ফরিদপুরে এবার আমন ধানের আবাদ বেড়েছে। চলতি মৌসুমে সরকারি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আবাদ হয়েছে ছয় হাজার হেক্টর বেশি। কিন্তু হঠাৎ করে খুচরা বাজারে ইউরিয়া সারের দাম বেড়ে গেছে। ফলে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন নিয়ে শঙ্কিত জেলার চাষিরা।
ফরিদপুর জেলা সদরসহ নয়টি উপজেলায় এবার মাসিক চাহিদার অর্ধেক ইউরিয়া সার সরবরাহ করা হয়েছে। এজন্য দামও বেশি নেওয়া হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েছে বলছেন ব্যবসায়ীরা।
ভাঙ্গা উপজেলার তুজারপুর ইউনিয়নের জান্দি গ্রামের কৃষক মো. নাসিম মোল্লা প্রতি বস্তা ইউরিয়া সার কিনেছেন ৯০০ টাকা দরে। গত কয়েকদিন আগে তিনি ইউনিয়নের উচা বাজার থেকে ওই সার কেনেন। ১৬ টাকার বদলে প্রতি কেজি ১৮ টাকা দরে কিনেছেন। নাসির মোল্লা বলেন, কেজিপ্রতি দুই টাকা করে বেশি নেওয়া হচ্ছে।
নগরকান্দা উপজেলার ফুলসূতী ইউনিয়নের বাউতিপাড়া গ্রামের কৃষক বরুণ মণ্ডল বলেন, প্রতি বস্তা সার ৯২৫ থেকে ৯৫০ টাকায় কিনতে হয়েছে।
সালথা উপজেলার আমনচাষি সুমন মণ্ডল বলেন, হঠাৎ করে সারের চাহিদার পাশাপাশি দামও বেড়ে গেছে। তাই চাহিদামতো সার কিনতে পারিনি। সামনে দাম কমলে তারপর সার কিনে জমিতে ছিটাবো। আর তা নাহলে জমির চাহিদার থেকে কম পরিমাণ সার দিতে হবে।
ফরিদপুর সদর উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের ডোমরাকান্দি এলাকার চাষি নিজাম খলিফা বলেন, বাজারে সারের ঘাটতি রয়েছে। যে কারণে কেজিতে তিন থেকে চার টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে। বাধ্য হয়ে সার কম কিনেছি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলায় সারের ডিলার আছেন ৯৬ জন। খুচরা সারবিক্রেতা আছেন ৭২৯ জন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, ফরিদপুরে বছরে ইউরিয়ার চাহিদা ৭৭ হাজার মেট্রিক টন। এবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৩৯ হাজার মেট্রিক টন।
শহরের টেপাখোলা মহল্লার খুচরা সারবিক্রেতা মেসার্স মৃধা ট্রেডার্সের মো. লিটন মৃধা বলেন, হয়তো ডিলারদের কারসাজিতে সারের দাম বাড়ছে। উপায় না পেয়ে কৃষকেরা বেশি দামে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
স্থানীয় ডিলার আবু সাঈদের ব্যবস্থাপক রুহুল আমিন বলেন, তারা বেশি দামে সার বিক্রি করেন না। তবে মাঝেমধ্যে সারের সরবরাহ পেতে সমস্যা হয়।
বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের ফরিদপুর শাখার সভাপতি আব্দুস সালাম বাবু বলেন, ডিলার পর্যায়ে সারের দর কম-বেশি হয়নি। তবে খুচরা বাজারে কিছুটা দর বেড়েছে।
তিনি বলেন, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে জেলায় ইউরিয়া সারের যে চাহিদা ছিল সে তুলনায় চার হাজার মেট্রিক টন কম সরবরাহ করা হয়েছে। এ কারণে হয়তো দামের কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে।
জানতে চাইলে ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. হযরত আলী বলেন, জেলায় সারের সঙ্কট হওয়ার কথা না। তবে খুচরা বাজারে ইউরিয়ার সারের দর কিছু বেড়েছে। এ দর বেশিদিন থাকবে না বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
নদী বন্দর / বিএফ