ভোলায় ভরা মৌসুমেও মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে জেলেদের জালে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। নদীতে যে পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে তা দিয়ে সংসার চালানো দূরের কথা, ট্রলারের তেলের দামই উঠছে না বলছেন জেলেরা।
ভরা মৌসুমের আগে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে জাল, নৌকা ও ট্রলার মেরামত করেছেন জেলেরা। এখন কিস্তি পরিশোধ করতে না পেরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অনেকে।
সরেজমিন জানা গেছে, কাঙ্ক্ষিত ইলিশের আশায় ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত জাল নিয়ে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদী চষে বেড়াচ্ছেন জেলেরা। জালে ধরা পড়ছে না আশানুরূপ ইলিশ। পর্যাপ্ত ইলিশ না পাওয়া ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে চরম হতাশায় দিন কাটছে জেলেদের।
ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের জেলে আল আমিন মাঝি বলেন, ‘এখন ইলিশের ভরা মৌসুম চলছে। আমরা জেলেরা ইলিশ ধরার জন্য প্রতিদিন দলবেঁধে নদীতে যাই। কিন্তু নদীতে আশানুরূপ ইলিশ পাচ্ছি না। হতাশ হয়ে তারা তীরে ফিরছেন।’
শিবপুর ইউনিয়নের শান্তিরহাট গ্রামের মো. নুরউদ্দিন মাঝি বলেন, ‘ট্রলারের তেলের দাম আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে কিন্তু ইলিশের দাম বাড়েনি। নদীতে গিয়ে যে দু-চারটা ইলিশ পাই তা ঘাটে গিয়ে বিক্রি করলে আগের দামই দেয়। এতে আমরা জেলেরা খুই সমস্যার মধ্যে আছি।’
ধনিয়া ইউনিয়নের তুলাতুলি গ্রামের জেলে মো. নুরে আলম মাঝি বলেন, ‘গতরাতে আমরা চারজন জেলে ১০ লিটার তেল নিয়ে নদীতে গেছি। সারারাত ও দুপুর পর্যন্ত নদীতে জাল বেয়েছি। মাত্র চারটি ছোট সাইজের ইলিশ পেয়েছি। ঘাটে গিয়ে বিক্রি করে ৪০০ টাকা হাতে এসেছে। এখন এই ৪০০ টাকায় দোকানের তেলের দাম দেবো নাকি ঘরের জন্য চাল, ডাল নিয়ে যাবো? আমরা জেলেরা এবার খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছি।’
শিবপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের জেলে আরিফ মাঝি বলেন, ‘ভরা মৌসুমের কদিন আগে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে নতুন জাল কিনেছিলাম। ট্রলার ও ট্রলারের মেশিনও মেরামত করেছি। আশা করেছিলেন ভরা মৌসুমের শুরুতে নদীতে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ শিকার করতে পারবো। কিন্তু নদীতে গিয়ে আশানুরূপ ইলিশ না পেয়ে এনজিওর কিস্তি চালাতে পারছি না।’
নদীতে জাল ফেলে পর্যাপ্ত ইলিশ না পাওয়ায় মৎস্য ঘাটগুলো জমে ওঠেনি বলে জানান ধনিয়া তুলাতুলি মৎস্য ঘাটের ব্যবসায়ী মো. মঞ্জু ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘আমরা ঢাকা, বরিশালসহ বিভিন্ন পাইকারি আড়ত থেকে দাদন (সুদের ওপর টাকা নেওয়া) নিয়ে জেলেদের দিয়েছি। অথচ নদীতে পর্যাপ্ত ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা আড়তদারদের চাপে আছি।’
এ বিষয়ে ভোলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্যাহ বলেন, সাগরে বর্তমানে প্রচুর ইলিশ রয়েছে। কিন্তু বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় নদীর পানির গভীরতা কমে গেছে। ইলিশ মোহনায় দিয়ে নদীতে প্রবেশ করতে পারছে না। তবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হলে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশের পরিমাণ বাড়বে। তখন জেলেদের কষ্ট দূর হয়ে যাবে।
ভোলার সাত উপজেলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন প্রায় আড়াই লাখ জেলে। তবে সরকারিভাবে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা রয়েছে প্রায় দেড় লাখ।
নদী বন্দর/এসএস