ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা ও পরিচালক মীর সাব্বির। তিনি প্রথমবারের মতো সিনেমা নির্মাণ করেছেন। সরকারি অনুদান পাওয়া তার সিনেমাটির নাম ‘রাত জাগা ফুল’। আগামীকাল ৩১ ডিসেম্বর সারা দেশে একযোগে মুক্তি পাবে এটি।
মুক্তির আগেই দারুণ সাড়া ফেলেছে ‘রাত জাগা ফুল’। সেন্সরে প্রশংসা পেয়ে অনুমতি পাওয়া ভিন্ন ভাবনার গল্পে নির্মিত সিনেমাটি এরইমধ্যে টিজার, ট্রেলার ও গান দিয়ে দর্শকের নজর কেড়েছে। এর পোস্টারগুলোও রয়েছে আলোচনায়।
এবার সেই পোস্টারকেই সবার সামনে তুলে ধরতে অভিনব এক আইডিয়া বেছে নিয়েছেন মীর সাব্বির। বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) সিনেমার শিল্পী-কুশলীদের নিয়ে মীর সাব্বির আড্ডায় বসেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। সেখানে ফুলে ফুলে সাজানো অতিথি বসার মঞ্চ তৈরি থাকলেও তিনি ও তার দল বসেননি সেখানে। সাংবাদিকদের মাঝেই দর্শকসারির চেয়ার বসলেন তারা।
উপস্থাপক ফারহানা নিশো উপস্থাপনার শুরুতে বলেন, ‘আজ আমাদের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি রাত জাগা ফুলের সিনেমার পোস্টার। আর অতিথি হিসাবে থাকবেন আপনারা যারা এই জায়গায় এসেছেন তারা।’ নিশোর কণ্ঠের এই ঘোষণা বেশ চমকে দেয় সবাইকে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে অভিনেতা ও পরিচালক মীর সাব্বির বললেন, ‘আমি চেয়েছি আড্ডা দিতে, সংবাদ সম্মেলন নয়। সংবাদ সম্মেলনে একটা দূরত্ব থাকে। অথচ আমি তো মনে করি, আমরা একই আত্মা। আজ যারা এখানে এসেছেন বা আসতে পারেননি, প্রত্যেকেই আমার সিনেমার সদস্য। তাই আমি মনে করি না যে আমাদের সামনে বসতে হবে। আমরা বসবো পাশাপাশি।’
মীর সাব্বির চারপাশে নিয়ে বসলেন তার সিনেমার ভিডিও সম্পাদক, রূপসজ্জাকর, লাইন প্রডিউসার থেকে শুরু করে সিনেমার সঙ্গে যুক্ত প্রায় সব শিল্পীদের। ফারহানা নিশোর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুটা হলো ভিডিও সম্পাদক আশরাফুল আলমের অনুভূতি প্রকাশের মধ্য দিয়ে। এরপর একে একে কথা বলেন রূপসজ্জাকর জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া, লাইন প্রডিউসার মিঠু, স্বল্প উপস্থিতির চরিত্রে অভিনয় করা নরেশ ভূঁইয়া, আহসানুল হক মিনুসহ অনেকেই।
অভিনেতা নরেশ ভূঁইয়া বলেন, ‘সাব্বিরকে দেখে মনে হতো না ও জীবনে সিনেমা বানাতে পারবে! এটা অনেক আগের কথা বলছি। তো এরপর একদিন আমি নিজেই স্বপ্ন দেখেছি, সাব্বির একটা সিনেমা বানাচ্ছে। পরদিন ওকে কথাটি বললাম। অনুরোধ করলাম, সাব্বির তুই সিনেমা বানা। পারবি। সেই সাব্বির ঠিকই অসামান্য একটি সিনেমা বানালো। এবং সেখানে আমি ছোট্ট একটি চরিত্রে অভিনয়ও করেছি। আমি ওর কাজে মুগ্ধ ও গর্বিত।’
আরেক অভিনেতা আহসানুল হক মিনু বললেন, ‘এই সিনেমায় আমার চরিত্রটিও বেশ ছোট। জীবনে অনেক ছবিতে কাজ করেছি, সব নাম মনেও নাই। ৩৬টি হবে। তারপর সাব্বিরের ডাক পাই। এটুকু বলবো, এই ছবিতে বাংলাদেশের এমন কিছু নেই যা সাব্বির তুলে আনেনি।’
সিনেমার আরেকটি ছোট্ট চরিত্রে অভিনয় করা রাশেদ মামুন অপুর অভিব্যক্তি, ‘সাব্বির ভাই টিভি মিডিয়ায় এত এত কাজ করেছেন, জীবনে একটি কাজেও আমাকে নেননি। অবশেষে ডাক পেলাম তার সিনেমায়। চরিত্রটি ছোট হতে পারে, কিন্তু আমি একটা পাসিং শটকেও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখি সবসময়। এটুকু বলি, আমি অন্য এক মীর সাব্বিরকে দেখলাম এই সিনেমার ক্যামেরার পেছনে ও সামনে। যেটা আমি দূর থেকে কখনও ধারণা করিনি।’
ছবিটির প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয় করা জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী বলেন, ‘মিশন এক্সট্রিম ছিল আমার জন্য উচ্ছ্বাসের একটা বিষয়। ছবিটির ধরন ও আমার প্রথম ছবি হিসেবে। সেই পরিস্থিতি সামলে এখন আমি রিফ্রেশমেন্ট করছি ‘রাত জাগা ফুল’ দিয়ে। আমার বিশ্বাস, এই ছবি যিনি দেখবেন তিনিও আমার মতোই একটা রিফ্রেশমেন্ট মেজাজে চলে যাবেন। তৃপ্তি পাবেন। মনের ও চোখের তৃপ্তি।’
সবশেষে কথা বলেন ছবির কারিগর মীর সাব্বির। তিনি বলেন, ‘বেশি কথা বলে তো লাভ নাই, কাজে প্রমাণ দিতে হবে। এটুকু বলি, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের শেষ উপহার হয়ে সবার সামনে আসছে আমাদের ছবিটি। এটি দিয়ে যেমন শেষ হচ্ছে বছর, তেমনই শুরুটাও হচ্ছে নতুন বছরের। বাকিটা দর্শকদের ওপর ছেড়ে দিলাম।’
মীর সাব্বির কথা শেষ হতে ভিডিও প্রজেক্টর ভিডিও বার্তাদের বাংলাদেশে অভিনেতা, অভিনেত্রী, পরিচালকরা সবাই পরিচালক হিসাবে মীর সাব্বিরকে অভিনন্দন জানান ও দর্শককে হলে এসে সিনেমা দেখার আহব্বান জানান।
সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত ‘রাত জাগা ফুল’ সিনেমার সহ-প্রযোজক হিসেবে আছেন মীর সাব্বির নিজেই। তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ফুলঝুড়ি মিডিয়া লিমিটেডের ব্যানারেই ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে।
এ সিনেমায় একঝাঁক তারকার ভিড়ে দেখা যাবে দিলারা জামান, আবুল হায়াত, শর্মিলী আহমেদ, ফজলুর রহমান বাবু, ডা. এজাজুল ইসলাম, নাজনীন চুমকী, জয়রাজ, আবু হুরায়রা তানভীরসহ আরও অনেককে।
নদী বন্দর / জিকে