1. badsha.dru@gmail.com : admi2017 :
  2. nadibandar2020@gmail.com : Nadi Bandar : Nadi Bandar
তাপপ্রবাহ-বন্যা বিশ্বের জন্য আগাম সংকেত - Nadibandar.com
বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৩৫ অপরাহ্ন
নদী বন্দর প্রতিনিধি:
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ৭৬ বার পঠিত

সম্প্রতি বন্যায় বিপর্যস্ত পুরো পাকিস্তান। আক্ষরিক অর্থে পাকিস্তানের এক-তৃতীয়াংশ পানির নিচে তলিয়ে যায়। অতীতের প্রতিটি সীমা, প্রতিটি রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে এবারের বন্যা। এর আগে কখনো এমন পরিস্থিতি দেখেননি পাকিস্তানের মানুষ। এ পর্যন্ত দেশটিতে বন্যায় মৃত্যু ১৩শ ছাড়িয়েছে। এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভারি বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, ফসলি জমি। শুধু তাই নয় বিশ্বের বেশিরভাগ অংশের মানুষ এ বছর চরম আবহাওয়া সহ্য করছে।

বছরের প্রথম দিকে, অস্ট্রেলিয়ায় নজিরবিহীন বৃষ্টি হয়েছে এবং গরমেও হাসফাঁস অবস্থা হয় সেখানকার মানুষের। গত মে মাসে রেকর্ড বৃষ্টিপাতের ফলে ব্রাজিলে বন্যা ও ভূমিধসের ঘটনা ঘটে। এতে একশ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারায়। গ্রীষ্মের মধ্যে, পূর্ব আফ্রিকা চতুর্থ বছরের মতো খরার কবলে পড়ে। এরই মধ্যে, ইউরোপজুড়ে শহরগুলোতে তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙে গেছে, এবং পুরো মহাদেশে নদীগুলো ৫০০ বছরের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি শুকিয়ে গেছে। চীনের বেশিরভাগ অংশজুড়ে ৭০ দিনের মতো তাপমাত্রা নিয়মিতভাবে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ছিল। দেশটির বৃহত্তম দুটি লেকের পানি সর্বনিম্ন স্তরে নেমেছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য কোনো একক আবহাওয়াজনিত ঘটনাকে দায়ী করা একটি জটিল বিষয়। জটিলতার একটি অংশ যদি বলা যায় তাহলে পৃথিবীর জলবায়ুর জটিল প্রক্রিয়ার কারণে ঘটে, যেখানে ক্রমাগত উষ্ণতা বৃদ্ধি একটি অশুভ লক্ষণ, যার ওপর অনেক বিষয় নির্ভর করে। লন্ডন ইম্পেরিয়াল কলেজের জলবায়ু বিজ্ঞানী ক্যারোলিন ওয়েনরাইট বলেছেন, ‘প্রতিটি ঘটনাই জলবায়ু পরিবর্তন এবং জলবায়ু পরিবর্তনশীলতার সংমিশ্রণ’।

তাপপ্রবাহ-বন্যা বিশ্বের জন্য আগাম সংকেত

জলবায়ু পরিবর্তনশীলতার সবচেয়ে শক্তিশালী উৎসগুলোর মধ্যে একটি হলো এল নিনো-সাউদার্ন অসিলেশন (এনসো)। প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব উপকূলে ঘটে যাওয়া এনসো (ইএনএসও) চক্রের দুটি বিপরীত অবস্থা হলো এল নিনো ও লা নিনা। প্রশান্ত মহাসাগরের নিরক্ষীয় পূর্ব উপকূলে আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা ও ১২০ ডিগ্রি পশ্চিম দ্রাঘিমাংশের মধ্যবর্তী অঞ্চলে সমুদ্র ও বায়ুমন্ডলীয় তাপমাত্রার মধ্যে অস্থিরতাকে বোঝাতে এনসো শব্দটি ব্যবহার করা হয়। লা নিনা দ্বারা এনসো অন্তর্ভুক্ত শীতল অবস্থা এবং এল নিনো দ্বারা উষ্ণ অবস্থা বোঝানো হয়। স্প্যানীশ শব্দ এল নিনো যার অর্থ ছোট্ট বালক এবং লা নিনা যার অর্থ ছোট্ট বালিকা। এল নিনো উত্তর থেকে দক্ষিণে আর লা নিনা দক্ষিণ থেকে উত্তরে প্রবাহিত হয়।

