জয়ের জন্য ১৫ বলে প্রয়োজন ১০ রান, হাতে রয়েছে ৮টি উইকেট- টি-টোয়েন্টি ম্যাচের এমন পরিস্থিতিতে যে কারও বাজি থাকবে ব্যাটিং দলের পক্ষে। কিন্তু টুর্নামেন্ট যখন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল), তখন শেষ বল ডেলিভারি হওয়ার আগে কিছুই বলার সুযোগ নেই।
যার প্রমাণ মিললো আরও একবার। রাজস্থান রয়্যালসের ১৮৫ রানের জবাবে সহজ জয়ের পথেই ছিলো পাঞ্জাব কিংস। কিন্তু মোস্তাফিজুর রহমান ও কার্তিক তিয়াগির শেষ দুই ওভারের ম্যাজিক্যাল বোলিংয়ের সামনে আর ম্যাচ জিততে পারেনি তারা। বিশেষ করে শেষ ওভারে মাত্র ১ রান দিয়েছেন তরুণ ডানহাতি পেসার কার্তিক।
শেষ ১৫ বলে ১০ থেকে লক্ষ্যমাত্রা নেমে এসেছিল ১২ বলে ৮ রানে। সেখান থেকে ১৯তম ওভারে মাত্র ৪ রান খরচ করেন মোস্তাফিজ। তাতেই মূলত ঘুরে যায় ম্যাচ, জাগে রাজস্থানের সম্ভাবনা। আর শেষ ওভারে দুই উইকেট নিয়ে মাত্র ১ রান দেন কার্তিক। মূলত এ দুই ওভারের কল্যাণেই ২ রানের অবিশ্বাস্য এক জয় পেয়েছে রাজস্থান।
দুই ওপেনার লোকেশ রাহুল ও মায়াঙ্ক আগারওয়ালের ১২০ রানের উদ্বোধনী জুটির পরেও নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৮৩ রানের বেশি করতে পারেনি পাঞ্জাব। তাদেরকে রুখে দিয়ে শ্বাসরুদ্ধকর জয়েই আইপিএলের ফিরতি পর্ব শুরু করলো মোস্তাফিজের রাজস্থান।
আইপিএল ইতিহাসে এর আগে শেষ ওভারে ৪ রানের কম ডিফেন্ড করার রেকর্ড ছিলো মাত্র একটি। তাও প্রায় এক যুগ আগে, ২০০৯ সালের আসরে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে এটি করে দেখিয়েছিলেন রাজস্থান রয়্যালসেরই বোলার মুনাফ প্যাটেল। সেই কীর্তির পুনরাবৃত্তি হলো ২০ বছর বয়সী কার্তিকের হাত ধরে।
অথচ ১৮৬ রানের লক্ষ্যে যেনো রাজকপাল নিয়েই ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন পাঞ্জাব অধিনায়ক রাহুল। প্রথম পাওয়ার প্লে’র ছয় ওভারেই তিনবার ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান তিনি। যার একটি ছিলো মোস্তাফিজের ওভারে। অন্য দুইটি ক্রিস মরিস ও চেতন সাকারিয়ার বোলিংয়ে।
শুরুতেই তিনবার জীবন পাওয়া ব্যাটসম্যানের যেমন সুযোগ কাজে লাগানো উচিত, তার পুরোটাই করে দেখিয়েছেন পাঞ্জাব অধিনায়ক। মায়াঙ্কের সঙ্গে ১১.৫ ওভারেই গড়েন ১২০ রানের উদ্বোধনী জুটি। এ দুজনের পঞ্চম শতরানের জুটি ছিলো এটি। সাকারিয়ার বলে সাজঘরে ফেরার আগে ৩৩ বলে ৪৯ রান করেন রাহুল।
