দলের অভিজ্ঞতম দুই ব্যাটার মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসানের ব্যাটে ভালোভাবেই এগুচ্ছিল বাংলাদেশ। মনে হচ্ছিল, নির্বিঘ্নেই দ্বিতীয় সেশনটা কাটিয়ে দেবেন তারা। কিন্তু সেশন শেষ হওয়ার আগে দুর্ভাগ্যজনক রানআউট হয়ে গেছেন মুশফিক। ফলে আবার জেগেছে পরাজয়ের শঙ্কা।
মিরপুর টেস্টের পঞ্চম দিনের দ্বিতীয় সেশন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৬ উইকেটে ১৪৭ রান। পরাজয় এড়াতে বাংলাদেশকে খেলতে হবে আরও কমপক্ষে ৩৫ ওভার। ফলোঅনে পড়ে ব্যাটিং করতে নেমে পাকিস্তানের চেয়ে এখনও ৬৬ রানে পিছিয়ে স্বাগতিকরা।
সাকিবের সঙ্গে ৪৯ রানের জুটি গড়ে মুশফিক আউট হয়েছেন ব্যক্তিগত ৪৮ রানে। তৃতীয় সেশনে সাকিব খেলতে নামবেন ব্যক্তিগত ২৫ রান নিয়ে। তাকে সঙ্গ দিতে নামবেন মেহেদি হাসান মিরাজ। এরপর আছেন শুধুই তিন বোলার তাইজুল ইসলাম, এবাদত হোসেন ও খালেদ আহমেদ।
ফলোঅনে পড়ে ব্যাটিংয়ে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসের প্রথম বলেই বাউন্ডারি হাঁকান মাহমুদুল জয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটিই তার প্রথম রান। কিন্তু বেশিদূর যেতে পারেননি। ব্যক্তিগত ছয় রানে হাসান আলির বলে সরাসরি বোল্ড হয়ে যান তিনি। পরের ওভারে শাহিন আফ্রিদির বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে ধরা পড়েন ২ রান করা সাদমান।
অধিনায়ক মুমিনুল হকের আউটটি নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। হাসান আলির ভেতরে ঢোকা বলে লেগ বিফোর হন মুমিনুল। রিপ্লে’তে দেখা যায় বলের সঙ্গে ব্যাট ও প্যাডের আঘাতের সময় প্রায় কাছাকাছি। আবার বল ঠিক ব্যাটেই লেগেছে কি না তা স্পষ্ট বোঝাও যায়নি।
কিন্তু মাঠের আম্পায়ার আউট দেওয়ায় এবং শতভাগ নিশ্চিত প্রমাণ না থাকায় সেই সিদ্ধান্ত বদলাতে পারেননি টিভি আম্পায়ার। ফলে ৭ রানে ফিরতে হয় মুমিনুলকে। এরপর শাহিন আফ্রিদির বাউন্সারে গালিতে ফাওয়াদ আলমের হাতে ধরা পড়েন ৬ রান করা শান্ত।
এরপর প্রথম সেশনের বাকি সময়টা কাটিয়ে দেন মুশফিক ও লিটন। তারা দুজন মিলে ১৪.৫ ওভারে যোগ করেন ৪৭ রান। যেখানে বেশি সচল ছিল লিটনের ব্যাট। মধ্যাহ্ন বিরতি পর্যন্ত ৪৬ বলে ২৭ রান করেন তিনি। অন্যদিকে ৫২ বলে ১৬ রানে অপরাজিত থাকেন মুশফিক।
বিরতি থেকে ফিরে দ্বিতীয় সেশনের শুরুটাও ভালো ছিল বাংলাদেশের। সাজিদ খানের করা ওভারের প্রথম বলেই বাউন্ডারি হাঁকান লিটন। পরের ওভারে শাহিন আফ্রিদির বলেও পেয়ে যান সৌভাগ্যজনক চার। দেখেশুনে খেলে নিজের ইনিংস বড় করছিলেন লিটন। মনে হচ্ছিল আরেকটি ফিফটি পেয়ে যাবেন আজ।
কিন্তু সাজিদের করা ইনিংসের ৩৪তম ওভারের প্রথম বলে পুল করতে গিয়ে সোজা স্কয়ার লেগের ফিল্ডার ফাওয়াদ আলমের হাতে ধরা পড়েন। ফলে সমাপ্তি ঘটে ৮১ বলে সাত চারের খেলা ৪৫ রানের ইনিংসের। বাংলাদেশ পঞ্চম উইকেট হারিয়ে ফেলে ৯৮ রানে।
প্রথম ইনিংসের মতো এবারও সাত নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামেন সাকিব আল হাসান। শুরুতে উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিতে খানিক সময় নেন তিনি। তবে অপরপ্রান্তে দারুণ খেলতে থাকেন মুশফিক। বিশেষ করে পাকিস্তানি বোলারদের একদমই চেপে বসতে দেননি তিনি।
এরই ফাঁকে ৩৯তম ওভারে হাসান আলির বলে পরপর তিনটি দৃষ্টিনন্দন কভার ড্রাইভে হ্যাটট্রিক বাউন্ডারি হাঁকান সাকিব। যা বাংলাদেশ ডাগআউটে এনে দেয় স্বস্তির বাতাস। মুশফিকের সঙ্গে মিলে ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে উইকেটে থিতু হয়ে যান সাকিব। মনে হচ্ছিল, সহজেই সেশনটি কাটিয়ে দেবেন তারা দুজন।
ঠিক তখনই ঘটে দুর্ঘটনা। চা পানের বিরতির ঠিক আগের ওভারে রানআউট হয়ে যান মুশফিক। নৌমান আলির বলে মিড উইকেটে ঠেলে দিয়েই দ্রুত রানের জন্য ছোটেন সাকিব, সাড়া দেন মুশফিকও। তবে আব্দুল্লাহ শফিকের থ্রো ছিল দুর্দান্ত। যা গ্লাভসে নিয়েই স্ট্যাম্প ভেঙে দেন রিজওয়ান।
বিপদ বুঝতে পেরে যথাসময়ে ডাইভ দিয়েছিলেন মুশফিকও। কিন্তু পপিং ক্রিজে ঢোকার আগেই হ্যান্ডেলের কারণে হাওয়ায় উঠে যায় ব্যাট। ফলে স্ট্যাম্প ভাঙার আগে পপিং ক্রিজে ঢুকলেও ব্যাট হাওয়ায় থাকায় রানআউট হয়ে যান ১৩৬ বল খেলে ৪৮ রান করা মুশফিক।
নদী বন্দর / সিএফ