পর্যায়বৃত্ত এই পরিবর্তনের কোন নির্দিষ্ট সময় নেই, তবে প্রতি ৩ থেকে ৮ বছরের মাঝে দেখা যায়। যা ক্রান্তীয় অঞ্চলের চারপাশের জলবায়ু (বাইরে কিছু অঞ্চলে) দুটি চরম অবস্থার মধ্যে বিরাজ করে। এটি এক বছরে, প্রশান্ত মহাসাগরজুড়ে পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত বাতাস একই দিকে উষ্ণ জলের কাছাকাছি ঠেলে দেয়। যখন বাতাস স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি দুর্বলভাবে প্রবাহিত হয়, তখন উষ্ণ জল মধ্য ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে থেকে যায়, যার ফলে বিশ্বের সেই অংশে বেশি বৃষ্টিপাত হয়।

এল নিনো বন্যা, খরা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। উন্নয়নশীল যেসব দেশ কৃষিকাজ এবং মাছ ধরার উপর নির্ভরশীল, তারাই এল নিনো দ্বারা অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। যখন বাতাস বিশেষ করে প্রবলভাবে প্রবাহিত হয়, তখন পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উষ্ণ জল জমে থাকে, যার ফলে সেখানে বেশি বৃষ্টিপাত হয় এবং দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলের গভীরতা থেকে আরও ঠান্ডা জল উঠে আসে। এটি লা নিনা নামে পরিচিত । এমন একটি অবস্থা যা গত দুই বছর ধরে বিশ্বজুড়ে বিরাজ করছে।

লা নিনার প্রভাব পড়ে এমন অঞ্চল যার মধ্যে রয়েছে চিলি, মধ্যপ্রাচ্য এবং পূর্ব আফ্রিকার খরা, পশ্চিম আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ায় বৃষ্টিপাতের উচ্চ হার। যদিও বৈশ্বিক জলবায়ুর আন্তঃসম্পর্কের অর্থ হলো এসব প্রভাব অনিবার্যভাবে আরও দূরে অনুভূত হবে, তবে ক্রান্তীয় অঞ্চল থেকে দূরত্বের সঙ্গে কার্যকারণ শৃঙ্খলের শক্তি ম্লান হয়ে যায়। যদিও, গড় বৈশ্বিক তাপমাত্রাকে প্রভাবিত করার জন্য এগুলোই যথেষ্ট। যেহেতু এসব অবস্থা সমুদ্রের তাপকে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করা থেকে বিরত রাখে।

পাকিস্তানে যা ঘটছে তা একাধিক কারণের বিপর্যয়মূলক সংমিশ্রণ হতে পারে। বাতাসে বেশি আর্দ্রতা (অতিরিক্ত ৭ শতাংশ), যা আরও বেশি বৃষ্টিপাত ঘটায় এবং বন্যার ঝুঁকি বাড়ায়। এটি লা নিনা-প্ররোচিত বৃষ্টিপাতের জন্য প্রয়োজনীয় শর্তগুলোকে অস্বাভাবিক হারে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে।

তাপপ্রবাহ-বন্যা বিশ্বের জন্য আগাম সংকেত

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিষয়টি আরও পরোক্ষভাবে সনাক্ত করা যেতে পারে, কারণ এ বছরের শুরুতে হিমালয়ে উচ্চ তাপমাত্রার ফলে হিমবাহের গলে যাওয়াকে ত্বরান্বিত করছে যাতে নদীগুলোর প্রবাহ বেড়ে যেতে পারে। এটাও সম্ভব যে বায়ু দূষণ, যা বায়ু সঞ্চালনের ধরণকে জটিল করে তোলে, এরও ভূমিকা থাকতে পারে।

ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন প্রজেক্ট, জলবায়ু মডেল তৈরি করার একটি বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক, পাকিস্তানে বন্যার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন কারণ জানতে গত সপ্তাহে কাজ শুরু করেছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তাদের কাছ থেকে একটি মূল্যায়ন আশা করা যায়।

অন্য প্রসঙ্গ যদি ধরা হয় তাহলে সেটি হচ্ছে লা নিনা। জলবায়ু মডেলগুলোর মধ্যে লা নিনা দ্বারা প্রভাবিত অঞ্চলগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রসারিত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, অ্যাঙ্গোলা, যা আফ্রিকার ঐতিহ্যবাহী লা নিনা প্রভাবে বন্যা অঞ্চলের সীমানার বাইরে অবস্থিত, এ বছর লা নিনার কারণে উচ্চ বৃষ্টিপাতের সম্মুখীন হয়েছে। এটি একটি ইঙ্গিত হতে পারে, ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের উইলফ্রান মাউফুমা ওকিয়া বলেছেন, সীমানা এরই মধ্যে প্রসারিত হতে শুরু করেছে।

অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যের এক্সেটার ইউনিভার্সিটির ম্যাট কলিন্স বলেছেন, এ বছর তিন ধরনের প্রভাব কেবল ব্যাখ্যাতীত নয়, তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যা ঘটবে তা জলবায়ু মডেলের পরামর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

তাপপ্রবাহ-বন্যা বিশ্বের জন্য আগাম সংকেত

লা নিনার প্রভাবে এবছর আরও উষ্ণতা বাড়ছে। এ বছর মার্চে, অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের জন্য কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছে যে প্রবাল প্রাচীর একটি গণ ব্লিচিং ইভেন্টের সম্মুখীন হয়েছে যেখানে প্রবালগুলো ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার প্রতিক্রিয়া হিসাবে তাদের সিম্বিওটিক শৈবালকে বের করে দেয়। এটি লা নিনা বছরে সংঘটিত হওয়া প্রথম ঘটনা। এসক ঘটনা আসন্ন দুর্যোগ সম্পর্কে দেশগুলোকে সতর্ক বার্তা দিচ্ছে বৈকি। বৈশ্বিক উষ্ণতা অনুমান বা ধারণাকেও বিভান্ত বরছে বলা চলে যেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া আরও জটিল হয়ে গেছে।

এই বছরের লা নিনা উচ্চতর তাপমাত্রা, বর্ধিত বন্যা এবং তীব্র খরার প্রতিনিধি হতে পারে। উদ্বেগের বিষয় হলো এটি এমন একটি বিশ্বে প্রভাব ফেলবে যেখানে দুর্যোগের দ্বারা সম্পদ ইতিমধ্যেই নষ্ট হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্টের জলবায়ু কেন্দ্রের পরিচালক মার্টেন ভ্যান অ্যালস্ট বলেছেন, ‘আমরা এরই মধ্যে এটি খাপ খাইয়ে নিতে পারছি না এবং পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে’।

দায়িত্বের প্রশ্নে সবাই সমান। নির্দিষ্ট করা বিপর্যয়গুলো এনসো দ্বারা ঘটার সম্ভাবনা বেশি ছিল কি না এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিঃসন্দেহে সেই ঘটনার তীব্রতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করছে। ঐতিহাসিকভাবে দূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী ধনী দেশগুলো। যে সব দেশ এখন পর্যন্ত কার্বন নির্গমনের সবচেয়ে খারাপ পরিণতি থেকে রক্ষা পেয়েছে। এ বছরের চরম আবহাওয়াজনিত ঘটনাগুলো মিশরে আসন্ন কপ২৭ এর জন্য একটি বিশেষ নাটকীয় পটভূমি তৈরি করেছে। এসব দুর্যোগের জন্য দায়ভার কে বহন করবে, কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং এর ফলে বিল কে বহন করবে তা নিয়ে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত আলোচনার দরকার।

সূত্র: দ্যা ইকোনমিস্ট

নদী বন্দর/এসএইচ

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 Nadibandar.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com