ছেলেদের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির সঙ্গে ক্রিকেট বিশ্বের পরিচয় ১৬ বছরের। বাংলাদেশ প্রথম এই ফরম্যাটের স্বাদ চেখে দেখে ২০০৬ সালে। অর্থাৎ, আজ থেকে প্রায় ১৫ বছর আগে। তবে আশ্চর্য জাগায়, এই ১৫ বছরে একটিবারও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোনো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলা হয়নি বাংলাদেশের।
আজ অবশ্য সেই আক্ষেপ ঘুচতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪টায় আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে প্রথমবার কোনো টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে টাইগাররা।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইংল্যান্ড খুব একটা অচেনা প্রতিপক্ষ নয় বাংলাদেশ। প্রায় সময়েই দ্বিপাক্ষিক কিংবা আইসিসির কোনো না কোনো ইভেন্টে দেখা হয়ে যায় দল দুটির। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ-ইংল্যান্ডের খেলা আন্তর্জাতিক (ওয়ানডে ও টেস্ট মিলিয়ে) ম্যাচের সংখ্যা ৩১টি।
তারপরও বাংলাদেশ আজ যেন এক ‘অচেনা’ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নামছে। কেননা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ইংলিশদের বিপক্ষে খেলার বিন্দুমাত্র অভিজ্ঞতা যে নেই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দলের। ইংল্যান্ডের জন্যও অবশ্য একই কথা প্রযোজ্য। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথম ম্যাচে উড়িয়ে দেওয়ার পরও বাংলাদেশকে তাই সমীহ করে দেখছে ইংলিশ শিবির।
গতকাল ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে ইংল্যান্ড ওপেনার জস বাটলারের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, বাংলাদেশকে সহজ প্রতিপক্ষ মনে হচ্ছে কি-না? জবাবে বাটলার জানালেন, মোটেও তা নয়। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে তাদের সেরা চেহারায় দেখার প্রস্তুতি আমরা নিয়ে রেখেছি।’
বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের দারুণ দুটি অভিজ্ঞতা থেকেই বাটলারের কাছে রাখা হয়েছিল এই প্রশ্ন। ২০১১ এবং ২০১৫- এই দুই ওয়ানডে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছিল বাংলাদেশ। এর মধ্যে ১৫’বিশ্বকাপে তো এই বাংলাদেশের কাছে হেরেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছিল ইংল্যান্ড।
সেই ম্যাচের স্মৃতি এই লড়াইয়ের আগে আবার এসেছে আলোচনায়। সেটা পেসার রুবেল হোসেনের কল্যাণে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওই ম্যাচে শেষ দুইটা উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে আনন্দের সাগরে ভাসিয়েছিল রুবেল। ম্যাচে নিয়েছিলেন মোট চার উইকেট।
কাকতালীয়-ই কিনা, টাইগার ক্রিকেটপ্রেমীদের নস্টালজিয়ায় ভোগার সুযোগ করে দেয়া সেই রুবেল এই ইংল্যান্ড ম্যাচের আগে ডাক পেলেন বিশ্বকাপ দলে। পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের ইনজুরি খুলে দিয়েছে তার বিশ্বকাপ দরজা। সাইফউদ্দিনের জায়গায় যদি তাসকিন আহমেদ আবার দলে না ফেরেন, তবে প্রিয় শত্রুর বিপক্ষে আবারও বল হাতে দেখা যেতে পারে রুবেলকে।
বাংলাদেশ আজ শেষ মুহূর্তে একাদশ ঘোষণা করবে। খেলা আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে হলেও, বাংলাদেশ গতকাল ভ্রমণ ক্লান্তি এড়াতে অনুশীলন করেছে দুবাইয়ের আইসিসি একাডেমীতে। আবুধাবির উইকেট কেমন, গতকাল তাই সেটা পরখ করা হয়নি টিম ম্যানেজমেন্টের।
তবে বিগত কয়েক ম্যাচের পরিসংখ্যান বলছে, আবুধাবির এই উইকেট কথা বলবে স্পিনারদের হয়ে। কেননা আইপিএলের শেষ যে কয় ম্যাচ এখানে হয়েছে, সেখানে রান তুলতে হাঁসফাঁস করতে দেখা গেছে ব্যাটারদের। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররাও এখানে খেলতে পারেননি স্বাচ্ছন্দ্যে।
বাংলাদেশ আজও যে তাই, তিন স্পিনার নিয়ে দল সাজাবে সেটা এক কথায় নিশ্চিত। তবে ইংল্যান্ড দল আবার পাওয়ার হিটারে ভরা। তাদের টপ টু বটম সবাই কমবেশি চালাতে পারেন ব্যাট। তাও আবার মারকাটারি ঢঙে। ইংল্যান্ডের এই শক্তিই বাংলাদেশের মনে কাঁপন ধরাতে বাধ্য।
যদিও গতকাল বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা পেস বোলিং কোচ ওটিস গিবসব জানিয়ে গেছেন, সাকিব-মুস্তাফিজরা ভয় পেলে চলবে না। সেমিফাইনালের লড়াইয়ে টিকে থাকার লড়াইয়ে নামার আগে গিবসন বলেন, ‘ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপ খুবই শক্তিশালী। আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করাই তাদের স্বভাব। সে জন্য মারতে গিয়ে তাদের উইকেট নেওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হবে। তাই তোমাদের ঘাবড়ে গেলে চলবে না। মাথা ঠাণ্ডা রেখে সঠিক পরিকল্পনা ও দক্ষতার সঙ্গে বোলিং করতে হবে।’
এখন দেখার বিষয়, গিবসনের সেই পরামর্শ মাঠে মেনে চলতে পারেন কি-না বাংলাদেশের বোলাররা। তবে এই ম্যাচে টস ভাগ্যও গড়ে দিতে পারে ব্যবধান। আবুধাবিতে হওয়া শেষ পাঁচ টি-টোয়েন্টি ম্যাচের চারটিতে জয় পেয়েছে পরে ব্যাট করা দল। টস জিতলে, দুই দলের অধিনায়ক তাই চাইবেন আগে ফিল্ডিংটা সেরে নিতে।
নদী বন্দর / সিএফ