তবে এর আগেই দ্বিতীয় দ্রুততম ব্যাটসম্যান আইপিএলে ৩ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। অধিনায়কের ৩ হাজারে পৌঁছানোর দিন মায়াঙ্ক ছুঁয়েছেন ২ হাজার রানের মাইলফলক। তবে রাহুল ফেরার পরের ওভারে তাকেও সাজঘরের পথ ধরান রাহুল তেওয়াতিয়া। মায়াঙ্কের ব্যাট থেকে আসে ৭ চার ও ২ ছয়ের মারে ৪৩ বলে ৬৭ রান।
পরপর দুই ওপেনারকে হারালেও ভড়কে যাননি তিন ও চার নম্বরে নামা এইডেন মারক্রাম ও নিকোলাস পুরান। দুজনের দায়িত্বশীল ব্যাটে জয়ের সুবাতাস পাচ্ছিলো পাঞ্জাব। ইনিংসের ১৪তম ওভার থেকে জুটি বেধে ১৮তম ওভার পর্যন্ত ৩০ বলে ৫২ রান যোগ করেন এ দুজন।
ফলে শেষ ২ ওভারে সমীকরণ নেমে আসে মাত্র ৮ রানে। মোস্তাফিজের করা ১৯তম ওভারে মাত্র ৪ রান নিতে পারেন এ দুজন। সেই ওভারের চতুর্থ বলে মারক্রামের ক্যাচ ছাড়েন সানজু স্যামসন। ফলে দুই ক্যাচ মিসের কারণে পুরো ম্যাচেই উইকেট পাওয়া হয়নি মোস্তাফিজের।
উইকেট না পেলেও নিজের কাজটা করে দেন দ্য ফিজ। পরে শেষ ওভার করতে এসে দুর্দান্ত নার্ভের পরিচয় দেন ২০ বছর বয়সী কার্তিক। তার ওভারের দ্বিতীয় বলে ১ রান নেন মারক্রাম। পরের চার বলে হয়নি আর কোনো রান। উল্টো তৃতীয় ও পঞ্চম বলে কট বিহাইন্ড হন পুরান (২২ বলে ৩২) ও দীপক হুদা (২ বলে ০)।
শেষ বলে বাকি ছিলো ৩ রান। কার্তিকের ইয়র্কার লেন্থের বলে কিছুই করতে পারেননি মাত্রই ব্যাটিংয়ে আসা ফাবিয়ান অ্যালেন। অন্যপ্রান্তে ২০ বলে ২৬ রান নিয়ে অপরাজিত থাকা মারক্রাম দেখেন দলের হতাশার পরাজয় আর আনন্দে ভাসে কার্তিক-ফিজের রাজস্থান।
দলের জয়ে সেরা অবদান রেখে ২৯ রান খরচায় ২ উইকেট নিয়েছেন কার্তিক। তার হাতেই উঠেছে ম্যাচসেরার পুরস্কার। মোস্তাফিজ ৪ ওভারে খরচ করেছেন ৩০ রান, পাননি উইকেট। তার দ্বিতীয় ও চতুর্থ ওভারে একটি করে ক্যাচ ছেড়েছেন ফিল্ডাররা।
এর আগে টস জিতে রাজস্থানকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় পাঞ্জাব। রান পেয়েছেন রাজস্থানের দুই ওপেনারই। এভিন লুইস ২১ বলে করেন ৩৬ রান, জস্বশী জসওয়েল মাত্র এক রানের জন্য হাফসেঞ্চুরিটা পাননি। ৩৬ বলে গড়া তার ৪৯ রানের ইনিংসে ছিল ৬ চার আর ২ ছক্কার মার।
এরপর অধিনায়ক সঞ্জু স্যামসন ৪ রানেই ফিরেছেন। তবে মিডল অর্ডারে ঝড় তুলেছেন লিয়াম লিভিংস্টোন আর মহিপাল লমরর। ১৭ বলে ২৫ করেন লিভিংস্টোন। লমরর তার সমান বলেই ২ বাউন্ডারি আর ৪ ছক্কায় খেলেন ৪৩ রানের বিধ্বংসী ইনিংস।
তবে ১৮তম ওভারের প্রথম বলে লমরর ফেরার পর প্রত্যাশিত পুঁজি পায়নি রাজস্থান। শেষ ৩ ওভারে তারা তুলতে পেরেছে মাত্র ১৬ রান, হারিয়েছে ৫ উইকেট।
পাঞ্জাব বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল অর্শদীপ সিং। ৪ ওভারে ৩২ রানে একাই ৫ উইকেট শিকার করেছেন বাঁহাতি এই পেসার।
নদী বন্দর / সিএফ