে পার্থক্য গড়ে উঠেছিল তা এখনও রয়ে গেছে। যদিও ওই নীতি এখন বাতিল হয়েছে। গত ডিসেম্বরের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চীনে বিবাহযোগ্য পুরুষের সংখ্যা বিবাহযোগ্য নারীদের তুলনায় তিন কোটি বেশি। অপরদিকে, দরিদ্র জীবন থেকে একটি ভালো জীবনের আশায় পাকিস্তানি নারীরাও ভিনদেশে বিয়ে করছে। দু’দেশের মধ্যে ভালো সম্পর্কের কারণে একে অন্যের সাহায্য নিচ্ছে। সে কারণেই পাকিস্তানি নারীদের সঙ্গে চীনা পুরুষদের বিয়ের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরের এক হিসেব অনুযায়ী, পাকিস্তানের কমপক্ষে ৬২৯ জন মেয়ে ও নারীকে কনে হিসেবে চীনের বিভিন্ন নাগরিকের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল। প্রায় ১৮ মাস ধরে এসব নারীদের পাচারের কাজ চলেছে বলে জানানো হয়।
গোয়েন্দাদের একটি নথিতে ওই পাক নারীদের জাতীয় পরিচয়পত্র এবং তাদের চীনা স্বামীদের নাম ও বিয়ের তারিখ উল্লেখ করা হয়। ২০১৮ থেকে ২০১৯ সালের এপ্রিলের মধ্যে ওই নারীদের কনে হিসেবে চীনে পাচার করা হয়েছিল।
নদী বন্দর / পিকে